ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুফল পাবে যাত্রীরা

নৌকার জয়ে চলমান থাকবে রেলের সব উন্নয়ন প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

নৌকার জয়ে চলমান থাকবে রেলের সব উন্নয়ন প্রকল্প

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের ৬৪ জেলায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্প শেষ করতে নৌকায় ভোট চায় আওয়ামী লীগ। কারণ দুইবার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগ স্মরণকালের উন্নয়ন মহাযজ্ঞ শুরু করেছে। হাটে মাঠে ঘাটে কোথাও উন্নয়ন ছাড়া কিছু নেই। দু’বারের নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ তা পূরণ করে মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা স্বপ্নও বাস্তবায়ন করেছে। বিদেশী ঋণ ছাড়াই পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ দেয়ার মতো অবিস্মরণীয় বড় বড় মেগাপ্রকল্প চলমান রেখেছে এই সরকার। রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১-১৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ৮ বছরে ৩৩০ দশমিক ১৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ১১৩৫ দশমিক ২৩ কিলোমিটার রেললাইনের পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। ১৭৭টি রেল স্টেশনের রিমডেলিং করা হয়েছে। ৬৪৪টি রেলসেতু পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৭০টি যাত্রীবাহী কোচ ও ৫১৬টি মালবাহী ওয়াগন কেনা হয়েছে ভারত থেকে। ১১৭টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে যাত্রীদের জন্য। ট্রেন দুর্ঘটনা কবলিত স্থান থেকে উদ্ধার করতে দুটি ‘এ’ ক্লাস রিলিফ ট্রেন ক্রয় করা হয়েছে। ৯১টি স্টেশন বিল্ডিং ও ২৯৫টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২য় ভৈরব ও ২য় তিতাস সেতুও। এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে হাইস্পীড ট্রেন চলাচলের সম্ভাব্যতা যাচায়ের কাজ চলছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারকে শতভাগ পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করতে রেললাইন স্থাপন বা নির্মাণ কাজ চলছে। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত যদিও রেললাইন স্থাপন করা থাকলেও ওই রেলপথকে সংস্কারের মাধ্যমে চলনক্ষম করা হয়েছে। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-গুনধুম পর্যন্ত রেলালাইন স্থাপনের কাজ চলছে। ২০২২ সাল নাগাদ এই লাইনে কক্সবাজার যেতে পারবে প্রতিদিন হাজারও পর্যটকসহ ওই এলাকার যাত্রীরা। অপরদিকে, বঙ্গবন্ধু রেলসেতু প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজ চলছে। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ কাজ চলছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। রেলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে পূর্বাঞ্চলীয় জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ ফারুক আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, যমুনা নদীর ওপর পৃথকভাবে বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মিত হবে। এই সেতুতে ডুয়েলগেজ ডাবল লেন রেললাইন স্থাপন করা হবে। আগামী মার্চের মধ্যেই ইন্দোনেশিয়া থেকে ২০০ কোচ এসে পৌঁছাবে যাত্রী সেবার জন্য। এদিকে, ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ফোর লেন রেললাইন স্থাপনের কাজ চলছে। আসন্ন ২০১৯-২৩ সালের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় হলে লক্ষ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে এমনটি প্রকাশ পেয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের ইশতেহারে। উন্নয়ন প্রকল্প চালু রাখতে প্রয়োজন নৌকার বিজয়। এই নির্বাচনে যদি আবারও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহামানের কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তাহলে রেলপথ মন্ত্রণালয় যেসব উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ শুরু করবে সেগুলো হলোÑ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৮৫৬ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ। সারাদেশে প্রায় ৭২৫ কিলোমিটার বিদ্যমান রেলপথের পুনর্বাসন করা হবে। ঢাকা শহরে সার্কুলার রেলপথ কাম-রোড সেতু নির্মাণ করা হবে। ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পাতাল রেলপথ নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে এই সরকার। এছাড়াও আখাউড়া থেকে সিলেট সেকশানে পাতাল রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এদিকে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটে ইলেকট্রিক ট্রাকশন ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের মাধ্যমে রেলে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। সাতক্ষীরা থেকে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের। স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেশের জনগণের টাকায় নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যে সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের কাছে হাত পাততে হয়নি লাল সবুজের পতাকার বাংলাদেশকে। কোন ঋণ নয় সম্পূর্ণ দেশের মানুষের টাকায় নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতু। ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে তারাকান্দি পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মিত হয়েছে। ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত প্রায় ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের কাজ চলছে। আসন্ন নির্বাচনে দেশের জনগণ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দিলে এসব প্রকল্প শতভাগ বাস্তবায়িত হবে। এদিকে, কাশিয়ানী খেকে গোপালগঞ্জ হয়ে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বিএনিপি-জামায়াত সরকারের আমলে বন্ধ হওয়া কালুখালী থেকে ভাটিয়াপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৭৫ কিলোমিটার রেললাইন এলাকার জনগণের সুবিধার্থে পুনরায় চালু হয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের জনগণের যাতায়াত সুবিধার্থে পাটুরিয়া থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত ২৫ মিলোমিটার রেললাইন পুনরায় চালু করা হয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে সরাসরি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে যেতে দোহাজারী থেকে ১০০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে গত ১০ বছরে যুক্ত হয়েছে, ৪৬টি রেল ইঞ্জিন বা লোকমোটিভ। চায়না থেকে ২০ সেট ডেমু ট্রেন এনে যুক্ত হলেও কয়েক সেট ট্রেন পরিচালনাগত দুর্বলতার কারণে লোকো কারখানায় পড়ে রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, নাজিরহাট, দোহাজারী, কুমিল্লা ও ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে প্রতিদিন শিক্ষার্থী ও যাত্রী পরিবহনে চালু রয়েছে। দোহাজারী বিদ্যুত কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তেল পরিবহনে ১৬৫টি মিটারগেজ ট্যাঙ্ক ওয়াগন ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়াও ৮১টি ব্রডগেজ ট্যাং ওয়াগন যুক্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। দেশের বিভিন্নস্থানে পণ্য পরিবহনে ২২০টি মিটারগেজ ফ্ল্যাট সংযুক্ত হয়েছে এই সরকারের আমলে। কেনা হয়েছে ৩০টি ব্রেজভ্যান। দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা থেকে কোচ বা ওয়াগন উদ্ধারে কেনা হয়েছে ‘এ’ ক্লাস একটি ব্রডগেজ ও একটি মিটারগেজ রিলিফ ট্রেন কেনা হয়েছে।
×