ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতা কাপ ফুটবল ফাইনাল আজ

শেখ রাসেলের দ্বিতীয় নাকি বসুন্ধরার প্রথম?

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

শেখ রাসেলের দ্বিতীয় নাকি বসুন্ধরার প্রথম?

রুমেল খান ॥ একদিকে ২৩ বছরের পুরনো ক্লাব। অন্যদিকে মাত্র পাঁচ বছর বয়সী ‘প্রায়’ নতুন ক্লাব। পুরনো ক্লাবটির অর্জন তিনটি শিরোপা। নতুন ক্লাবটির প্রাপ্তি মাত্র একটি ট্রফি (চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ)। পুরনো ক্লাবটির এই টুর্নামেন্টে একবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে, তাও সেটা পাঁচ বছর আগে। নতুন ক্লাবটি এই আসরে এই প্রথম ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে। ভনিতা না করে সব খোলাসা করা যাক। পুরনো ক্লাবটির নাম শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র লিমিটেড। আর নবাগত ক্লাবটি হচ্ছে বসুন্ধরা কিংস। ক্লাব দুটি আজ বুধবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকেল সাড়ে ৪টায় পরস্পর মুখোমুখি হবে স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের দশম আসরের উপভোগ্য-জমজমাট ফাইনালে। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এবং বাংলাদেশ বেতার। গ্যালারির টিকেটের মূল্য ৩০ টাকা। মজার ব্যাপার- ফাইনালে যে দু’দল খেলবে, তারা হচ্ছে একই গ্রুপের (বসুন্ধরা গ্রুপ) দল! কাজেই এই ফাইনালকে ‘অল বসুন্ধরা ফাইনাল’ হিসেবেও আখ্যায়িত করলেও ভুল হবে না। শিরোপা যেই জিতুক, সেটা তো যাবে এক ঘরেই! তবে দুই দলের কোচ এবং ফুটবলাররাই আশ্বস্ত করেছেন নিরপেক্ষভাবে তারা নিজেদের সেরাটা উপহার দিয়েই শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নামবে আজ। ‘বেঙ্গল ব্লুজ’ খ্যাত শেখ রাসেলের জন্য আজকের ফাইনালটা দুটি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। তারা এই আসরের ফাইনাল খেলছে পাঁচ বছর পর। ২০১২-১৩ মৌসুমে প্রথম ও শেষবারের মতো ফাইনাল খেলেছিল। সেবার তারা ৩-২ গোলে শেখ জামাল ধানম-িকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আজ তারা জেতার জন্য খেলবে তাদের ফুটবলার সোহেল রানার জন্য। যিনি কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন, সেই দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন নিজের স্ত্রী ও সন্তানকে। শেখ রাসেলের ক্লাবটির জন্ম ১৯৯৫ সালে। ২৩ বছরের ইতিহাসে তাদের অর্জন তিনটি শিরোপা জয় এবং সবগুলোই ২০১২-১৩ মৌসুমে। ১৯৮২ সালে মোহামেডানের পর রাসেল দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে ওই ঐতিহাসিক ‘ট্রেবল’ জেতে। শিরোপাগুলো হলো : প্রিমিয়ার লীগ, ফেডারেশন কাপ এবং স্বাধীনতা কাপ। এই আসরে রাসেলই একমাত্র দল যারা এখন পর্যন্ত কোন গোল হজম করেনি। আরও মজার ব্যাপারÑ এবারের আসরের ফাইনালে খেলছে একই গ্রুপের দুই দল। রাসেল-বসুন্ধরা ছিল ‘ডেথ’ গ্রুপে (ডি)। বসুন্ধরা কিংস এবং শেখ জামাল ধানম-ি... দুটি দলের সঙ্গেই গোলশূন্য ড্র করে রাসেল। পাশাপাশি ‘ডি’ গ্রুপ থেকে কোন জয় না পেয়ে ও কোন গোল না করেও গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে তারা নাম লেখায় কোয়ার্টারে। সেখানে তারা গত আসরের রানার্সআপ চট্টগ্রাম আবাহনীকে হারায় ২-০ গোলে। সেমিতে ব্রাদার্সকে ২-০ গোলে হারিয়ে উন্নীত হয় ফাইনালে। ‘দ্য কিংস’ খ্যাত বসুন্ধরা এবারই প্রথম স্বাধীনতা কাপ খেলছে। তারাও ছিল ডেথ গ্রুপে। সেখানে তারা শেখ জামাল ধানম-িকে ২-০ গোলে হারায় এং গোলশূন্য ড্র করে শেখ রাসেলের সঙ্গে। গ্রুপসেরা হয়েই তারা নাম লেখায় কোয়ার্টারে। সেখানে তারা টাইব্রেকারে ৩-২ (২-২) গোলে হারায় রহমতগঞ্জকে। সেমিতে ঢাকা আবাহনীকে টাইব্রেকারে ৭-৬ (১-১) গোলে হারিয়ে চলে যায় স্বপ্নের ফাইনালে। গ্রুপপর্বের দেখায় বসুন্ধরার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছিল রাসেল। তবে এটা ফাইনাল, এখানে ম্যাচ ড্র করেও পার পাওয়া যাবে না। যেতে হবে টাইব্রেকারে। শেখ রাসেলের কোচ সাইফুল বারী টিটু তাই চাইছেন আগে গোল আদায় করে নিয়ে শিরোপাটা নিজের করে নিতে। সম্প্রতি দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়া শেখ রাসেলের মিডফিল্ডার সোহেল রানা শোক কাটিয়ে ফিরেছেন রাসেলের স্কোয়াডে। তবে তাকে হয়তো আজ মাঠে দেখা যাবে না। কিন্তু দলের পাশে সোহেলই হবেন শেখ রাসেলের জন্য বড় প্রেরণা। মঙ্গলবার ফাইনাল উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বাফুফে ভবনে। সেখানে উপস্থিত রাসেলের দলীয় অধিনায়ক-গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা জানান, ‘ম্যাচটা জিততে পারলে আমরা ট্রফিটা সোহেল রানা ও তার প্রয়াত স্ত্রী-সন্তানকে উৎসর্গ করব। সেটা ক্লাবের পক্ষ থেকেই আগে ঠিক করা আছে।’ ম্যাচ জয়ের ব্যাপারে রানার ভাষ্য, ‘ফাইনাল ম্যাচে দু’দলেরই সমান সুযোগ আছে। প্রথমে যারা গোল করতে পারবে তাদেরই ট্রফি জেতার সম্ভাবনা বেশি। গোলরক্ষক হিসেবে আমি সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখব।’ এই আসরে গ্রুপপর্বে দুটি গোলশূন্য ড্র করে কোয়ার্টারে উঠেছিল রাসেল। দলের গোল স্কোরিংয়ে খরা প্রসঙ্গে দলের কোচ সাইফুল বারী টিটু জানান, স্কোরিংয়ের সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠেছেন তারা। তবে যদি নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ম্যাচের ফলাফল অমীমাংসিত থাকে তবে বিপদের মুখে পড়ার শঙ্কা আছে রাসেলেরই। কারণ নকআউট স্টেজের দুই ম্যাচই টাইব্রেকারে জিতেছে কিংসরা। মৌসুমের শুরুতে ঢাকা আবাহনীর কাছে ফাইনালে হেরে ফেডারেশন কাপ জিততে পারেনি বসুন্ধরা। এবার আরেকটি শিরোপার দ্বারপ্রান্তে তারা। দলের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন জানালেন কিছুতেই সেই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায় না তার দল। বসুন্ধরার অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার ইমন মাহমুদ বাবু বলেন, ‘ফাইনালের জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত আছি। আমরা চাই আপনাদের মন জয় করার মতো একটা ম্যাচ উপহার দিতে। ট্রেনিং ম্যাচসহ সবমিলে আমরা ৪ বার মুখোমুখি হয়েছি রাসেলের। তাই উভয় দলই নিজেদের এবং প্রতিপক্ষ সম্পর্কে ভালভাবেই জানে।’ বসুন্ধরার অন্যতম ফুটবলার ও রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকান ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল কলিন্ড্রেস যে দলের তুরুপের তাস সেটা ভালমতোই জানে রাসেল। রাসেল কোচ টিটুর মতেÑ একটু জায়গা পেলেই কলিন্ড্রেস হয়ে উঠতে পারে ভয়ঙ্কর। সেই সঙ্গে আছেন মার্কোস। প্লেমেকার হিসেবেও যার আছে সুখ্যাতি। তবে ব্রুজোন অবশ্য দলের কাউকেই আলাদা করে দেখতে নারাজ। বা কারও ওপর নির্ভরশীলও হতে চান না। তার কথায় দলের প্রতিটি ফুটবলারই তার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। আজ ফাইনাল জিতে পাঁচ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারবে কী রাসেল? নাকি তাদের হারিয়ে প্রথম ঐতিহাসিক শিরোপার স্বাদ পাবে বসুন্ধরা এবং বসুন্ধরার কোচ হিসেবে প্রথম শিরোপা জিতবেন ব্রুজোন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
×