ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভুয়া ওয়েবসাইট ফেসবুক ইউটিউবে সাইবার যুদ্ধ অশুভ শক্তির

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

ভুয়া ওয়েবসাইট ফেসবুক ইউটিউবে সাইবার যুদ্ধ অশুভ শক্তির

শংকর কুমার দে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্র করে ‘ভুয়া ওয়েবসাইট, ফেসবুক এ্যাকাউন্ট ও ইউটিউব চ্যানেল’ খুলে অপপ্রচার গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানোর মাধ্যমে সাইবার যুদ্ধ শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াতের মদদপুষ্ট অশুভ শক্তি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানোর ষড়যন্ত্র করছে জামায়াত-শিবির। তাদের সহায়তা করছে বিএনপির মধ্যে থাকা উগ্রপন্থীরা। নির্বাচন বানচাল করতে নানামুখী ষড়যন্ত্রের মধ্যে গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানোর জন্য ভুয়া ওয়েবসাইড খুলছে জামায়াত-শিবির। গুজব ও ভুয়া খবর ছড়ানোর দায়ে কয়েকদিন আগে ছাত্র শিবিরের দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে কামাল হোসেন (২৩) ও গাজীপুরের টঙ্গী থেকে মোঃ আল আমিনকে (৩০) গ্রেফতার করে র‌্যাব-২। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আল আমিন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিএসই (কম্পিউটার সাইন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) ছাত্র। কামাল কুমিল্লা নওয়াব ফয়েজুন্নেছা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিবিএ (ব্যবস্থাপনা বিভাগ) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অনলাইনে ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেশে-বিদেশে সরকারের সুনাম ক্ষুণœœ করার চেষ্টা করছিল। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার আদলে নকল অন্তত ২২টি ওয়েবসাইট নকল করে দেশ-বিদেশে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রচার করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ করার চেষ্টা করছিল তারা। ওয়েবসাইট চালিয়ে পাওয়া অর্থের একটি বড় অংশ ছাত্র শিবিরের ফান্ডে দিত। নকল এতটাই সুক্ষভাবে করা হতো যে, কারও বোঝার কোন উপায় নেই। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার হুবহু কপি তৈরি করে ডোমেইন নিত। সেখানে এমন সব ভুয়া খবর দেয়া হতো, যাতে ‘বিএনপি, জামায়াত বা সরকারবিরোধী সমর্থকরা’ বেশি লাইক শেয়ার দেয়। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন প্রচার ও ভুয়া সংবাদ প্রচারের আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেছেন, নির্বাচনী সহিংসতা ঠেকানোর পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়া গুজবের সঠিক তথ্য মিডিয়া কর্মীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য মিডিয়া সেল গঠন করা হচ্ছে। রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ‘জাতীয় নির্বাচন : গুজব সহিংসতা প্রতিরোধে সম্প্রচার মাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ তথ্য জানান তিনি। তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে সহিংসতা তৈরির একটি আশঙ্কা আছে। সেই আশঙ্কা থেকে প্রতিটি জেলা উপজেলাতে আলাদা মিডিয়া সেল গঠন করা হবে। যে কোন তথ্যের সত্যতা যাচাই করে প্রকৃত ঘটনা গণমাধ্যমকর্মীদের জানাবে। নির্বাচনের সময়ে সাইবার ক্রাইম হুমকি বলেও আরেক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রবিরোধী গুজব ছড়ানোর অভিযোগে খালিদ বিন আহমেদ (৩০) ও মোঃ হিজবুল্লাহ (২১) নামের দু’জনকে গ্রেফতার করেছে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে খালিদ বিন আহমেদ অনলাইন ইউটিউব চ্যানেল ‘এসকে টিভি’র এ্যাডমিন বলে জানা গেছে। র‌্যাব-১ এর একটি ইউনিট রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টর থেকে শনিবার তাদের গ্রেফতার করে। সেখান থেকে ২টি মনিটর, ১টি সিপিইউ, ১টি ট্যাব এবং দুইটি ভয়েস রেকর্ডারও জব্দ করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃত খালিদকে ছাত্রশিবিরের কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেন। তার বাবা নূর আহম্মেদও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জিজ্ঞাসাবাদে খালিদ জানায়, ২০১৬ সালে তার ভাই গোলাম মাওলা নাহিদকে সঙ্গে নিয়ে এসকে টিভি নামে একটি চ্যানেল চালু করেন। তখন থেকে খালিদ তার চ্যানেল থেকে উস্কানিমূলক ভিডিও আপলোড করেছে, আর তাকে এই কাজে সহযোগিতা করত হিজবুল্লাহ। এর মধ্যে খালিদ ভিডিওগুলোতে কণ্ঠ প্রদান করত এবং হিজবুল্লাহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে বিতর্কিত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে আপলোড করত। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করা ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা সাবেক উপসচিব নেয়ামত উল্লাহকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে অভিযোগের সত্যতা মেলায় ধানমন্ডির বাসা থেকে তাকে আটক করা হয় তাকে। ধানমন্ডি থানায় আইসিটি আইনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে সাবেক উপসচিব নিয়ামত উল্লাহ বিরুদ্ধে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকার অভিযোগে সাবেক উপসচিব ড. নিয়ামত উল্লাহ ভূইয়াকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে আটক করেছেন র‌্যাব। জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্র বিরোধী বিভিন্ন প্রপাগা-া ছড়াচ্ছেন, আর সে কারণেই সাবেক উপসচিব নিয়ামত উল্লাহকে আটক করা হয়। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা সংস্থার পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কলকাঠি নাড়াচ্ছে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে বিশ দলীয় জোটের যে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে পর্দার অন্তরাল থেকে তার মদদ দিয়েছে ওই গোয়েন্দা সংস্থাটিই। গোয়েন্দা সংস্থাটির পরামর্শে লন্ডনে বসে এটা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান। পাকিস্তান চায়, ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপির নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় জামায়াতে ইসলামকে। দুবাই থেকে কলকাঠি নাড়াচ্ছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাটি। এর প্রমাণ হিসেবে উদাহরণ তুলে ধরে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপির স্থায়ী কমটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে আইএসআইয়ের এক কর্মকর্তার কথোপকথনের অডিও ফাঁসের সূত্র ধরে তদন্ত ও অনুসন্ধান শুরু করে ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নিজেদের মনোভাবাপন্ন ও সমর্থক দল বিএনপির নেতৃত্বে জামায়াতকে ক্ষমতায় আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে আইএসআই। দুবাই থেকে কলকাঠি নেড়ে আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের পাঁয়তারা করছে তারা। পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স আইএসআই বাংলাদেশের রাজনীতিতে বরাবারই যে প্রভাব বিস্তারের অপতৎপরতা চালাচ্ছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তা আবারও ফাঁস হয়েছে বলে ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
×