ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কামরাঙ্গীরচরের বিশাল নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা

দারিদ্র্য থাকবে না

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

দারিদ্র্য থাকবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের বিশাল নির্বাচনী জনসভায় দাঁড়িয়ে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বার্থে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, আমরা সার্বিকভাবে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। ১০ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে এবং আগামীর উন্নয়নের জন্য যে মহাপরিকল্পনা রয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা রাখা একান্ত প্রয়োজন। তাই আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটকে ভোট দিয়ে সরকারের ধারাবাহিকতা রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সোমবার কামরাঙ্গীরচর হাসপাতাল মাঠে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে আরও বলেন, বিগত দিনে বিএনপি-জামায়াত জোট জনগণকে কিছু দিতে পারেনি। তারা শুধু নিতে পারে। আর আওয়ামী লীগ শুধু দিতে জানে। যদি আমরা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসতে পারি, এদেশে দারিদ্র্য থাকবে না। আমার রাজনীতির লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য কিছুই করিনি; মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সব করেছি। দুবার ক্ষমতায় থাকার কারণে মানুষের জীবনমান ক্রমান্বয়ে উন্নত হচ্ছে। উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে। তাই দেশের স্বার্থে আওয়ামী লীগের ফের ক্ষমতায় আসা দরকার। বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থ পাচার ছাড়া কিছুই করতে পারেনি। তারা মানুষকে কিছু দিতে পারে না, শুধু নিতে পারে। পানি, বিদ্যুত সঙ্কটসহ নানা অনিয়মের কারণে বিএনপি আমলে তাদের সংসদ সদস্যরা জনগণের ধাওয়া খেয়ে পালাত। বিদ্যুতের লোডশেডিংই বেশি থাকত। তখন তো বিদ্যুতই ছিল না। রাস্তাঘাট, পয়ঃনিষ্কাশনের করুণ অবস্থা ছিল, একটা অসনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা সেই অবস্থা থেকে রাজধানীকে মুক্ত করে সবক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া দিয়েছি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজধানীতে এটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর শেষ নির্বাচনী জনসভা। ব্যাপক জনসমাগমে জনসভাটি রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বেলা ১১টায় জনসভার সময় নির্ধারণ ছিল। কিন্তু সকাল ৭ থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ জনসভাস্থলে আসতে থাকেন। সকাল ১০টা মধ্যে জনসভা এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। উৎসবমুখর পরিবেশে ব্যান্ডের বাদ্যের তালে তালে অনেকে জনসভায় যোগ দেন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় জনসভাস্থলের আশপাশের দুই কিলোমিটার এলাকায় মানুষের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রী জনসভাস্থলে পৌঁছলে উৎফুল্ল লাখো জনতা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ এবং দলীয় প্রতীক নোর্কা মার্কার সেøাগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তোলেন। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে উঠে হাত নেড়ে সমবেত জনতাকে শুভেচ্ছা জানান। তখন জনতা তুমুল করতালি দিয়ে তাকে অভিবাদন জানান। ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে কোন ধরনের ভুল না করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশেকে ঘিরে আমরা উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা নিয়েছি। বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের মহাসড়কে, এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। তাই আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করব, ভোট প্রদানে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবেন না। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে জনগণের কল্যাণে কিছু করতে পারেনি। কিন্তু নিজেরা অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে, বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। সেই অর্থ পাচার করতে গিয়ে ধরাও খেয়েছে। তারা এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যা করেছে। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ঢাকার লালবাগে গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে তারা সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাট ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতের সংগঠন। আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ করে। ঢাকায় মেট্রোরেলের নির্মাণ চলার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যত কর্মসূচী হলো ঢাকায় আমরা পাতাল রেল নির্মাণ করব। যার সমীক্ষার কাজ ইতোমধ্যে আমরা করেছি। ঢাকাকে ঘিরে ভবিষ্যতের পরিকল্পনাও তুলে ধরে তিনি বলেন, ঢাকা শহর ঘিরে আমরা একটা রিং রোড তৈরি করব, যা হবে সম্পূর্ণ এলিভেটেড। এতে দ্রুতগামী সকল যানবাহন চলতে পারে। ঢাকা শহর ঘিরে পাঁচটি নদীর নাব্য ফেরাতে খনন করা হবে এবং নদীগুলোর সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা হবে। ঢাকার সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি হবে, নৌপথ চালু হবে, যানজটমুক্ত হবে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপী আমাদের পরিকল্পনা তো আছেই। এই ঢাকায় ১১টি সরকারী স্কুল ও কলেজ তৈরি করে দিচ্ছি। যাতে আমাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সুযোগ আরও সৃষ্টি হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নতুন ভবন করে আরও উন্নত করতে মহাপরিকল্পনা নেয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এর ডিজাইনও আমি দেখে রেখেছি। আগামীবার ক্ষমতায় এলে এই হাসপাতালকে নতুন আঙ্গিকে আধুনিকভাবে সাজাব। ঢাকা ঘিরে যে যে অঞ্চলে চিকিৎসা কেন্দ্র নেই, সেখানে আমরা হাসপাতাল তৈরি করে দিচ্ছি। বস্তিবাসীদের জন্য বহুতল ফ্ল্যাট নির্মাণেরও ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে কামরাঙ্গীরচরেই হবে ১০ হাজার। এসব ফ্ল্যাটে বস্তিবাসীরা দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভাড়া দিয়ে থাকতে পারবে। কেবল বড়লোকরা ফ্ল্যাটে থাকবে, এটা আমি চাই না। আমি চাই না বস্তিতে কেউ মানবেতন জীবনযাপন করুক। কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেয়ার কথা তুলে ধরে কামরাঙ্গীরচরে আরবী বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যদি আমরা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসতে পারি, এদেশে দারিদ্র্য থাকবে না। সুপেয় পানি ও বিদ্যুতের অভাব দূর করার চেষ্টার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই পানির অভাবের কারণে বিএনপির এমপিরা রুদ্ররোষে পড়েছিল। জনগণের ধাওয়া খেয়েছিল। প্রতিটি এলাকায় জলাধার থাকার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি কামরাঙ্গীরচরের খাল উদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন। তিনি বলেন, ভূমিখেকোরা ইতোমধ্যে এখানে অনেক অংশ দখল করে নিয়েছে। আজকে যারা খাল দখল করতে যাচ্ছে তাদের বলব এই দখল করা বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে নির্দেশ দেন তিনি। জনসভায় ঢাকা-২ আসনের দলের প্রার্থী খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা-৪ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির (জাপা) সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬ আসনে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, ঢাকা-৭ আসনে নৌকার প্রার্থী হাজি মোহাম্মদ সেলিম, ঢাকা-৮ আসনে রাশেদ খান মেনন, ঢাকা-৯ আসনের সাবের হোসেন চৌধুরীকে পরিচয় করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকা-৬ আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশীদকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যদিও ছাত্রলীগ করেছিলেন, এখন করেন জাতীয় পার্টি (জাপা)। কোন অসুবিধা নেই, ভবিষ্যতে আমরা লাঙ্গল নৌকায় তুলে নেব। তবে এখন লাঙ্গল মার্কায় ঢাকা-৬ আসনে কাজী ফিরোজ রশীদের জন্য আমরা ভোট চাচ্ছি। ঢাকা-৪ আসনের জাতীয় পার্টির (জাপা) সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু আমাদের মহাজোটে প্রার্থী, তাই সেখানে নৌকার প্রার্থী দেইনি, তাই লাঙ্গল মার্কাকে মহাজোটের মার্কা হিসেবে বাবলাকে ভোট দেয়ার অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, ঢাকা-৭ আসনের হাজী সেলিম জনপ্রিয় একজন নেতা। যদিও অসুস্থ, তারপর আমরা তাকে মনোনয়ন দিয়েছি। আমরা চাই জনগণের সেবা সব সময় তিনি করে যান। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশেনের মেয়র সাইদ খোকন, সংসদ সদস্য প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী, আবু হোসেন বাবলা, কাজী ফিরোজ রশিদ, হাজি মোহাম্মদ সেলিম, হাবিবুর রহমান মোল্লা, যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, যুব মহিলা লীগ সভাপতি নাজমা আক্তার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা মোঃ আবু কাওসার, যুবলীগ ঢাকা মহনগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট, ছাত্রলীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ বক্তব্য রাখেন। সভা পরিচালনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও প্রচার সম্পাদক আকতার হোসেন।
×