ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারছে না বিএনপি

চট্টগ্রামে মহাজোট এবার বড় চমক দেখাবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

চট্টগ্রামে মহাজোট এবার বড় চমক দেখাবে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ এবারের নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিজয়ে বড় ধরনের চমক সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। এটাই এখানকার রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম প্রধান আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ‘নৌকা-নৌকা’- ’জয় বাংলা’- স্লোগানে মুখর ১৬ আসনের মধ্যে ১৫টিতে। অপরটিও শরীক জোট জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে। এটি হচ্ছে হাটহাজারী। এখানে মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন। পর্যালোচনায় দেখা যায়, অতীতে বিএনপি কোন কোন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হলেও এবার তা একেবারেই ভেস্তে গেছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে নাশকতামূলক ঘটনার যে চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে তা জনমন ভুলে যাননি। বরঞ্চ নির্বাচন আসায় তা আলোচনার পাদপীঠে চলে এসেছে। এছাড়া বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দুদফায় ক্ষমতায় থেকে উন্নয়নের যে বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে তাও ভোটার মহলকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করেছে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যাতে ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধকতার মুখে না পড়ে সে বিষয়টিও ভোটার মহল আলোচনায় এনে মহাজোট প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করার মানসে প্রস্তুতি নিয়েছে। এটাই চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার ১৬ আসনের ভোটার মহলে বড় ধরনের চিন্তা ধারায় দাগ কাটছে। ফলে ভোটার নন বা জেলার বাইরে থেকে এসে এ নগরীতে বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরতরাও এমন ধারণা নিয়েই নিজেরা যেমন উদ্বুদ্ধ তেমনি অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াসে লিপ্ত। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার মোট ১৬ আসনে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ইতোমধ্যে মাঠে নেমে গেছে এপিবিএন, বিজিবি এবং সর্বশেষ সেনাবাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থার বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাসী ঘটনা রোধে পুলিশের পেট্রোলিংয়ে দ্বিগুণ সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। যাকে তারা নাম দিয়েছে কমপ্লিট রাইট গিয়ার পেট্রোলিং। এছাড়া কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই) সমূহে দ্বিস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবত করা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৭ হাজারেরও বেশি শুধু পুলিশই মোতায়েন থাকবে। এদের সঙ্গে সেনাবাহিনী ও বিজিবি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। মহানগরীর জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত এলাকায় যেহেতু নাশকতা সৃষ্টিকারীদের তৎপরতার কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত সেই চকবাজার এলাকার প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপন করা হয়েছে সেনা ক্যাম্প। ইতোমধ্যে নগরীর জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকায় তাদের পরিচালিত কোচিং সেন্টার, মেস ইত্যাদি প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। এসব মেস ও কোচিং সেন্টার ইতোমধ্যেই শূন্য হয়ে গেছে। পুলিশের তালিকা অনুযায়ী পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের অভিযানও চলছে সমানে। বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে বড় ধরনের কোন নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারে এমন কোন তথ্য মিলেনি। তবে মহানগরীর বাইরে মঙ্গলবার নৌকার প্রার্থী দিদারুল আলমের গণসংযোগ চলাকালে পেট্রোলবোমা হামলার একটি ঘটনা আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সকল বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। মহানগরীর ১৬ থানার পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে। সহায়তা নেয়া হচ্ছে ডিবি ও এসবি পুলিশের। উল্লেখ করা যেতে পারে, বিগত ২০০১ সালে চট্টগ্রামে আসন সংখ্যা ছিল ১৫টি। ওই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেও এরপর থেকে ভোটের চিত্রে তাদের জন্য ধস নামতে থাকে। এরপর ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সংখ্যা একটি বেড়ে ১৬টিতে উন্নীত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ১২ আসনে বিজয়ের ফসল ঘরে তুলে নেয়। অবশিষ্ট চারটির মধ্যে ২টি বিএনপি, একটি এলডিপি ও ১টি জামায়াত প্রার্থী বিজয়ী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। এ নির্বাচনে ১৬ আসনেই মহাজোট প্রার্থীরা জয়ী হয়। এবারের নির্বাচনে অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে গিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছে। চট্টগ্রামের ২টি আসনে ঐক্যফ্রন্টের ২ জন, অর্থাৎ চন্দনাইশে এলডিপির কর্নেল (অব) অলি আহমদ (ছাতা) ও হাটহাজারীতে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম (ধানের শীষ) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে নেমেছেন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চন্দনাইশে অলির পূর্বের অবস্থান আগের তুলনায় অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। আর হাটহাজারীতে নবাগত কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম ভোটের মাঠে এখনও কোন কূল কিনারা করতে পারেননি। ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে জোট বেঁধে তিনি এ আসনটিতে মনোনয়ন পেয়েছেন সত্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতার দ্বারে কাছে আসতে পারবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। মহানগরীর-১১ আসনে নৌকা প্রতীকের এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম-১০ আসনে ডাঃ আফসারুল আমিন, চান্দগাঁও- বোয়ালখালীতে নৌকার মঈনউদ্দিন খান বাদল ও কোতোয়ালি-বাকলিয়া আসনে নৌকার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রচার থেকে শুরু করে জনপ্রিয়তায়ও শীর্ষ অবস্থানে চলে গেছেন। এদের সকলের বিজয় সুনিশ্চিত বলেই আগেভাগেই আলোচনায় চলে এসেছে। সব মিলিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রামের ১৬ আসনে মহাজোটের প্রার্থীদের সপক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যা নতুন করে একটি চমক সৃষ্টি করার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মহাজোটের প্রার্থীরা বহু আগে থেকে মাঠে নেমে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে। কিন্তু ধানের শীষ বা তাদের স্বগোত্রীয়রা মাঠে নেমেছেন বহু পরে এবং এর পাশাপাশি কোন্দল থেকে মুক্ত হয়নি। পক্ষান্তরে মহাজোট কোন্দলমুক্ত আর ঐক্যফ্রন্ট নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে একদিকে যেমন নবাগতদের ভিড়, তেমনি কোন্দলে যুক্ত। এসব নিয়ে মহাজোট প্রার্থীরা বড় ধরনের প্লাস পয়েন্টে রয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, চট্টগ্রামে এবার ভোটার সংখ্যা ৫৬ লক্ষাধিক। নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে ৭ লক্ষাধিক। এরা অপেক্ষাকৃত বয়সে নবীন। এদের মনোভাব আগুন সন্ত্রাস, হত্যা, খুন, জ্বালাও পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে। ফলশ্রুতিতে এদের বড় একটি অংশ মহাজোটের প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নেমে জোর প্রচারে লিপ্ত হয়েছে।
×