ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক যুগসন্ধিক্ষণে সমগ্র দেশ। জরুরী ভিত্তিতে সামনে এসেছে নির্বাচনী অঙ্গীকার। নির্বাচনকে জনগণের দ্বারে পৌঁছে দিতে তৈরি করা হয়েছে দলীয় ইশতেহারও। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের ইতিহাস এক ও অভিন্ন ধারায় আসেনি। ফলে সারাদেশের জাতীয় আবেদন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিএনপির অঙ্গীকারনামায় কোন আগাম বার্তা একেবারেই নেই। যারা একাত্তরের ঘাতক আর দালালদের নিয়ে নির্বাচনী মঞ্চে এক কাতারে, তাদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষ শক্তি নিয়ে জাতীয় পতাকাকে ভূলুণ্ঠিত করাই সম্ভব- তাদের কোনমতেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর ব্যাপারটি সত্যিই অসম্ভব। স্বাধীনতার মতো অজেয় সম্পদ যারা সুতীব্র আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়, মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে যারা প্রতিনিয়তই লালন এবং মদদ দেয়, মুক্ত আর সার্বভৌম এই দেশটিতে তাদের অংশগ্রহণের কোন যৌক্তিক দাবি এবং অধিকার আছে কিনা, সে জবাব অবশ্যই উদ্দীপ্ত তারুণ্য এবং দেশপ্রেমিক সাধারণ মানুষের কাছে আছে। সময়মতো তা প্রকাশ পেতেও দেরি হবে না। বিজয়ের মাস নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয় বহু রক্ত, সম্মান আর ত্যাগ তিতিক্ষায় অর্জিত এই মুক্ত স্বাধীন দেশটি শুধু তাদেরই, যারা তাদের মাতৃভূমি আর ভাষাকে সুরক্ষায় প্রতিদিনের জীবন ও কর্মপ্রবাহকে শাণিত করছে। ইতিহাসের নিরবচ্ছিন্ন ঘটনাপরম্পরায় যারা কালের সাক্ষী হয়ে আজও তাদের মহিমান্বিত অবদানকে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় সম্পৃক্ত করে অসম সাহসিকতা আর দেশপ্রেমের অকৃত্রিম বোধে নিয়তই উদ্দীপকের ভূমিকায় আছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত বাংলাদেশ গড়তে দলীয় ইশতেহারে যে অঙ্গীকারনামা জনগণের সামনে তুলে ধরেছিলেন, ক্ষমতায় গিয়ে সেখান থেকে নিজেকে কোনভাবেই চ্যুত করেননি। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করা থেকে আরম্ভ করে তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া, তার চেয়েও বেশি একটি উন্নত বাংলাদেশ উপহার দেয়াÑ সব ধরনের প্রতিশ্রুতির অনেকটাই পূরণ করতে সমর্থ হয়েছেন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ তো বটেই, লিঙ্গসমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে অবস্থান নেয়া থেকে শুরু করে কৃষি অর্থনীতিতে জোয়ার বইয়ে দেয়া, শিল্পোদ্যোক্তার কাতারে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে দেশকে বিশ্ব সভায় নিয়ে যেতে তার সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনার সবটাই তিনি দক্ষ এবং সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতা সর্বশেষ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়াই শুধু নয়, আরও অনেক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে যে নির্বাচনী অঙ্গীকার তিনি জনগণের সামনে নিয়ে আসলেন, সেই লক্ষ্যমাত্রায় অদূর ভবিষ্যতে দেশ এগিয়ে যাবে। সেখানেও কোন কিছুর ব্যত্যয় হবে না সে প্রমাণ প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে সবার কাছে দিতে পেরেছেন। নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার আগে উদ্দীপ্ত তারুণ্যের সঙ্গে তার খোলামেলা আলাপচারিতায় ভবিষ্যত প্রজন্মই হবে দেশের যথার্থ কর্ণধার, এই সম্ভাবনাও নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে একটুকুও ভাবতে হয়নি। উদীয়মান সময়ের প্রজন্মকে কাছে পেয়ে তাদের সান্নিধ্যে নিজের বর্তমান অবস্থাকে পাশ কাটিয়ে পেছনের দিকে তাকালেন। সেই ইতিহাস অগ্নিস্নাত হলেও আনন্দ আর পরিতৃপ্তি আসতেও সময় লাগেনি। এক উদীয়মান কিশোরী কি অদম্য মনোবলে সমকালীন সমস্ত দুর্যোগকে অতিক্রম করলেন সে অতীতও সুখকর ও দুঃখ ভারাক্রান্ত নয়। আবহমান বাঙালীর মহানায়কের কন্যা একেবারে কাছ থেকে দেখলেন দুঃসাহসিক পিতার অদম্য মনোবল, অপরাজেয় শক্তিমত্তা আর অকৃত্রিম দেশাত্মবোধের এক অনির্বাণ শিখা। আর সেই বোধে কিশোরী থেকে পরবর্তী ধাপে পৌঁছে যাওয়া দেশ ও সময়ের এক অভূতপূর্ব ঘটনাপরম্পরা। নিজেকে তৈরি করতে হয়েছে সে সব বোধ আর অভিব্যক্তিকে জোরালো করে। তরুণ প্রজন্মের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন নির্দ্বিধায়, নির্ভীকচিত্তে। বলেছেন তার পক্ষে যা সম্ভব হয়নি নতুন প্রজন্ম সেখানেই দেশকে নিয়ে আরও সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। এক সময় দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। তবে পুরোপুরি দুর্নীতি এখনও অপসৃত হয়নি। সে জন্য আরও সময় লাগতে পারে। সে নব অধ্যায়ে উদ্দীপ্ত তারুণ্য তাদের যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে দুর্নীতি নামক সর্বগ্রাসী মহামারী থেকে দেশকে অবশ্যই বাঁচাবে। যেভাবে সামনে বসা তরুণ-তরুণীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যে, সাবলীলভাবে আলাপ করলেন সত্যিই অভিভূত হওয়ার মতোই। এই ঘনিষ্ঠ এবং প্রাণবন্ত কথোপকথনে কোন চমক ছিল না, বরং প্রতিদিনের যাপিত জীবনের নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রবাহের উজ্জ্বলতম দ্যুতি যা কিনা আগামী বাংলাদেশকে আলোয় আলোয় ভরিয়ে দেবে। সহজ সাধারণভাবে তরুণদের যেভাবে উদ্দীপ্ত করলেন মনে হলো দুর্গম পথযাত্রায় শঙ্কা কিংবা আতঙ্কের কোন অবকাশ নেই। অনেক সহিংসতা শুধু মোকাবেলাই করেননি, নিয়ন্ত্রণে এনেও সাধারণ মানুষের এগিয়ে চলার পথকে অনেকটাই নির্বিঘœ আর নিরাপদ করে দিয়েছেন। মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ আর মাদকের মতো অপশক্তিকে প্রতিরোধ আর নিশ্চিহ্ন করতে যা প্রয়োজন, সবটাই করতে তার মতো সবাইকে নির্ভীক অর অকুতোভয় হওয়া ছাড়া সামনে এগোনো যাবে না। যে সর্বনাশা অপশক্তি মহান স্বাধীনতা সংগ্রামকে কলঙ্কিত করেছে, বিজয় আর মুক্তির অর্জনকে লাঞ্ছিত করতে পিছপা হয়নি, তাদের ব্যাপারে কোন ধরনের আপোসকামিতার জায়গা থাকবে না এই দেশে। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পকে সর্বশক্তি দিয়ে নস্যাৎ করে দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামী পথযাত্রাকে আরও জোরালো করা ছাড়া কোন উপায় নেই। নিষ্ক্রিয়, নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকলে পরাজিত ও বিরোধী শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে সময় নেয় না। প্রধানমন্ত্রীর এই বলিষ্ঠ আলাপচারিতায় অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকারÑদেশকে আরও এগিয়ে নেয়ার বলিষ্ঠ প্রত্যয়। আর সে ধারাবাহিকতায় আমাদের সামনে এসে যায় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ইশতেহার। সমৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রায় বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিতে গেলে সমতার কাতারে জনগোষ্ঠীকে এক ও অভিন্ন সুতায় গেঁথে দিতে হবে। ফলে সবার আগে প্রয়োজন হবে গ্রাম ও শহরের দূরত্ব যথাসম্ভব কাছে নিয়ে আসা। অবশ্যই তা উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়। ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ এই অদম্য বার্তা হাজির করে আগামী বাংলাদেশ হবে শহরকেন্দ্রিক সমস্ত নাগরিক সুবিধা গ্রামে-গঞ্জে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়া। আবার উদ্দীপ্ত তারুণ্যের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সহজাত দায়বদ্ধতা ইশতেহারের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। এতে বলা হয় ১ কোটি ২৮ লাখ তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশের নিরন্তর অগ্রগামিতাকে নব অধ্যায়ের শামিল করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ধর্মীয় অনুভূতিতে কোন ধরনের আঘাত দেয়া যাবে না। ফলে আইনসম্মত কার্যক্রমেও এর কোন স্থান হবে না। উন্নয়নের মহাযাত্রায় তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দেয়া হয়েছে। ইশতেহারে ২১টি প্রস্তাবনার সম্ভাবনা জনগণের কাছে নিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রীর উদাত্ত আহ্বান আরও একবার শাণিত হয়ে উঠল। অবকাঠামো উন্নয়নে নির্বাচনী অঙ্গীকারকে অপ্রতিহত গতিতে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ও জোরালোভাবে স্বীকৃতি পেল। ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন এবং নদীর জলের গভীরে টানেল নির্মাণ যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে এক সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা। টেকসই এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়ন ইশতেহারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি। অঙ্গীকারাবদ্ধ এই ইশতেহার প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন মেয়াদের শাসনামলের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন যাত্রাকে আমলে নিয়ে ভবিষ্যতেও আগামী বাংলাদেশকে নতুন স্বর্ণযুগে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় তুলে ধরে। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন, মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের উত্থান, সন্ত্রাসী কর্মকা-, গ্রেনেড হামলা ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাও পর্যায়ক্রমিকভাবে উঠে আসে। ২০১৩ ও ১৪ সালে নির্বাচনের আগে ও পরে ২০ দলীয় জোটের আগুন সন্ত্রাসের ভয়াবহ বীভৎসতা জনগণকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। জনগণের মানবাধিকার সংরক্ষণই শুধু নয়, এই মহান অবস্থাটির লঙ্ঘনে সব ধরনের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতি, মাদক আর সন্ত্রাসের মতো বিধ্বংসী ব্যাপারগুলোকে কঠোরভাবে দমন করার ওয়াদাও থাকে এই নির্বাচনী ইশতেহারে। শহর, নগর, বন্দরের উন্নয়নের নিরন্তর গতি প্রবাহে পিছিয়ে পড়া গ্রাম সমাজকেও একই ধারায় নিয়ে আসতে সরকার প্রয়োজনীয় সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে উন্নত প্রযুক্তিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশ এবং বিদেশে এর সম্প্রসারণ আরও ছড়িয়ে দেয়া হবে। সুস্থ ও সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক সুব্যবস্থা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, ধর্মীয় বোধ সংরক্ষণ, নারীর নাগরিক অধিকার ও ক্ষমতায়নকে নতুন মাত্রা এনে দেয়া ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার বিশিষ্ট পর্যায়। আইনী কাঠামোকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম অর্জন। যেখান থেকে শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার কার্যক্রমই নয়, রায় বাস্তবায়নও ছিল বিচারিক প্রক্রিয়ার এক বলিষ্ঠতম সংযোজন। পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধীর বিচার, একুশে গ্রেনেড হামলার আইনী সমাধান, জাতীয় চার নেতার জেলের অভ্যন্তরে নির্মম হত্যাকেও বিচারের আওতাধীন করে নেয়ার সব ধরনের পদক্ষেপ জনমনে প্রশংসিত হয়েছে। যথার্থ অপরাধীরাই শাস্তি পেয়েছে এবং আইনী বিধিনিষেধও সুসংহত হয়েছে। আগামীতে ক্ষমতায় গেলে এসব অর্জিত বিষয় আরও নতুন মাত্রা পাবে, যা জনগণের সার্বিক মঙ্গলের পক্ষেই যাবে। মুক্তিযুদ্ধের যথার্থ ইতিহাস ও স্মৃতি রক্ষাই শুধু নয়, যুদ্ধকালীন বধ্যভূমি, গণকবর চিহ্নিত করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় জানাও সরকারের বিশেষ দায়বদ্ধতা। দশ বছরে যা যা হয়েছে সে হিসেবে না গিয়ে আরও অনেক কিছু করার বাকি আছে, এই প্রত্যয় ব্যক্ত করে আধুনিক বাংলাদেশকে সময়ের মিছিলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। আর তা করতে হলে উন্নয়নের অব্যাহত যাত্রাকে এগিয়ে নিতে আরও একবার প্রধানমন্ত্রীকে তার যোগ্যতম আসনটিতে বসাতে হবে। জনগণের নিরবচ্ছিন্ন সম্পৃক্ততায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশের কর্ণধার যিনি, তাঁকে বাদ দিলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? গত ২১ বছরের নির্মম ইতিহাসের বঞ্চনা আজও আমাদের শিহরিত, দিশেহারা করে দেয়। ফলে নতুন কোন দুর্যোগের ঘনঘটায় বিপর্যস্ত হওয়া যাবে না। লেখক : সাংবাদিক
×