ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজ শুভ বড়দিন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

আজ শুভ বড়দিন

নিখিল মানখিন ॥ আজ ২৫ ডিসেম্বর, শুভ বড়দিন (ক্রিসমাস)। খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। আজ থেকে ২ হাজারেরও বেশি বছর আগে এই শুভদিনে পৃথিবীকে আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট। বেথেলহামের এক গোয়ালঘরে কুমারী মাতা মেরির কোলে জন্ম নেন যিশু। খ্রিস্ট ধর্মানুসারীরা বিশ্বাস করেন, কোন পুরুষের সঙ্গম ছাড়াই যিশুখ্রিস্টের জন্ম, সেই অর্থে তিনি ঈশ্বরের পুত্র। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় সেখান হতেই বিকশিত হয় মুক্তির এই আলোকদিশারী। যার স্পর্শে পাপের আবর্তে নিমজ্জিত সে সময়ের মানুষের অন্তরে এনে দেয় শান্তির পরশ। এদিকে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। এ বছর ভিন্ন একটি পরিবেশে পালিত হবে বড়দিন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বড়দিনের আনন্দমুখর পরিবেশে মুখর দেশ। দেশবাসীকে বড়দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও ও মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও উৎসবমুখর পরিবেশে দিনটি উদযাপনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে খ্রীস্টান সম্প্রদায়। ইতোমধ্যে বড়দিন পালনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ উপলক্ষে দেশের সব গির্জা ও বড় হোটেল রংবেরঙের বিজলিবাতি আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। খ্রীস্টান ধর্মে বিশ্বাসীদের অনেকের ঘরেই বসানো হয়েছে প্রতীকী গোশালা। বেথেলহামের গরিব কাঠুরিয়ার গোয়ালঘরেই যিশুখ্রিস্টের জন্ম। সেই ঘটনা স্মরণ করে বাড়িতে ধর্মীয় আবহ সৃষ্টি করতেই এটি করেন যিশুর অনুসারীরা। বড়দিনের কেনাকাটা অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার রাতে প্রার্থনাসভার মধ্য দিয়ে বড়দিন উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। রাতে প্রার্থনার বিশেষ মাহাত্ম্য হচ্ছে, পৃথিবীতে যিশুর আগমন উপলব্ধি। কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালে রাতে প্রধান প্রার্থনাসভার আয়োজন করা হয়। বড়দিন উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশনে ও বেসরকারী টিভি চ্যানেলসমূহে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হচ্ছে। দিনটি সরকারী ছুটির দিন। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অনুসারীরা আজ মঙ্গলবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে দেশের খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই রাজধানীসহ খ্রিস্টানঅধ্যুষিত এলাকাগুলোয় বড়দিনের আমেজ শুরু হয়েছে। সোমবারই সম্পন্ন হয়েছে উৎসব পালনের সঠিক প্রস্তুতি। রাজধানীর বিভিন্ন খ্রিস্টান অধ্যুষিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গির্জা ও বাসাবাড়ি বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে। ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা তৈরি করেছেন যিশুর জন্মদিনের গোয়ালঘর। প্রটেস্ট্যান্টদের স্থাপনাগুলোয় শোভা পাচ্ছে যিশুর আগমনী তারকা। এসব এলাকায় সোমবার বিকেল থেকেই শুরু হয় প্রার্থনা সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সোমবার রাতভর অনুষ্ঠান চলার পর আজ মঙ্গলবার সকালে প্রতিটি গির্জায় অনুষ্ঠিত হবে এক থেকে দুটি বিশেষ খ্রিস্টযোগ। এ উপলক্ষে রমনার আর্চবিশপ হাউস সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালকে বিশেষ সাজে সাজানো হয়েছে। এছাড়াও রমনা সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রাল, তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জা, মিরপুর বাপ্টিস্ট চার্চসহ রাজধানীর বিভিন্ন গির্জায় বিশেষ খ্রিস্টযোগ হবে। এ জন্য গির্জার প্রবেশপথে সাজানো হয়েছে ক্রশ, শুভেচ্ছা কার্ডসহ উপহারসামগ্রী বিক্রির দোকান। বড়দিন উপলক্ষে বিভিন্ন হোটেলে বিশেষ আয়োজন রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, র‌্যাডিসন ওয়াটার গার্ডেনসহ অন্যান্য হোটেলে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বড়দিনে এসব হোটেলে শিশুদের জন্য থাকবে ক্রিসমাস কিডস্ পার্টিসহ নানা ধরনের খেলার আয়োজন। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি ও আলোকসজ্জায়। সেখানে শিশুদের জন্য বিভিন্ন খেলার প্রতিযোগিতা, ফ্যাশন শো, জাদু প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ কেক ও কুকিজের ব্যবস্থা করেছে সোনারগাঁও হোটেল। র‌্যাডিসন ওয়াটার গার্ডেনের লবিতে স্থাপন করা হয়েছে বিশাল আকৃতির ক্রিসমাস ট্রি। হোটেলের চারটি রেস্তরাঁয় আয়োজন করা হয়েছে ক্রিসমাস স্পেশাল পুডিং, কেকসহ নানা মুখরোচক খাবার। সঙ্গে থাকবে সান্তা ক্লজ ও ফ্লেকস। বড়দিন উপলক্ষে ওয়েস্টিন ঢাকা হোটেলকে আকর্ষণীয় রূপে সাজানো হয়েছে। শিশুদের জন্য তারা বিশেষ কিডস্ পার্টিসহ নানা ধরনের প্রতিযোগিতা ও খেলার আয়োজন করেছে। তেজগাঁওয়ে পবিত্র জপমালা রাণী চার্চের প্রধান ধর্মযাজক ফাদার কমল কোড়াইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, গোটা বিশ্বের খ্রিস্টবিশ্বাসীরা দিবসটি মহাজাঁকজমকপূর্ণ প্রার্থনা ও নানা উৎসবের মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করে থাকে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রায় ছয় লক্ষাধিক খ্রিস্ট বিশ্বাসী বর্তমানে বাংলাদেশে বসবাস করছে। সম্প্রীতির এ দেশে বড় দিনও সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। খ্রীস্টান-মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ সবাই এ আনন্দ উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। সরকারী ছুটির দিন। বছরও শেষ। ছেলে-মেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। ফলও অনেকের হাতে পেয়ে যায়। ঘরে উঠেছে নবান্নের ধান। শাক-সবজি এ সময় প্রচুর পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে সময়টি আনন্দ-উৎসবের উপযুক্ত সময়ই বটে। সুস্বাদু নানা খাবারের মধ্যে পিঠাই প্রাধান্য পায় বেশি। যেভাবেই বড়দিন উদযাপন করা হোক না কেন, বড়দিন কিন্তু দিন হিসেবে বড় নয়, তবে গুরুত্বের দিক দিয়ে বড়। যিশু খ্রিস্টের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর মানুষ হলেন যাতে মানুষ পাপমুক্ত হয়ে ঈশ্বরের কাছে ফিরে যেতে পারেন। বিশ্বে যেন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি নেমে আসুক; সুন্দর সাদা মনের সব ধর্মের সকল মানুষ বিশ্বে শান্তি স্থাপনে সাধ্যমত অবদান রাখুন-বড়দিনে এ প্রত্যাশা, এ প্রার্থনা করি।
×