ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টাকা বিলিয়ে ভোট কেনার পাশাপাশি পরিকল্পিত সন্ত্রাসের পথে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

টাকা বিলিয়ে ভোট কেনার পাশাপাশি পরিকল্পিত সন্ত্রাসের পথে বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোটের মাঠে নতুন কৌশলে নেমেছে বিএনপি। টাকা দিয়ে ভোট কেনার পাশাপাশি নির্বাচনের ঠিক আগে পরিকল্পিত সন্ত্রাস সৃষ্টি করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চায় দলটি। বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, এতে সাধারণ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয় পেলে সুফল পাবে বিএনপি। টাকা দিয়ে কেনা ভোটের ওপর নজরদারির চিন্তাও করছে দলটি। সম্প্রতি কয়েকটি জেলার ডিসিকে পরিবারসহ হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। ভোটে নিরপেক্ষ থাকার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে তিন দিনের মধ্যে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। আর প্রমাণে ব্যর্থ হলে হত্যা করা হবে। প্রত্যেকটি চিঠির ভাষাও একই। অর্থাৎ একই ব্যক্তি বা পক্ষ এই চিঠি দিয়ে ভীতি তৈরির চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা পুলিশ কর্মকর্তাদের হত্যার চক্রান্ত করছে। এসব কিছুই পরিকল্পিত সন্ত্রাসের আভাস দিচ্ছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে রয়েছে সন্ত্রাসী সংগঠন জামায়াত। এর আগে ’১৪ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সারাদেশে পেট্রোলবোমায় শত শত মানুষকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে জামায়াত-বিএনপি। এ ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের পর পর নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে দলটি। পরিকল্পিত সন্ত্রাস চালিয়ে দলটি নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করে। মানুষ আশা করেছিল এ ধরনের একটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে এবার দূরে থাকবে বিএনপি। কিন্তু দূরে থাকার বদলে নিজেদের প্রতীক ধানের শীষই দেয়া হয়েছে তাদের। অন্যদিকে রাস্তায় মিছিল-পোস্টার বা কোন নির্বাচনী অফিস না থাকলেও গোপন প্রচারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুই-একজন করে ভোট চাইছে দলের নেতাকর্মীরা। ভোট চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিম্নআয়ের ভোটারদের মধ্যে টাকাও বিলি করছে বিএনপির কর্মীরা। রবিবার তাদের দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করলে তারা প্রভাবশালী বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের কর্মী বলে স্বীকার করেছে। নির্বাচনী প্রচারে ভোটারপ্রতি ১০ টাকা খরচের বিধান রেখেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সর্বোচ্চ এই খরচ কোন ক্রমেই ২৫ লাখের বেশি হতে পারবে না। অর্থাৎ কোন আসনে দুই লাখ ভোটার হলে ২০ লাখ টাকা খরচ করতে পারবে প্রতি প্রার্থী। তবে কোন আসনে ভোটার যাই হোক না কেন কোনক্রমেই ২৫ লাখ টাকার বেশি কোন প্রার্থী খরচ করতে পারবেন না। রবিবার বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের যে কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে চার লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকা-৮ আসনে বিএনপি প্রার্থী মির্জা আব্বাসের এই দুই কর্মী শহীদুল ইসলাম ও মুহিত স্বীকারও করেছেন তারা নির্বাচনী প্রচারেই এই টাকা বিলি করছিল। এর আগেও গোপনে গোপনে বিএনপি নেতাকর্মীর প্রচারের বিষয়টি উঠে এসেছে। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে লিফলেট নিয়ে ওরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের বোঝাচ্ছে, টাকা ঢালছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের এডিসি আতিকুল ইসলাম বলেন, মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের তথ্য জেনে ওঁৎ পেতে থাকা ডিবি সদস্যরা সকালে তাদের আটক করে। তারা রাজারবাগে বারাকাহ মেডিক্যাল কলেজের সামনে টাকা বিলি করছিল। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিজেদের ঢাকা-৮ আসনে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের কর্মী বলে স্বীকার করেছে। তারা এটাও স্বীকার করেছে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ছোট ভাই মির্জা খোকন মালয়েশিয়া থেকে তাদের এই টাকা পাঠিয়েছেন। ঢাকার সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাসের ছোট ভাই খোকন এক সময় অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ছিলেন। ঢাকা-৮ আসনে মির্জা আব্বাস নৌকার প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বিপরীতে লড়ছেন। তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসও পাশের আসনে ধানের শীষ প্রতীকে আওয়ামী লীগের সাবের চৌধুরীর সঙ্গে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল সম্প্রতি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন ‘আর তো মাত্র কয়েকটা দিন ক্ষমতায় আছেন।’ ভোটের মাঠে বিএনপি না থাকলেও জোটের শীর্ষ নেতার এ ধরনের মন্তব্যে বিএনপির ক্ষমতায় আসার বিষয়ে আশাবাদী মনোভাবই প্রকাশ পায়। অনেকই বলেছেন, ভোটের মাঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের সেভাবে দেখা না গেলেও গোপন তৎপরতায় তারা মনে করছেন এবার তারাই সরকার গঠন করবে। এজন্যই টাকা ছিটিয়ে ভোট কেনার পাশাপাশি পরিকল্পিত সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চায় তারা।
×