ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টাইগারদের সাফল্যময় আরেকটি বছর

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

টাইগারদের সাফল্যময় আরেকটি বছর

মিথুন আশরাফ ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি২০ সিরিজ শেষ হতেই এ বছরে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খেলার সমাপ্তি ঘটেছে। শেষ সিরিজটি বাংলাদেশ হারলেও সাফল্যময় আরেকটি বছরই কাটিয়েছে দল। তিন ফরমেট মিলিয়ে এ বছর মোট ২১টি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। এ বছর নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৪৪ ম্যাচও খেলেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এ বছর সবচেয়ে বেশি সাফল্য মিলেছে। ২০ ম্যাচের ১৩টি জিতেছে। টেস্ট ম্যাচ ৮টি খেলে জিতেছে তিনটি। টি২০তে ১৬ ম্যাচ খেলে জিতেছে পাঁচটি। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ১১২টি টেস্ট খেলেছে। জিতেছে ১৩টি টেস্টে। এরমধ্যে ২০১৮ সালেই ৩টি জয় মিলেছে। হার হয়েছে ৪টি টেস্ট। একটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। দুর্দান্ত সাফল্য মিলেছে। ওয়ানডেতে মোট ৩৫৫টি ম্যাচ খেলা হয়েছে। ১১৮টিতে জয় মিলেছে। ২০১৮ সালে ২০টি ম্যাচ খেলে জয় মিলেছে ১৩টিতে। হার হয়েছে ৭টি ম্যাচে। ওয়ানডেতেও অসাধারণ সাফল্য মিলেছে। টি২০তে মোট ৮৫ ম্যাচ খেলে ২৬টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। এ বছর ১৬ ম্যাচ খেলে ৫টিতে জয় মিলেছে। এখানেও সাফল্য কম নয়। টেস্টে এ বছর শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে খেলে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২টি ও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ১টি টেস্ট জিতে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি, জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ১টি ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১টি টেস্টে হারে। লঙ্কানদের বিপক্ষে একটি টেস্টে ড্রও করে বাংলাদেশ। আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১টি জিতে, আরেকটি হারে। ভারতের বিপক্ষে ২টি ম্যাচেই হারে। পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ম্যাচে জিতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২টিতে জিতে, ২টিতে হারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চারটিতে জিতে, ২টিতে হারে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৫টির সবকটিতে জিতে বাংলাদেশ। টি২০তে আফগানিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলে আফগানদের বিপক্ষে ৩টিতে হারে, ভারতের বিপক্ষেও তাই, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২টিতে হারে ও ২টিতে জিতে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩টি জিতে, ৩টি হারে বাংলাদেশ। দুর্দান্ত একটি বছরই কাটাল বাংলাদেশ। এবার সামনে একই ধারা বজায় রাখার পালা। নতুন বছর ২০১৯ সালটি বিশ্বকাপের বছর। এ বছরে বাংলাদেশের পথও কঠিন। সেই কঠিন পথ এখন ভালভাবে পাড়ি দেয়া গেলেই হয়। নতুন বছরটি শুরু হবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) দিয়ে। ক্রিকেটাররা বিপিএল দিয়েই নতুন বছর শুরু করবেন। এরপর ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে থাকবেন। নতুন বছরের প্রথম মাসে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) ব্যস্ত সময় কাটাবে বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা। তবে ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফর দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুর করবে বাংলাদেশ। সফরে কিউইদের বিপক্ষে টাইগাররা তিনটি করে ওয়ানডে ও টেস্ট ম্যাচ খেলবে। ২০ মার্চ শেষ হবে ওই সিরিজ। এরপর প্রায় এক মাসের বিরতি পাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। মে মাসে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। যেখানে তাদের সঙ্গে থাকবে উইন্ডিজ। সাত ম্যাচের ওয়ানডে এক কথায় বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবেই খেলবে মাশরাফি বাহিনী। এ সিরিজের পরই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে যোগ দেবে তারা। ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে হবে বিশ্বকাপ। ৩০ মে শুরু হবে বিশ্বকাপ। শেষ হবে ১৪ জুলাই। বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, স্বাগতিক ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে। বিশ্বকাপ শেষে আবারও দুই মাসের বিরতি পাবে বাংলাদেশ। এরপর দেশের মাটিতে অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি২০ সিরিজ খেলবে টাইগাররা। একই মাসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আছে এক টেস্ট ও দুই ম্যাচ টি২০ সিরিজ। নবেম্বরে আছে ভারত সফর। সেখানে বিরাট কোহলিদের বিপক্ষে দুটি টেস্ট ও তিনটি টি২০ খেলবে বাংলাদেশ। বছরের একেবারে শেষের দিকে আছে শ্রীলঙ্কা সফর। ডিসেম্বরের এই সিরিজে লঙ্কানদের মাটিতে তিন ম্যাচের একটি ওয়ানডে সিরিজ খেলবে দল। এই সিরিজ দিয়েই ২০১৯ সাল শেষ করবে টাইগাররা। যদি এরমধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অন্য বোর্ডগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কোন সিরিজ বা টুর্নামেন্ট আয়োজন করে, তাহলে খেলা বাড়বে। তা নাহলে বছরে এই খেলাগুলোই রয়েছে বাংলাদেশের। এ বছরের মতো ২০১৯ সালটাও ভাল কাটুক বাংলাদেশের। এটাই এখন সবার প্রত্যাশা। তবে নতুন বছরে বাংলাদেশের লক্ষ্যই আসলে বিশ্বকাপকে ঘিরে। এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অভিজ্ঞ দল নিয়েও যাবে। ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাই যেমন বলেছিলেন, ‘এবারের দলটা অনেক বেশি অভিজ্ঞ। আমরা যাদের তরুণ খেলোয়াড় বলছি তারা তিন থেকে চার বছর খেলছে। সৌম্য প্রায় চার বছর খেলছে, ইমরুল লম্বা সময় ধরে খেলেছে। লিটনও দুই-তিন বছর ধরে খেলেছে। এদের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘পেস বোলিংয়ে সাইফউদ্দিন ছাড়া বাকি সবাই বেশ অভিজ্ঞ। ২০১৫ সালে বেশিরভাগই নতুন খেলোয়াড় ছিল। তার মানে এই না যে, এবারের বিশ্বকাপে গিয়ে আমরা সেমিফাইনালে খেলে ফেলব। তবে অভিজ্ঞতাসহ সবকিছু মিলে আমরা ভাল অবস্থায় আছি।’ শুধু নতুন বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপই নয়, বাংলাদেশ চাচ্ছে ২০২০ সালের টি২০ বিশ্বকাপের জন্যও দল গোছানো শুরু করা। এ জন্য যে টি২০গুলো হবে এরমধ্যে সেগুলো থেকেই দল গুছিয়ে ফেলা হবে। বিপিএল থেকেই তার শুরুটা হবে। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুই যেমন বলেছেন, ‘২০২০ সালে টি২০বিশ্বকাপ আছে, আমাদের যেটা চিন্তা ভাবনা, বিপিএল থেকে পুরোপুরি দল গঠনের প্রক্রিয়াটা শুর হবে। আমাদের সামনে অনেকগুলো টি২০ খেলা আছে, সেভাবেই প্রস্তুতি শুরু হবে। এই বিপিএল থেকেই সেই প্রক্রিয়াটা শুরু হবে।’ অবশ্য সবার ভাবনাতে আসলে নিউজিল্যান্ড সফরটিই বেশি করে আছে। এই সফরটিই যে বিদেশের মাটিতে কিংবা বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কেমন করতে পারে সেই ধারণা দিয়ে দেবে। আর তাই নান্নু জানিয়েছেন, ‘নিউজিল্যান্ডের চিন্তা তো অবশ্যই আমাদের মাথায় আছে। আমরা টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বসে আলাপ করব। আমাদের একটা প্ল্যান আছে আমরা এটা নিয়ে বসব। যে কন্ডিশনে যেভাবে খেলবে ওইভাবেই কিন্তু আগাতে হবে। আগামী জানুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যেই আমরা দল ঘোষণা করব।’ এই দল ঘোষণা থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের নতুন বছরের পথ চলা শুরু হয়ে যাবে। তবে সাফল্যময় ২০১৮ সালটির ধারাবাহিকতা যেন নতুন বছরেও থাকে, সেই প্রত্যাশাই থাকছে সবার।
×