ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা

চট্টগ্রাম-১১ আসনে সুস্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে নৌকা

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

চট্টগ্রাম-১১ আসনে সুস্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে নৌকা

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বন্দর নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা)। এ আসনে লড়ছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক দুই সভাপতি আওয়ামী লীগের এমএ লতিফ ও বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। প্রচারের শেষদিকে এসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশ জমজমাট রূপ ধারণ করেছে। আসনটি এক সময় বিএনপির জন্য বেশ উর্বর হিসেবে বিবেচিত হলেও শক্ত অবস্থান করে নিয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী লতিফ। দুই মেয়াদের এই সংসদ সদস্য এলাকায় মাটি কামড়ে থেকে মজবুত ভিত্তি তৈরি করে ফেলেছেন। এবারও নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে যাচ্ছে নৌকা। ধানের শীষ প্রতীকের প্রচার থাকলেও নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্রমেই এক ধরনের হতাশা ভর করছে। চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার বন্দর-পতেঙ্গা আসনে। এ আসনে ভোটার ৫ লাখ ৮ হাজার ৪৩১। ভোটারদের মধ্যে একটি বড় অংশই অস্থানীয়। কারণ, বন্দর, ইপিজেড ও ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানা কারণে বিভিন্ন জেলার লাখ লাখ মানুষের বসবাস এ এলাকায়। এ আসনটিতে বিএনপি বরাবরই বড় ব্যবধানে জয়ী হয়ে আসছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে তাক লাগিয়ে দেন রাজনীতিতে নবাগত নৌকার প্রার্থী এমএ লতিফ। সেই থেকে তিনি ওই এলাকার মানুষের কাছাকাছি থেকে আসনটিকে অনেকটা নিজের করে নেন। প্রায় দশ বছর ধরেই ভর্তুকি মূল্যে স্বল্প আয়ের মানুষদের মধ্যে ভোগপণ্য বিতরণ, এলাকায় পানীয় জলের সুব্যবস্থাসহ নানা জনহিতকর কাজ চালিয়ে আসছেন। ফলে আসনটিতে তার অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী এমএ লতিফ তার মেয়াদে নির্বাচনী এলাকার পাড়া মহল্লা ও ঘরে ঘরে ব্যক্তিগতভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, যার প্রভাব এখনই পরিলক্ষিত হচ্ছে। ভোটের প্রচারেও তিনি এগিয়ে। যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই পাচ্ছেন মানুষের সাড়া। তাছাড়া সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে সংগঠিত করেছেন এলাকার বিপুলসংখ্যক নারীকে। তারাও অনেক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। অপরদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও বেশ শক্তিশালী প্রার্থী। এলাকায় দলটির প্রচুর ভোট ছিল অনেক আগে থেকেই। খসরুর ভোট ব্যাংকে লতিফ হানা দিলেও এখনও বিএনপি বেশ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনিও প্রতিদিন ছুটছেন নির্বাচনী এলাকার পাড়া মহল্লায়। তার সঙ্গেও রয়েছেন বিরাট কর্মীবাহিনী। আসনটির লড়াইয়ে দুজনই সাবেক ব্যবসায়ী নেতা। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দর-পতেঙ্গা আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেশের অর্থনীতির জন্য। এখানে রয়েছে বন্দর, কাস্টম হাউস, দুটি ইপিজেড, জ্বালানি সেক্টরের প্রধান স্থাপনা এবং ব্যবসা বাণিজ্য। এ আসন থেকে দেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতির অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রিত হয়। আন্দোলন সংগ্রামেও দেখা গেছে বন্দর অচল করে দাবি আদায়ের কৌশল। নানা কারণে এ আসনটি দখলে রাখতে চায় বড় দু’দলই। কারণ বন্দর-পতেঙ্গার ওপর কর্তৃত্ব থাকলে অনেক সুফল পাওয়া যায় নানাক্ষেত্রে। দুই প্রার্থীই যথেষ্ট শক্তিশালী। সুতরাং লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। তবে প্রচার এবং প্রার্থীর ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতায় বিএনপির প্রার্থী আমীর খসরুর চেয়ে এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এমএ লতিফ। শেষ পর্যন্ত কে বিজয়ী হন তা নির্ধারিত হবে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ভোটের মাধ্যমে।
×