ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কুষ্টিয়ায় আসল লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষে

প্রকাশিত: ০৮:১১, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮

  কুষ্টিয়ায় আসল লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষে

এমএ রকিব, কুষ্টিয়া ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কুষ্টিয়ায় নৌকার পক্ষে সৃষ্টি হয়েছে গণজোয়ার। এ জোয়ারে তলিয়ে যেতে বসেছে ধানের শীষ। জেলার চারটি আসন পুনরায় দখলে নিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীরাও ভেদাভেদ ভুলে এখন নৌকার প্রার্থীর পক্ষে একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছেন। তারা পাড়া-মহল্লায় গিয়ে নৌকায় ভোট চাইছেন। আর ১০ বছরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের চিত্র সংবলিত লিফলেট বিতরণ করছেন। নৌকার প্রার্থীদের অবিরাম প্রচারে সরগরম হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ঝুলছে প্রার্থীর ছবি সংবলিত ব্যানার পোস্টার। সমানে চলছে মাইকিং। অপরদিকে গ্রেফতার আতঙ্কসহ নানা প্রতিবন্ধকতা ও আইন-আদালত সামাল দিতেই ব্যস্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা এখন পর্যন্ত মাঠেই দাঁড়াতে পারেনি। অনেকটা কোণঠাসা বিএনপি প্রার্থীরা প্রকাশ্যে না পারলেও গোপনে তারা চালাচ্ছে প্রচার। নির্বাচনে জেলার চারটি সংসদীয় আসনে এবার দুই হেভিওয়েট প্রার্থী মহাজোটের শরিক জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফসহ বিভিন্ন দলের ২৪ প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের লাড়াই নৌকা ও ধানের শীষ প্রার্থীর মধ্যেই হবে এমনটি মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে নির্বাচন সামনে রেখে এখন সাজসাজ রব। ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত আসনটিতে ছিল বিএনপির দাপট। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। এখন নৌকার পালে বইছে হাওয়া। সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা বর্তমান এমপি রেজাউল হক চৌধুরী ও সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন আহমেদসহ মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীরা নৌকার প্রার্থী এ্যাডভোকেট আ.ক.ম সরওয়ার জাহান বাদশাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছেন। তারা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত চষে চেড়াচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপির দলীয় প্রার্থী রেজা আহমেদ ওরফে বাচ্চু মোল্লার নির্বাচনী মাঠ এখন এলোমেলো। প্রতীক বরাদ্দর পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি মাঠে নামতে পারেননি। বাচ্চু মোল্লা অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় এখন কারাগারে। ফলে প্রার্থী শূন্য এ আসনে ‘ধানের শীষে’র তেমন প্রচারও নেই। এখানে জাপা (এরশাদ) প্রার্থী শাহরিয়ার জামিল জুয়েল ‘লাঙ্গল’, বিএনএফ প্রার্থী আশরাফুল আলম টেলিভিশন এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মওলানা নাজমুল হুদা ‘হাতপাখা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বদ্বীতা করছেন। কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন হেভিওয়েট প্রার্থী জাসদ সভাপতি এবং ১৪ দল ও মহাজোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি নির্বাচন করছেন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ‘নৌকা’ মার্কা নিয়ে। অনেক আগে থেকেই তিনি মাঠে থাকলেও আনুষ্ঠানিক প্রচারে নেমেছেন প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে। নির্বাচনী প্রচারেও এগিয়ে রয়েছেন হাসানুল হক ইনু। দলীয় সূত্র জানায়, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক প্রতিদিনই স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মিরপুর ও ভেড়ামার উপজেলার তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত চষে বেড়াচ্ছেন। আর গণসংযোগ ও পথসভায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে এবং শান্তি ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ভোটারদের কাছে পুনরায় নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছেন। এদিকে মাঠে নেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী জাতীয় পার্টি-কাজী জফরের আহসান হাবিব লিংকন। তাই দলটির কোন প্রচারও নেই। এই আসনে এনপিপি প্রার্থী মোহাম্মদ সোহাগ আহম্মদ ‘আম’, সাম্যবাদী দলের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বাবলু ‘চাকা’, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী ওয়াহেদুজ্জামান ‘কাস্তে’, মুসলিম লীগ প্রার্থী মারফত আলী মাষ্টার ‘হারিকেন’, ইসলামী আন্দোলনের মোজাম্মেল হক ‘হাতপাখা’ এবং বিএনএফ প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ‘টেলিভিশন’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসন। জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে এ আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনের নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই তিনি মহল্লায় মহল্লায় গনসংযোগ, পথসভা ও সভা-সমাবেশের মধ্যদিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। হানিফের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগসহ তৃণমূল কর্মী বাহিনী। নৌকা প্রতীকের পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকার সর্বত্র। মাইকিং চলছে সমানে। উন্নয়নের ওপর ভর করে আসনটিতে আগে থেকেই নৌকার পালে বইছিল হাওয়া। হানিফ কুষ্টিয়ায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করে ইতোমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন এবং দলীয় নেতাকর্মীসহ স্থানীয়দের কাছে ‘উন্নয়নের রুপকার’ স্বীকৃতি পেয়েছেন। অপরদিকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী ধানের শীষের প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার নানা প্রতিবন্ধকতা ও মামলা-হামলার কারণে নির্বাচনী মাঠেই নামতে পারেননি। তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্টসহ ১৮ নেতাকর্মী বর্তমানে কারাগারে। এ ছাড়া এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের আমিনুল ইসলাম ‘হাতপাখা’, বিএনএফ প্রার্থী আসাদুল হক ‘টেলিভিশন’ এবং বাসদ প্রার্থী শফিউর রহমান শফি ‘মই’ মার্কা নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। এ আসনেও গ্রæপিং-ভেদাভেদ ভুলে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ সদর উদ্দিন খান, কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খান ও কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ জাহিদ হোসেন জাফরসহ মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীরাও নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছেন। এখানেও জোরেশোরে চলছে নির্বাচনী প্রচারা। কুমারখালীর ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ শহীদ গোলাম কিবরিয়া নাতি। গোলাম কিবরিয়া ছিলেন কুমারখালী-খোকসা এলাকায় প্রাদেশিক পরিষদের এমপিএ এবং ১৯৭৩ সালে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। সেলিম আলতাফ জর্জ নির্বাচনে এবার দলীয় প্রার্থী। স্বচ্ছ, শিক্ষিত ও তরুণ নেতাকে পেয়ে উজ্জীবিত দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী। কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খান বলেন, জর্জের মনোনয়নকে ঘীরে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। সবাই মাঠে নেমেছে। দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করেতে সব ভেদাভেদ ভুলে এক হয়েছে নেতাকর্মীরা। বিএনপি দলীয় ধানের শীষ প্রার্থী সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীর নির্বাচনী মাঠে তেমন প্রচার নেই। এ আসনে জাপা (এরশাদ) প্রার্থী আশরাফুল হক ‘লাঙ্গল’, বিএনএফ প্রার্থী আওলাদে পীরজাদা ‘টেলিভিশন’ এবং ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী এনামুল হক ‘হাতপাখা’ মার্কা নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বদ্বীতা করছেন।
×