ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিক্রেতারা দুষছেন নির্বাচনকে

মোবাইল ফোনের বাজারে মন্দা

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

মোবাইল ফোনের বাজারে মন্দা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের মোবাইল ফোনের বাজারে মন্দা দেখা দিয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে বেচা কমেছে ২০-৩০ শতাংশ। নতুন সরকার এবং নতুন বছর না এলে মোবাইলের বাজার আর জমবে না বলেই মনে করছেন তারা। সাধারণত বছরের শেষ দিকে শীতের প্রভাব এবং স্কুলে নতুন শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তির একটা চাপ থাকায় বাজেটে টান পড়ে। ফলে এই সময়ে মোবাইল বেচাবিক্রি এমনিতেই কম হয় বলে মোবাইল আমদানিকারকদের অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে। তা সত্ত্বেও আমদানিকারক ও বিক্রেতারা ধারণা করেছিলেন, নির্বাচন উপলক্ষে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়বে। ফলে বেচাও বাড়বে। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও জমেনি মোবাইল বাজার। ফলে মন্দা নিয়েই বছর শেষ হচ্ছে মোবাইল ফোন শিল্পের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনকে ঘিরে এক ধরনের আশঙ্কা থাকায় অনেকেই নগদ টাকা বা জমা অর্থ খরচ করতে আগ্রহী নন। তাদের মতে, প্রার্থীরাও অন্যান্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারে বেশি অর্থ খরচ করছেন না। এ কারণে এবার বাইকের মতো জমেনি মোবাইল ফোনের বাজারও। বরং অন্যান্য বছরের ডিসেম্বর মাসের তুলনায় এবারের ডিসেম্বরে বাজারের অবস্থা আরও খারাপ। দেশে সবচেয়ে বেশি বেচা হওয়া ফোন স্যামসাংয়ের আমদানি ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফেয়ার গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন বলেন, ‘বছরের শেষ প্রান্তিকটা এমনিতেই খারাপ যায়। এবার নির্বাচনের প্রভাবে আরও খারাপ যাচ্ছে।’ তাদের বেচা ১১ শতাংশ কমে গেছে বলে তিনি জানান। এদিকে দেশীয় মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন জানিয়েছে, তাদের ফোনের ঘাটতি ১৫-১৮ ভাগ কমেছে। যদিও এর কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গত কয়েক বছর ধরে মোবাইল ফোন মার্কেটে প্রচুর ‘গ্রে প্রোডাক্ট’-এর বেচা বেড়ে গেছে। এর প্রভাব অনেকটাই বৈধ পথে আমদানি এবং দেশে তৈরি ফোনের ওপর পড়েছে। ওয়ালটন জানায়, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মোবাইল হ্যান্ডসেটের আমদানিও প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে দেশে তৈরি স্মার্টফোনের উৎপাদনও কম ছিল। বেচা কমার ক্ষেত্রে এটাও উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে। ওয়ালটন সেলুলার ফোন বিক্রয় বিভাগের প্রধান আসিফুর রহমান খান বলেন, ‘এ বছর দেশের মোবাইল ফোন বাজার ছিল পড়তির দিকে।’ তার মতে, সংশ্লিষ্টদের উচিত অবৈধপথে মোবাইল ফোন আসা বন্ধ করা। এটা করা গেলে স্থানীয় উৎপাদন বাড়বে। দেশীয় উদ্যেক্তাও গড়ে উঠবে। টেকনো মোবাইল ফোন সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটির বেচা কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। শাওমি মোবাইল ফোনের পরিবেশক সোলার ইলেক্ট্রো বাংলাদেশ লিমিটেডের (এসইবিএল) প্রধান নির্বাহী দেওয়ান কানন বলেন, ‘বছরের এই প্রান্তিকে এসে মোবাইল বেচা অনেক কমে গেছে।’ এ অবস্থাকে তিনি ধস অভিহিত করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং শিক্ষার্থীদের নতুন শ্রেণীতে ভর্তির বিষয়ে এর জন্য দায়ী করেন। বলেন, ‘এবারের নির্বাচনের আমেজটা অন্যান্য বারের চেয়ে ভিন্ন হওয়ায় মোবাইল বেচায় প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের নতুন স্কুল ও শ্রেণীতে ভর্তির কারণেও অভিভাবকদের বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হয়। ফলে মোবাইল বেচাবিক্রিতে এসবের প্রভাব পড়ে।’ তবে তিনি মনে করেন, এসবের চেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে নির্বাচনের। দেওয়ান কানন বলেন, ‘আর এক-দুইদিন পর তো কেউই আর খুব প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরেই যাবে না। ফলে আরও ধস নামবে বাজারে। নতুন বছর না এলে এই ধস বা মন্দা দূর হবে না।’ রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি ও মোতালিব প্লাজা ঘুরে দেখা গেছে মোবাইল ফোন শপগুলো অনেকটাই ক্রেতাশূন্য। আমদানিকারকরা ২০ শতাংশ বেচা কমার কথা বললেও মোবাইল শপের বিক্রয় কর্মীরা বলেন, কমার পরিমাণ ৩০-৪০ শতাংশ হতে পারে। আর নন ব্র্যান্ড (কম দামি চাইনিজ ফোন) ফোনের বেচা কমেছে আরও বেশি।
×