ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাস থেকে বিএনপি, জামায়াত-শিবির এগুলো পরিচালনা করে

গুজব ছড়ানো ফেসবুক এ্যাকাউন্ট ১১২, শনাক্ত ৬০ ব্যক্তি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

গুজব ছড়ানো ফেসবুক এ্যাকাউন্ট ১১২, শনাক্ত ৬০ ব্যক্তি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বিদেশ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে সরকার ও নির্বাচনকেন্দ্রিক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত ১১২ এ্যাকাউন্ট শনাক্ত হয়েছে। এ্যাকাউন্টগুলোর অধিকাংশই পরিচালিত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, লিবিয়া, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরব থেকে। এসব দেশে বসবাসরত বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের অন্তত ৬০ ব্যক্তি এ্যাকাউন্টগুলোর মাধ্যমে সরকার ও নির্বাচনকেন্দ্রিক গুজব ছড়ানোর কাজটি করছে। পুরো প্রক্রিয়াটির নেপথ্যে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ১৪ ব্যক্তি। এমন ঘটনায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৬০ জনকে। আসামিরা যেসব দেশে বসবাস করছেন, ওইসব দেশের দূতাবাসগুলোতে তাদের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে তাদের গ্রেফতার করে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে অনুরোধ করা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার ও সিআইডির মুখপাত্র মোল্যা নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সরকার ও নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা ও গুজব ছড়ানোর ঘটনা ঘটছে। যা নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সরকার ও স্বাধীনতাবিরোধী কিছু ব্যক্তি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এমন কাজ করছে। এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে। এমন ১১২ ফেসবুক এ্যাকাউন্ট শনাক্ত করা হয়েছে। চিহ্নিত হওয়া এসব এ্যাকাউন্ট থেকে ধারাবাহিকভাবে গুজব ছড়ানোর কাজ চলে আসছে। এ্যাকাউন্টগুলো সম্পর্কে তদন্ত চলছে। তদন্তে জানা গেছে, এসব এ্যাকাউন্ট পরিচালিত হচ্ছে বিদেশ থেকে। যার মধ্যে অধিকাংশ এ্যাকাউন্ট পরিচালিত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। যেসব দেশ থেকে ওইসব এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, সেসব দেশে প্রচুর বাঙালী বসবাস করেন। অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, লিবিয়া ও সৌদি আবর থেকে বেশি ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খুলে সরকার ও নির্বাচনকেন্দ্রিক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এসব ঘটনায় সিআইডির তরফ থেকে পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৬০ জনকে। যারা এ্যাকাউন্টগুলো পরিচালনা করছেন। ওই ৬০ জন যেসব দেশে বসবাস করছেন, ওইসব দেশের সরকারের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছেন। ইতোমধ্যেই ওইসব দেশে আসামিদের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে দূতাবাসগুলোতে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে তাদের কর্মকা-ের সারাংশ জানানো হয়েছে। ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে তাদের গ্রেফতার করে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার কথা বলা হয়েছে। পুরো একই চক্রটি পরিচালনা করছেন ১৪ জনের একটি গ্রুপ। তারা বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ফেসবুকের মতো একটি প্রযুক্তি নির্ভর মাধ্যমে কিভাবে ভুয়া এ্যাকাউন্ট খোলা হয়, তা নিয়েও তদন্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে ফেসবুকের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। এমনকি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কিভাবে বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, তারও তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত তদন্তে ফেসবুক বেআইনীভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে তথ্য মিলেছে। বিদেশে ফেসবুকের সঙ্গে সরকারবিরোধী কোন কোন ব্যক্তি যোগসাজশ করে গুজব ছড়ানোর সঙ্গেও জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ফেসবুকে গুজব এবং অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে মানিলন্ডারিং ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তদন্ত হচ্ছে। বিশেষ পুুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম আরও জানান, ফেসবুকে নির্বাচনকেন্দ্রিক গুজব ছড়ানোর বিষয়টি সিআইডির একটি বিশেষ সেল মনিটরিং করছে। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জনকণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের ওয়েবসাইট হুবহু নকল বানিয়ে ও ফেসবুকে ভুয়া এ্যাকাউন্ট খুলে গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তারা ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, সরকার, রাষ্ট্র ও নির্বাচনকেন্দ্রিক গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। যেসব এ্যাকাউন্ট থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, ওইসব এ্যাকাউন্টের মালিকদের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। ডিবি পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে যাচ্ছে। তবে অধিকাংশ এ্যাকাউন্টই ভুয়া।
×