ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অসময়ে আম্রমঞ্জরি, বারতা দিচ্ছে নতুন বছর ভালই যাবে...

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

অসময়ে আম্রমঞ্জরি, বারতা দিচ্ছে নতুন বছর ভালই যাবে...

সমুদ্র হক ॥ জাতীয় গাছে মুকুলের আগমনের কথা ফাল্গুনে। এবার অনেকটা আগে পৌষে এসেছে। বগুড়ার আম গাছে এখনই মুকুল। পরিবেশবিদগণের কথা : জলবায়ুর পরিবর্তন। সত্যিই কি! প্রবীণরা খনার বচন ঠোঁটে এনে বলছেন : আমে ধান তেঁতুলে বান। দেশে আমের বন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর বাগানের ক’জন মালিক বললেন, সময়ের অনেক আগেই মুকুল এসেছে। ধারণা দিচ্ছে, এবারও আমের ফলন ভাল হবে। যে বছর আমের বেশি ফলন হয় তখন বলা হয় ‘অন ইয়ার’। আমের এই মুকুলের একটি নাম ‘আ¤্রমঞ্জরি’। গোধূলী বেলা থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত আ¤্রমঞ্জরির ম ম গন্ধ ভেসে আসছে। গাছের ডালের আগায় তীরের ফলার মতো আ¤্রমঞ্জরির আরেক নাম পুষ্পশর। বিপ্রদাস বড়ুয়ার লেখা থেকে জানা যায়, প্রণয়ের দেবতার পাঁচটি শরের মধ্যে অন্যতম পুষ্পশর বা আ¤্রমঞ্জরি। বাকি চারটি শর হলো- পদ্ম, রক্তপদ্ম, অশোক ও নবমল্লিকা। এই পাঁচটি শর দিয়ে প্রণয়ের দেবতা কিউপিড বা কামদেব মানব মানবীর হৃদয়ে জাগিয়ে দেয় প্রেম। কামধনু থেকে তিনি যে কোন একটি পুষ্পশর (তীর) ছুঁড়ে দেন। এ থেকে কারও মুক্তি নেই। প্রণয়ের দেবতার এই পুষ্পশর আমের বনেই ফুটেছে। অসময়ে আ¤্রমঞ্জরি আগমনের সঙ্গেই টুনটুনি, কোয়েল, বউ কথা কও, সোনা বউ, ঘুঘু ও অনেক পাখি ডালে বসছে। ঋতু ভুলে গিয়ে ফাগুনের ডাক এখনই দিচ্ছে। পুষ্পশরের এমন মধুময়তা বাতাসে ছড়িয়ে নতুন বারতা দিচ্ছে। এই বারতা আগাম পেয়ে যাচ্ছে ফাগুন। এই সময়ে দুপুরের বাতাসকে এখনই মনে হচ্ছে ফাগুনের দিন। বসন্তের দিনগুলোও কি আগেই এসে যাবে! তাই মনে হচ্ছে। সাধারণত অগ্রহায়ণের মধ্যভাগে শীত অনুভূত হয় বেশ ভালভাবেই। এবার অগ্রহায়ণের শেষ প্রান্তে বগুড়ায় খুব একটা শীত নেই। সন্ধ্যার পরও গায়ে শীতের কাপড় চড়াতে হয় না। বাঙালীর ঐতিহ্যের সংস্কৃতি ফাগুনের দিন যা মানব জীবনের বসন্ত বেলা কতই না মধুময়তা এনে দেয়। যে আ¤্রমঞ্জরি ফাগুনের দুই মাস আগে এসেছে এই আ¤্রমঞ্জরি বসন্তে অনেক ফুলের মধ্যে হয়তো ঢেকেই থাকবে। কে আর মনে রাখবে। আ¤্রমঞ্জরি ফাল্গুনের শেষে বৃক্ষে এনে দেবে বোল। ওই সময় পরিচর্যা দরকার। আমে গাছ ভরে গেলে আম এতটাই নিচে আসে যে বাঁশ দিয়ে ঠেকা দিতে হয়। কথায় আছে, ফলবান বৃক্ষ ফলভারে নত হয়। এবারের আ¤্রমঞ্জরি কি তেমনই জানান দিয়ে বলছে, জাতীয় গাছ এবার ফলভারে ন্যুয়ে যাবে। উল্লেখ্য দেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল ও জাতীয় বৃক্ষ (গাছ) আম। এদিকে রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষীরা তো মুকুল দেখে মহাখুশি। বলছেন, ঘন কুয়াশা, শিলা বৃষ্টি ও খরা না হলে এই মুকুলে ভাল আম ধরবে। বছর সাতেক হয় উত্তরাঞ্চলে আম বাগানের বিস্তৃতি ঘটেছে। নওগাঁর নিয়ামতপুর, মহাদেবপুর, পতœীতলা, পোরশা উপজেলা আমের নতুন এলাকা। নওগাঁর আমও সুস্বাদের হয়েছে। গেল ক’বছরে রংপুর অঞ্চলের প্রচুর ফলছে হাঁড়িভাঙ্গা নামের এক আম। এই আমের আলাদা স্বাদের মিষ্টতা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দিনাজপুরও আম উৎপাদনের বড় অঞ্চল। ষাটের দশকে বগুড়াও ছিল আমের বড় এলাকা। বগুড়ার নবাববাড়ির নবাব পরিবারের আমের বড় বাগান ছিল শহরতলীর ফুলবাড়ি ও কাহালু এলাকায়। তা হারিয়ে গেছে। দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই আম গাছ আছে। একেক অঞ্চলের আমের স্বাদ একেক রকম। এর মধ্যে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের আমের স্বাদ সবচেয়ে ভাল, মিষ্টিমধুর। যা মুখে লেগে থাকে। সেখানে অনেক জাতের আম ফলে। সময়ের আগে এবারের আমের মুকুলের আগমনে আশা করা যায় নতুন বছরটি ভালই কাটবে। বাঙালীর আম বলে কথা!
×