ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ॥ মিয়ানমার আদালতে আপীলের শুনানিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন

সাংবাদিকদের মুক্তি দিন

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

সাংবাদিকদের মুক্তি দিন

মিয়ানমারের এক আদালতে সোমবার দুপুরে রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে করা আপীলের শুনানিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। অফিসিয়াল সিক্রেট এ্যাক্ট ভঙ্গের অভিযোগে তাদের সাত বছরের জেল হয়। এদিকে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরিমি হান্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আগামী বছরে মিয়ানমারের সরকার কর্তৃক কারাগারে আটক সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সোয়ে ওও’র (২৮) মুক্তির বিষয়ে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাবে। তিনি অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেন। ইয়াহু নিউজ ও গার্ডিয়ান। ডিফেন্স আইনজীবী নবেম্বরের শুরুতে সাংবাদিকদের শাস্তির বিরুদ্ধে আপীল করেন। এজন্য তারা পুলিশের তৈরি করা অভিযোগ প্রমাণ এবং অপরাধ প্রমাণের অভাবকে চিহ্নিত করেছেন। শুনানি মুলতবির আগে সাংবাদিকদের আইনজীবী ও প্রসিকিউশন আইনজীবী এক ঘণ্টারও বেশি সময় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। আদালত সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য নতুন কোন তারিখ ধার্য করেনি। আপীল আইনজীবী এল কুন রিং প্যান বিচারক আউং নাইংয়ের কাছে নি¤œ আদালতের সিদ্ধান্ত বাতিল ও সাংবাদিকদের মুক্তির সপক্ষে বক্তব্য রাখেন। আইনজীবী এল কুন বলেন, নি¤œ আদালত ত্রুটিপূর্ণভাবে গঠিত হয়। যে কারণে তারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আনা গোপন তথ্য সংগ্রহ, মিয়ানমারের শত্রুকে তথ্য পাঠানো অথবা জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষতির ইচ্ছা ছিল এই অভিযোগগুলো প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা নির্দোষ। পুলিশ জানিয়েছে, দুই সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে যখন তারা টহল পুলিশ তাদের থামিয়ে গোপন তথ্য পান। ডিফেন্স আইনজীবী জানান, গ্রেফতারের বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের থামানোর বিষয়টি মিথ্যা। সত্য হচ্ছে তাদের আটক করার সব পরিকল্পনা আগেই করা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের আটক করা হয়নি। সরকার পক্ষের আইনজীবী খাইন খাইন সোয়ে বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে উপস্থাপিত প্রমাণের সত্যতা পাওয়া গেছে তারা গোপন দলিল সংগ্রহ করেছেন এবং তা লুকিয়ে রেখেছিলেন। এটি খুঁজে পাওয়া গেছে যে তারা জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ লঙ্ঘন করার অভিপ্রায় ছিল। সাংবাদিকদের আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছু কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন। যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের কূটনীতিক ছিলেন। শুনানি শেষে সাংবাদিক ওয়া লোনের স্ত্রী প্যান ই মোন সাংবাদিকদের বলেন, দুই বছর আগে একই আদালতে তারা বিয়ের সনদ স্বাক্ষর করেছিলেন। আমরা ন্যায়বিচার চাই ও ভাল কিছু আশা করছি। মিয়ানমারে রয়টার্সের এডিটর ইন চীফ স্টিফেন জে এ্যাডলার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আমরা মিয়ানমারের হাইকোর্টে সত্য উদ্ঘাটনের অপেক্ষায় রয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে করা বিচারটি যে অদালতে করা হয়েছে সেটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল। যে জন্য আমাদের সাংবাদিকদের সাত বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। আমরা আপীল বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা করেছি কেন এবং শুধুমাত্র সম্ভাব্য উপসংহারের ভিত্তিতে শাস্তি হয়েছে। আপীল আদালত অবশ্যই আমাদের সাংবাদিকদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার এবং মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক নীতিগুলোর পুনরাবৃতি করবেন। সেপ্টেম্বরে ইয়াঙ্গুনের এক জেলা আদালত ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়েকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেয়। যা মিয়ানমারের গণতন্ত্রের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপিত করেছে এবং কূটনীতিক ও মানবাধিকার আইনজীবীরা মামলাটি নিয়ে তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মিয়ানমারের সর্বোচ্চ নেত্রী আউং সান সুচি সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন যে, দ-প্রাপ্ত সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য কিছুই করার ছিল না। ওই দুই সাংবাদিকের শাস্তি হওয়ার এক সপ্তাহ পর তিনি এই বক্তব্যটি দেন। তিনি আরও বলেন, তাদের শাস্তি হয়েছে সরকারী গোপন কাগজপত্র বহনের জন্য। সাংবাদিক হওয়ার জন্য তাদের শাস্তি হয়নি। আটক হওয়ার আগে ওই দুই সাংবাদিক গত বছর আগস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর বর্বর দমনাভিযানে দশ রোহিঙ্গা মুসলমান তাদের ও ছেলেদের হত্যার বিষয়ে রয়টার্সের তদন্তে কাজ করছিলেন। জাতিসংঘের হিসেব মতে, ওই অভিযানের ফলে সাত লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। আট মাসের শুনানিতে ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ের সঙ্গে দুই পুলিশের ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর ইয়াঙ্গুন রেস্তরাঁয় এক বৈঠকে সংবাদপত্রের কাগজ দিয়ে মোড়ানো একটি প্যাকেট দেয়া হয়। যে দুজন পুলিশের কাছ থেকে তারা ওই রোল করা কাগজের প্যাকেটটি পান তাদের সঙ্গে আগে কখনই তারা কোন বৈঠক করেন নি। তারা জানান, এরপর পরই তাদের সাদা পোশাকধারী কর্মকর্তারা কোলে করে গাড়িতে তোলে এবং তাদের আটক করে।
×