ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় জাদুঘর করার উদ্যোগ

আড়াই শ’ বছরের পুরনো সামগ্রী, এখনও আকৃষ্ট করে মানুষকে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

আড়াই শ’ বছরের পুরনো সামগ্রী, এখনও আকৃষ্ট করে মানুষকে

মেজবাহউদ্দিন মাননু ॥ তাল পাতায় রাখাইন ভাষায় লেখা পুঁথি। বৌদ্ধ ভিক্ষুর খাবার সরবরাহের কাঠের পাত্র। শুকর শিকার করার অস্ত্র, লেজা। সঙ্গে বহন করার অস্ত্র, ভারি ছ্যানা। কাঠ ও পিতলসহ বিভিন্ন ধাতুর নির্মিত গৌতম বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন মূর্তি। পিতলের ভারি ঘণ্টা। সাগর পারের জনপদ পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার রাখাইনদের ব্যবহারের এসব জিনিসপত্র মানুষ এখনও খুঁজে বেড়ায়। রাখাইনদের ব্যবহারে এখন এসব আর তেমন একটা কাজে লাগছে না। তারপরও রাখাইনদের অনেকের বাড়িতে অরক্ষিত অবস্থায় এসব পুরনো জিনিসপত্র পড়ে আছে। প্রবীণরা রেখেছেন স্বীয় কীর্তির চিহ্ন হিসেবে। যা দেখে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আগত লোকজন জানতে পারে এই জনপদের অনেক অজানা কাহিনী। শুনতে চায় আদিবাসীদের সেকালের জীবনযাত্রা। একদার হিংস্র স্বাপদ-শঙ্কুল জনপদ কিভাবে হয়েছে বাসযোগ্য। কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা এসব দেখার জন্য, জানার জন্য ঘুরে বেড়ায় রাখাইন পল্লীতে। প্রায় আড়াইশ’ বছরের পুরনো বাসিন্দা রাখাইনদের হারানো এসব ঐতিহ্য সামগ্রী এখন অনেক প্রবীণদের কাছে পড়ে আছে, অযতœ আর অবহেলায়। কেউ আবার পরবর্তী কিংবা বর্তমান প্রজন্মকে জানার জন্য সংরক্ষণ করছেন। রাখাইন নেতা প্রকৌশলী ট্যানথান জানান, রাখাইনদের ব্যবহারের জিনিসপত্র নিজেদের সংরক্ষণ তো দূরের কথা এখন এদের অধিকাংশের জীবন-জীবিকাই চলছে জোড়াতালি দিয়ে। তিনি জানান, আদিবাসীদের চরম দুর্দশার কথা। কিভাবে রাখাইনদের এই দেশে আগমন। কিভাবে বসতি স্থাপন শুরু করেন গহীন অরণ্যে, স্বাপদ-শঙ্কুলের জনপদে। এদের ভিন্ন মাত্রার জীবন যাপন সম্পর্কে জানা যায় বহু অজানা তথ্য। একসময়ের দাপুটে এই আদিবাসীদের বসবাসের কথা শুনলে মনে হয় যেন রূপকথার গল্প। অনেক পরিবার টং ঘর তুলে একেক জায়গায় বসতি গড়ে তোলে। প্রত্যেকটি পাড়ায় পুকুর ছিল নিজেদের ব্যবহারের জন্য। যে পুকুরের পানিতে লাল পদ্ম ফুটত। স্বচ্ছ টলমল পানিতে পা ধোঁয়া ছিল বড় ধরনের অপরাধ। যে কেউ এ নিয়ম অমান্য করলে তাকে জরিমানা গুনতে হতো। ন্যূনতম বকা শুনতে হতো। রাতের বেলা রাখাইন পল্লীতে অন্য মানুষের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। রাখাইন পল্লীর হেডম্যান, মাদবরের নির্দেশ অমান্যকারীর এক ধরনের বিচারের সম্মুখীন হতে হতো। পাড়ার হেডম্যানদের নামানুসারে হয়েছে অধিকাংশ গ্রামের নাম। যেমন কলাউ রাখাইনের নামে হয়েছে কলাপড়া। ক্ষেপু রাখাইনের নামে খেপুপাড়া। এসব কথা এখন গল্পের ছলে বলেন প্রবীণ রাখাইনসহ ভিন্ন ধর্মের মানুষ। শোনার জন্য এখনও রাখাইন পল্লীতে ভিড় জমে দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক-দর্শনার্থীর।
×