ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিরিজ হার দিয়ে বছর শেষ করল টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮

সিরিজ হার দিয়ে বছর শেষ করল টাইগাররা

মিথুন আশরাফ ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট, ওয়ানডে সিরিজ জিতলেও টি২০ সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। সিরিজ হার দিয়েই বছর শেষ করল বাংলাদেশ। বছরের শেষ সিরিজটিই হেরেছে। এরপরও সব ফরমেটেই বছরটিতে বাজিমাত করেছে বাংলাদেশ। তিন ফরমেট মিলিয়ে এ বছর মোট ২১টি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। এ বছর নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৪৪ ম্যাচও খেলেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এ বছর সবচেয়ে বেশি সাফল্য মিলেছে। ২০ ম্যাচের ১৩টি জিতেছে। টেস্ট ম্যাচ জিতেছে তিনটি। টি২০তে ১৬ ম্যাচ খেলে জিতেছে পাঁচটি। শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০তে ৫০ রানে হেরে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হার হয়েছে বাংলাদেশের। ব্যাটিংয়ে এভিন লুইসের (৮৯) ঝড়ের পর বোলিংয়ে পেসার কিমো পলের (৫/১৫) আগ্রাসনের কাছেই কাত হয়েছে বাংলাদেশ। তবে ম্যাচটিতে আম্পায়ারের একটি ‘নো’ বলের সিদ্ধান্তই সব যেন এলোমেলো করে দিয়েছে। লিটন কুমার দাস দ্বিতীয় টি২০’র মতো তৃতীয় টি২০তেও ব্যাটিং ঝড় তুলেন। যখন দলের রান ৫৬, লিটনের রান ৩৩; তখন পেসার ওশানে টমাসের বলে মিডঅফে ক্যাচ আউট হন লিটন। কিন্তু আম্পায়ার তানভির আহমেদ ‘নো’র সিদ্ধান্ত দেন। বোলার দাগের বাইরে পা রেখে বল করেন, এ সিদ্ধান্তে ‘নো’ দেন আম্পায়ার। আসলে ‘নো’ হয়নি। সাইড স্ক্রিনে তা দেখা গেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটাররা যখন বুঝতে পারেন তখন আউট হওয়ার দাবি তুলেন। ‘রিভিউ’য়ের দাবি তোলেন। তাতেই বাধে ঝামেলা। তর্ক-বিতর্ক চলে। আম্পায়ার-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটার-থার্ড আম্পায়ার-ম্যাচ রেফারিও এ তর্ক-বিতর্ক-আলোচনায় যোগ হন। শেষ পর্যন্ত আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্ত বলে গণ্য হয়। অনেক নাটকীয়তার পর আবার খেলা শুরু হয়। তবে খেলায় ছন্দপতন ঘটে যায়। ৮ মিনিটের বিরতিই ছন্দপতন ঘটিয়ে দেয়। সেই ছন্দপতনেই কাত হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ স্টিভ রোডস তাই বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘ওই বিরতি ম্যাচটা বদলে দিয়েছিল কি না? হ্যাঁ অবশ্যই। যদি আপনি ম্যাচ দেখেন ওরা উড়ন্ত সূচনা পেয়েছিল, মোমেন্টাম ওদের পক্ষে ছিল। এরপর আমরা দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসি। আমাদের ইনিংস শুরুর সময় মোমেন্টাম আমাদের পক্ষে ছিল। এরপর ম্যাচের মাঝে খেলা বন্ধ হওয়ায় মোমেন্টাম ওদের পক্ষে চলে যায়।’ সঙ্গে এও জানান, ‘ওই ঘটনার পর থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খেলেছে। আমি ছেলেদের ড্রেসিং রুমে শান্ত রাখার চেষ্টায় ছিলাম। ওদের বলতে চেয়েছি, ‘দেখ আমরা এখন ভাল অবস্থানে আছি। তোমরা সতর্ক থাক এবং যখন খেলা শুরু হবে তখন মনোযোগ ধরে রেখ।’ কারণ এমন অবস্থায় ম্যাচের মোড় ঘুরে যেতে পারে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বার্তা দেয়ার পরও সেটা কাজে আসেনি। কারণ এমন অবস্থায় সবসময় মাথা ঠা া রাখা কঠিন। এটাই আমাদের হয়েছে, আমরা ধারাবাহিকভাবে উইকেট হারিয়েছি।’ হারের জন্য সেই ‘নো’ বলকে দুষলেও আম্পায়ারের দিকে আঙ্গুল তুলছেন না বাংলাদেশ কোচ। বলেছেন, ‘আমি মনে করি, যারা খেলাটা ভালবাসি, তারা সবাই চাই যেন সবকিছু ভালমতো হয়। কিন্তু কখনও কখনও কিছু জিনিস ঠিকঠাক হয় না। তবে আমি ম্যাচ অফিসিয়ালদের দিকে আঙ্গুল তুলতে চাই না। যদি সবকিছু ঠিকঠাক চলে তাহলে সবারই ভাল।’ আরও জানান, ‘আগেও কিন্তু এরকম ঘটনা হয়েছে। আমি চেষ্টা করেছি, খেলোয়াড়রা যেন এতে বেশি জড়িয়ে না পড়ে। আমি চেষ্টা করেছি ড্রেসিংরুম যেন শান্ত আর নির্ভার থাকে। আর অভিজ্ঞতা বলে এরকম চললে খেলায় মনোযোগ রাখাটা জরুরী। অনেক সময় আবেগ এখানে প্রভাব ফেলতে পারে। সেটা হয়েছে। ওই মুহূর্তটা দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’ দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সেই সুখ না পেলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করেছে মাশরাফিবাহিনী। এবার টি২০ সিরিজও জয়ের অপেক্ষা ছিল। কিন্তু হারল ২-১ ব্যবধানে। প্রথম টি২০তেই হেরে যায় বাংলাদেশ। ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে যায়। তাতে সিরিজ হারের বিপদেই পড়ে যায়। তা থেকে দ্বিতীয় টি২০তে নিজেদের রক্ষা করে। ৩৬ রানে জিতে যায়। সিরিজে আসে ১-১ সমতা। শেষ পর্যন্ত টি২০ সিরিজ হাতছাড়াই হলো। প্রথম টেস্টে ৬৪ রানে জেতার পর দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ১৮৪ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাত্তাই দেয়নি। প্রথমবারের মতো কোন দলকে ইনিংসে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও সহজেই ৫ উইকেটে জিতেছে। মনে করা হয়েছিল, ২০০৯ সালের পর আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে দেবে বাংলাদেশ। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডেটি তাই সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে পরিণত হয়। অঘোষিত ‘ফাইনালে’ রুপ নেয় ম্যাচটি। যে দল জিতবে ওয়ানডে সিরিজের শিরোপা যে তাদেরই হয়ে যাবে। খেলাটি আবার হয় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামে টেস্ট অভিষেক ম্যাচটিতে জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে হেরেছে। তাই শঙ্কাও ছিল। সিলেট স্টেডিয়ামে ওয়ানডে অভিষেকে না আবার একই দশা হয়। যেভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাতে বিপদমুক্ত থাকার উপায় ছিল না। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ তৃতীয় ওয়ানডেতে পাত্তাই পায়নি। ৮ উইকেটে হেরে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে। এ বছর জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেও ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। পাঁচ মাস না যেতেই আবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজে হারাল বাংলাদেশ। কিন্তু টি২০ সিরিজে আর জয় তুলে নেয়া যায়নি। এই সিরিজে জয় না মিললেও বছরটি ভালই কেটেছে বাংলাদেশের। তবে বছরের শেষ টি২০ সিরিজটি হার হয়েছে। সিরিজ হার দিয়ে বছর শেষ করেছে বাংলাদেশ।
×