ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় সমৃদ্ধির বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় সমৃদ্ধির বাংলাদেশ

(২৪ ডিসেম্বরের চতুরঙ্গ পাতার পর) ক্ষমতার পালাবদলে আবারও প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ স্তিমিত হয়ে যায়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। এর ভিত্তিতে রাশিয়ার সঙ্গে ‘সমঝোতা স্মারক’ ও ‘ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ২০১০ সালের ১০ নবেম্বর জাতীয় সংসদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১১ সালের ২ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে রাশিয়ান ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে প্রকল্প নির্মাণে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে পাবনার রূপপুরে দুই হাজার চারশ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ সরকার। ৩০ নবেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নকামী নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক নিজ হাতে পারমাণবিক চুল্লি বসানোর জন্য প্রথম কংক্রিট ঢালাই/ মূল নির্মাণ কাজ এবং ১৪ জুলাই ২০১৮ ইং ২য় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাই/মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ৩২তম পারমাণবিক বিদ্যুত শক্তি উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় যুক্ত হয়। চুক্তি অনুযায়ী এফসিপি উদ্বোধনের দিন হতে ৬৩ মাসের মধ্যে ২০২৩ সাল নাগাদ এই প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হওয়ার কথা। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জ কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৭ কি.মি. সবচেয়ে দীর্ঘ ও চার-লেন বিশিষ্ট প্রথম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তিনটি পর্বে তৈরি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল এর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। প্রথম পর্ব বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ২১ কি.মি. দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ হবে। ২য় পর্ব তেজগাঁও হতে মগবাজার পর্যন্ত ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হবে। ৩য় পর্ব মগবাজার-কুতুবখালী জুন ২০২১ সালের মধ্যে সমাপ্ত হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল সমতার ভিত্তিতে সব অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত গতিতে চলছে। ৩৭টির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ৩০ হাজার একর জায়গার মধ্যে ইতোমধ্যে ১১৫০ একর জমি দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীর মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৪টি, ফেনী, নাটোরসহ বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এসব অঞ্চল থেকে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এতে বাড়বে জীবনযাত্রার মান। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকগুলোর উন্নয়ন হবে। যা বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে। হাইটেক পার্ক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ঢাকা মানে বাংলাদেশ নয়, ঢাকার বাইরের বাংলাদেশই হলো আসল বাংলাদেশ।’ তার আদর্শকে ধারণ করে গ্রাম ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে গুরুত্ব দিয়ে স্বল্প সময়ে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত প্রযুক্তি সেবা পৌঁছে দেয়া হয়েছে, যার সুফল গ্রামের মানুষ ভোগ করছে। হাইটেক পার্কে ২০ লাখ আইটি পেশাদার তৈরির মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বছর প্রতি রফতানি আয় ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ। এ পার্কগুলোতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে লাখ লাখ ব্যক্তির কর্মসংস্থান হবে। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটি (বিএইচটিপিএ) সূত্র অনুযায়ী, ইতোমধ্যে কালিয়াকৈরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে প্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদন শুরু হয়েছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার খরিতাজুড়ি বিলে ১৬৩ একর জমিতে দেশের দ্বিতীয় হাইটেক পার্ক, কাওরান বাজারের জনতা টাওয়ার, যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির আদলে রাজশাহীতে প্রায় ৩২ একর জমি নিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু সিলিকন সিটি’। এটিই হবে দেশের প্রথম সিলিকন সিটি। আর এর মধ্যে দিয়েই রাজশাহীতে নতুনভাবে কর্মসংস্থানের দাঁড় উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের ৭টি বিভাগের ১২ জেলায় সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে। ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ যশোরে অবস্থিত ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের প্রথম হাইটেক পার্ক ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’ এর উদ্বোধনের মাধ্যমে ডিজিটাল বিপ্লবের নবজারণের সূচনা হয়েছে। কর্ণফুলী টানেল ৮,৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে চার- লেনের ৩.৫ কি.মি. টানেল নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। এ টানেলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এশিয়ান হাইওয়ে হয়ে ভারত ও মিয়ানমারকে সংযুক্তির মাধ্যমে রিজিওনাল কানেক্টিভিটি তৈরি করবে। এ টানেল নির্মিত হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে দূরুত্ব হ্রাস পাবে। এ টানেলের দুই পাশে ৬ কি.মি. এ্যাপ্রোচ রোড থাকবে। এ টানেল তৈরির ফলে দেশের পূর্বাঞ্চলে নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে এ টানেলের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। কর্ণফুলী টানেলকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে, বদলে যাবে, পতেঙ্গা, কাট্টলী এবং কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকার আর্থ-সামাজিক চিত্র। উন্মোচিত হবে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। (সমাপ্ত) লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক [email protected]
×