ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট দেব কাকে

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

ভোট দেব কাকে

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে নিবন্ধীকৃত সকল দল অংশগ্রহণ করছে। যেসব দল বা রাজনৈতিক সংগঠনের নিবন্ধন নেই, তারাও অন্যদলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ। দলীয়/জোটের প্রার্থীর বাইরে কিছু সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছে। সকল দল ও পক্ষ অংশগ্রহণ করায় নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক ভোটারের যে উপস্থিতি ঘটবে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। এককথায়, এটি হতে যাচ্ছে উচ্চ অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন। সকলের কামনাও ছিল তাই। এবারের নির্বাচনের একটি বিশেষ দিক হলো, স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, মহামান্য আদালতের রায়ে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত এবং নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনহীন জামায়াতে ইসলামী নিজেদের নির্বাচনী প্রতীকের পরিবর্তে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ। এর বাইরে এ দলের বেশ কিছু সদস্য স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির ২৬ জন প্রার্থী সমঝোতার ভিত্তিতে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে। সমঝোতার বাইরে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে আরও বেশকিছু সংখ্যক জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছে। অপরদিকে, বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে রাজনীতিক হিসেবে বেড়ে ওঠা এবং সন্ত্রাস, রুগ্ন রাজনীতি, দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা ও বিএনপি-জামায়াতবিরোধী হিসেবে এ যাবত সোচ্চার ও লিবারেল ডেমোক্রেসির প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত ড. কামাল হোসেন বিএনপি-জামায়াত তথা ধানের শীষের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন। তাঁর এ অবস্থান এদেশের অগণিত মানুষকে হতবাক ও বিস্মিত করেছে। তাঁর এ ভূমিকা দ্বারা কিছু মানুষ বিভ্রান্ত হলেও হতে পারে। এদিকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরপর দুই টার্মে দশ বছর তাঁর সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেছে। এমনি অবস্থায় ভোটারদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে, ভোট দেব কাকে? যারা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধী, তাদের? ’৭১-এ গণহত্যা চালিয়ে এদেশে ৩০ লাখ লোক হত্যা, দেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের হাত ও চোখ বেঁধে মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা, হানাদারদের হাতে মা-বোনদের তুলে দিয়ে তাঁদের সম্ভ্রমহানি, দেশের তখনকার প্রায় এক-সপ্তমাংশ (১ কোটি) জনগণকে দেশ ছেড়ে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের নির্বিচার হত্যা ও দেশান্তরিত, লাখ-লাখ ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ভস্মীভূত ইত্যাদি চরম অপরাধ সংঘটনে যারা পাকিস্তানী হানাদারদের প্রত্যক্ষ সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, তাদের? যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যুক্ত, যারা তাঁর আত্মস্বীকৃত খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দান ও দেশের ভেতরে-বাইরে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে, হত্যাকারীদের বিচার যাতে অনুষ্ঠিত না হতে পারে সে জন্য কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেছে এবং সংবিধান সংশোধন করে (জেনারেল জিয়া কর্তৃক পঞ্চম সংশোধনী, ১৯৭৯) তাতে তা অন্তর্ভুক্ত করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা করেছে, তাদের? যারা ৭২-এর সংবিধান কাটাছেঁড়া করে বাঙালীর অসাম্প্রদায়িক আদর্শ ও সম্প্রীতির চিরায়ত সাংস্কৃতির ঐতিহ্য-বৈশিষ্ট্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে পাকিস্তানী ভাবধারায় রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্প্রদায়িকতাকে সংবিধানের ৩৮নং অনুচ্ছেদ বাতিল করে সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল বা সংগঠন করার অধিকার দিয়েছে, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে পাকিস্তানী পাসপোর্টে দেশে আসার সুযোগ ও নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী শাহ আজিজ ও আবদুল আলিমকে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী করেছে, যারা গণহত্যায় পাকিস্তানীদের মূল সহযোগী ও বুদ্ধিজীবী হত্যার নায়ক নিজামী ও মুজাহিদকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মা ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জাতীয় পতাকাকে অপমানিত করেছে (জেনারেল জিয়া ও বেগম খালেদা জিয়া), তাদের? যারা বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় অত্যন্ত নিষ্ঠুর পৈশাচিকভাবে হত্যা করেছে, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহের, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ, জেনারেল মঞ্জুরসহ শত-শত মুক্তিযোদ্ধাকে বিনা বিচার বা প্রহসনমূলক বিচারে ফাঁসি দিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে (মোশতাক-জিয়া-সাত্তার সরকার), তাদের? গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারী অর্থ ব্যবহার করে যারা চরম সাম্প্রদায়িক, বাঙালী জাতিসত্তাবিদ্বেষী, পাকিস্তানপন্থী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-মুসলিম লীগ ও অন্যান্য দলছুটদের নিয়ে বিএনপি নামক একটি দল গঠন করে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্থায়ী বিভক্তি ঘটিয়েছে (জেনারেল জিয়া, ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮), তাদের? যারা মধ্য ফেব্রুয়ারির (১৯৯৬) ভোটারবিহীন নির্বাচন, উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা বৃদ্ধি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত হেনেছে (খালেদা জিয়ার বিএনপি ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার), তাদের? যাদের শাসনকালে পরপর ৪ বার বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ১ নম্বর বা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে (বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম বিএনপি সরকার), তাদের? যারা সরকারের সমান্তরালে দুর্নীতির আখড়া খ্যাত ‘হাওয়া ভবন’ সৃষ্টি, বিদেশে মানি লন্ডারিং করেছে, তাদের? যারা উগ্র সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গীগোষ্ঠীর উত্থান, শায়ক আবদুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই, মুফতি হান্নান প্রমুখকে সৃষ্টি করেছে, ২০০৪ সালে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনার বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে ভয়াবহ আরজেএস গ্রেনেড হামলা করে নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী-সমর্থককে হত্যা এবং অনেককে আহত ও চিরতরে পঙ্গু করে দিয়েছে (বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ছত্রছায়ায়), তাদের? উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা বৃদ্ধি এবং দলীয় রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহমদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার হীন প্রচেষ্টার মাধ্যমে যারা ১/১১ সৃষ্টি বা দেশে মঈন উ আহমেদের নেতৃত্বাধীন সেনাশাসন আনার পথ সুগম করেছে (বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার), তাদের? ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচন বর্জন ও তা প্রতিহত করা এবং ২০১৫ সালের শুরুতে একটানা ৯৩ দিন সরকারবিরোধী সর্বাত্মক আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস-সহিংসতার তা-বলীলা চালিয়ে নারী-শিশুসহ ৫০০ জনের মতো নিরীহ, সাধারণ মানুষ হত্যা (অনেকে বোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে) এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশ বাহিনীর ২২ জন সদস্যের হত্যার জন্য দায়ী (বিএনপি-জামায়াত জোট), তাদের? আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত-ধানের শীষ রাজনীতির এ ধারাকেই প্রতিনিধিত্ব করছে। এর বিপরীতে, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি-সমৃদ্ধি ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের ধারা। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকা-ের পর ৬ বছর নির্বাসিত জীবন-যাপন শেষে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বভার গ্রহণ করে সেনাশাসনের কবল থেকে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-চেতনা পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত করেন। শীঘ্রই তিনি আবির্ভূত হন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্যের প্রতীক রূপে। ১৯৮১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৭ বছরে শেখ হাসিনা নিজ জীবনের ওপর বার বার হুমকি উপেক্ষা করে বাংলাদেশ ও জাতিকে যা দিয়েছেন, সংক্ষেপে তা হচ্ছেÑ জেনারেল জিয়া, এরশাদ ও মঈন উ আহমদের সেনাশাসনের কবল থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার; ’৭১-এর স্বাধীনতা ও মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী ও জাতির জনকের আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচার অনুষ্ঠান ও বিচারের রায় কার্যকর করা; ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানি চুক্তি (১২ ডিসেম্বর ১৯৯৬) সম্পাদন করে বাংলাদেশের জন্য ন্যায্য হিস্যা আদায়; পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে (২ ডিসেম্বর ১৯৯৭) দীর্ঘ দুই দশক ধরে ঐ অঞ্চলে চলমান রক্তক্ষয়ী ও যুদ্ধকালীন অবস্থার অবসান ঘটিয়ে সেখানে বাঙালী-পাহাড়ীদের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি স্থাপন; খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন; অক্ষম-দুস্থদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বিধান; গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন; বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তাদের জন্য মাসিক ভাতা প্রচলন; ছিন্নমূল, গৃহহীন, বস্তিবাসী ও অসহায়দের পুনর্বাসন; হতদরিদ্রদের জন্য ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ; মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা প্রদান, ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি ও তাঁদের কল্যাণে গৃহীত অন্যান্য পদক্ষেপ; সমাজ, সরকার, রাষ্ট্র সর্বক্ষেত্রে নারীর সুযোগ সৃষ্টি ও ক্ষমতায়ন; ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন; প্রায় শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিতকরণ; প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক ও দাখিল স্তরে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে ৩৫ কোটি ৪৩ লাখ পাঠ্যপুস্তক বিতরণ; নারী শিক্ষার প্রসারে বিশেষ গুরুত্বারোপসহ কয়েক লাখ নারী শিক্ষার্থীর জন্য বৃত্তি-উপবৃত্তির ব্যবস্থা; কারিগরি শিক্ষার প্রসারের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ এবং এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ভর্তির হার পূর্বের শতকরা ১ ভাগ থেকে বর্তমানে তা ১৫ শতাংশে উন্নীতকরণ; দেশের ১০০টি উপজেলায় ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের পদক্ষেপ; দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ১৪টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ লাখ শিক্ষার্থীকে দীর্ঘদিনের দুর্বিষহ সেশনজটের অভিশাপ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তকরণ; দক্ষ ও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে নি¤œ মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলককরণ; মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন ও মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে উদ্যোগ গ্রহণ; পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার ইতিহাস তুলে ধরা; ২১ ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি অর্জন (১৭ নবেম্বর ১৯৯৯); বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ‘বিশ্ব-ঐতিহ্য সম্পদ’ হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভ (৩০ অক্টোবর ২০১৭); নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ; মহাশূন্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ (১২ মে ২০১৮), মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি; ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ের (৩১ জুলাই ২০১৬) মাধ্যমে উভয় দেশের কয়েক লাখ ছিটমহলবাসীর দীর্ঘদিনের দুঃখ-দুর্দশার অবসান; প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের ১১ লাখ জীবন বিপন্ন রোহিঙ্গা নারী-শিশু-বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়দান; জঙ্গী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উত্থান কঠোর হস্তে দমন; সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন সর্বোচ্চ ১২৩ ভাগে বৃদ্ধি করে নতুন পে-স্কেল ২০১৫ ঘোষণা; বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা (বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় যা ছিল মাত্র ৩২০০ মেগাওয়াট); প্রবৃদ্ধির হার ৭.৮৬ ভাগে বৃদ্ধি; দারিদ্র্যের হার ৪৪ থেকে ২২ শতাংশে হ্রাস; অতিদরিদ্রের হার ২২ থেকে ১১ শতাংশে হ্রাস; মাথাপিছু আয় ১৭৫১ মার্কিন ডলারে উন্নীত (যা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ছিল মাত্র ৪২৭ মার্কিন ডলার); বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছরে বৃদ্ধি; সাক্ষরতার হার ৭৩ শতাংশের উর্ধে; বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘের উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জন (১৫ মার্চ ২০১৭) ইত্যাদি। ২০০৮ সালের নির্বাচন উপলক্ষে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ উন্নয়নের রূপকল্প বা ভিশন-২০২১ (যা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচী নামেও পরিচিত) জাতির সম্মুখে পেশ করেছিল। এ পর্যন্ত এর অধিকাংশ টার্গেটই পূরণ হয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দলটির পক্ষ থেকে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে নতুন একটি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। এতে কার্যকর সংসদ, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা, জবাবদিহিমূলক প্রশাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-সাম্প্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূল, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন ও শক্তিশালীকরণ, ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ স্লোগান নিয়ে দেশের প্রতিটি গ্রামে নগর জীবনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ, দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনে যুবশক্তিকে উন্নয়ন প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান দেয়া, দারিদ্র্য ও বৈষম্য বিমোচনে নতুন কর্মসূচী, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা আরও বৃদ্ধি, ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন, ২০৩০, ২০৪১ ও ২১০০ সালের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ইত্যাদি স্থান পেয়েছে। এ নির্বাচনী ইশতেহারে স্বল্প, মধ্যম, মধ্য-পরবর্তী ও দূরবর্তী লক্ষ্যসমূহের মধ্যে ৫ বছরে ১ কোটি ৫০ লাখ তরুণ ও অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রতিটি উপজেলায় ‘তরুণ কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা, ২০২০ সালের মধ্যে শতভাগ বা সবার জন্য বিদ্যুত নিশ্চিত, ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার শূন্য কোটায় নামিয়ে আনা, ১ বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের ওপরে সবাইকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, জেলাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন, ২০২৫-৩০ সালে প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে উন্নীত, ২০৩১ সালে মাথাপিছু আয় সাড়ে ৫ হাজার মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি, ঢাকা-চট্টগ্রাম বুলেট ট্রেন চালু, বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩১ সালে উচ্চ-মধ্যম এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত করা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশ কিভাবে ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তার টেকসই উন্নয়ন সুনিশ্চিত করবে, সে লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে শতবর্ষী ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’। ইশতেহারে যে ১০টি মেগা প্রজেক্টের উল্লেখ রয়েছে, সেগুলো হচ্ছেÑ পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দর (সোনাদিয়া), পায়রা সমুদ্র বন্দর, ঢাকায় দ্রুত গণপরিবহন ব্যবস্থা (মেট্রো রেল, পাতাল রেল), এলএনজি টার্মিনাল, মহেষখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন। এক অর্থে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭০ সালের নির্বাচনের রূপ লাভ করেছে। ৭০-এর নির্বাচন ছিল স্বাধীনতা বনাম পাকিস্তানের দাসত্ব। আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে বাঙালীরা নিরঙ্কুশ রায় দেয়ায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সে দিন মানুষ ব্যক্তি প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা বিচার করেনি। বাঙালীর জাতীয় মুক্তির প্রশ্নে তারা ছিল একাট্টা। তারা শুধু নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি ম্যান্ডেট দিয়েছে। অনুরূপভাবে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে স্থির হবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাবে, না-কি পুনরায় সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দখলদারিত্ব, লুণ্ঠন, হত্যা-খুন, নারীর শ্লীলতাহানি, জঙ্গীবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও প্রতিহিংসার রাজনৈতিক ধারায় পুনঃপ্রত্যাবর্তন করবে। নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীক এ দুই পরস্পরবিরোধী ধারা প্রতিনিধিত্ব করছে। ড. কামাল হোসেনের ধানের শীষের নেতৃত্ব গ্রহণেও এর কোন হেরফের হবে না। অতএব, যাদের কামনা শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি সুখী, সুন্দর, নিরাপদ বাংলাদেশ, তাদের প্রত্যেকের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কর্তব্য একটিই, আর তা হচ্ছে ১৯৭০ সালে নৌকার পক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি যেমন এদেশের মানুষ একাট্টা হয়ে ম্যান্ডেট প্রদান করেছে, তদ্রƒপ ব্যক্তি প্রার্থীর প্রার্থিতা বিবেচনা না করে নৌকার পক্ষে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ম্যান্ডেট দান। ১৯৭০-এ এদেশের জনগণ কোনরূপ বিভ্রান্ত হয়নি বা ভুল করেনি। ২০১৮ সালেও সেটিই ঘটবে অর্থাৎ ব্যালটের মাধ্যমে জনগণ সঠিক রায় প্রদান করবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। লেখক : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও উপাচার্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
×