ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কর ফাঁকি উদ্ঘাটন

ব্যাংকের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে না এনবিআর

প্রকাশিত: ০৭:৫৭, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮

ব্যাংকের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে না এনবিআর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কর ফাঁকি উদ্ঘাটন করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দেশের ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাচ্ছে না। কর ফাঁকি অনুসন্ধানে করদাতাদের তথ্য চাওয়া হলে কোন কোন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এনবিআরকে অসম্পূর্ণ ও আংশিক তথ্য দিচ্ছে। এতে কর ফাঁকি উদ্ঘাটন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি তুলে ধরে গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবিরের কাছে চিঠি দিয়েছে এনবিআর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মিথ্যা কিংবা আংশিক তথ্য দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, রাজস্ব আয় বাড়ানোর স্বার্থে যথাযথ তথ্য দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে গবর্নরের হস্তক্ষেপ চেয়েছে এনবিআর। এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ১১৩ ধারা অনুযায়ী, কর ফাঁকি উদ্ঘাটনে করদাতাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অসম্পূর্ণ এবং আংশিক তথ্য দিচ্ছে। এতে কর ফাঁকি উদ্ঘাটন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে এনবিআরের আয়কর নীতি শাখা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আইন অনুযায়ী করদাতাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য এনবিআরকে দিতে ব্যাংকগুলো বাধ্য।’ ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমানও মনে করেন, এনবিআর যে কোন ধরনের তথ্য চাইলে তা দিতে ব্যাংকগুলো বাধ্য। তাদের (এনবিআরের) চাহিদা মতো তথ্য ব্যাংকগুলোর সরবরাহের কথা। তিনি বলেন, ‘তথ্য গোপন করার কোন ধরনের সুযোগও নেই ব্যাংকগুলোর। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান হয়ত সময় মতো তথ্য দিচ্ছে না। এ কারণে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।’ ফজলে কবিরকে লেখা এনবিআরের চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংক, লিজিং কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে করদাতার লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য সঠিক আয় নিরূপণ ও কর আরোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এনবিআর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, কোন কোন ব্যাংক, লিজিং কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান করদাতার ব্যাংক হিসাব ও লেনদেন সম্পর্কে ভুল তথ্য দিচ্ছে। চিঠিতে ভুল তথ্য দেয়ার জন্য আয়কর অধ্যাদেশের ১৬৬’র-এ ধারা অনুযায়ী শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে এনবিআর আরও উল্লেখ করে, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ১১৩ ধারা অনুযায়ী, আয়কর কর্তৃপক্ষ করদাতার ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের জন্য ব্যাংক, ব্যাংক বহিভর্‚ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য সঠিক আয় নিরূপণ ও করারোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, করদাতার একাধিক হিসাব থাকা সত্তে¡ও কোন কোন হিসাবের তথ্য দেয়া হচ্ছে না বা আংশিক তথ্য দেয়া হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে নির্ধারিত সময়ের তথ্যও দেয়া হচ্ছে না, যা রাজস্ব আদায়ে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, লিজিং কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে করদাতার তথ্য থাকা সত্তে¡ও শূন্য বিবরণী পাঠানো হচ্ছে। এনবিআর মনে করে, তথ্য না দেয়া বা আংশিক তথ্য পাঠানো ইচ্ছাকৃত। চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের সব ব্যাংক, লিজিং কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকের সব ধরনের লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণ করে। তাই আয়কর বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী করদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য দেয়ার সুযোগ নেই। এ ধরনের অসহযোগিতার জন্য আয়কর অধ্যাদেশের ১৬৬-এ ধারায় দÐ দেয়ার বিধান রয়েছে।
×