ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় সমৃদ্ধির বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় সমৃদ্ধির বাংলাদেশ

(গতকালের পর) সরকারের বিভিন্ন সেবা ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে জনগণের কাছে সহজে পৌঁছে দিতে বহুল আলোচিত বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে বাংলাদেশে। সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয়, ৩৫৩টি অধিদফতর ও সংস্থা দেশের ৮টি বিভাগ ৬৪টি জেলা ৪৯১টি উপজেলা ৪ হাজার ৫৫৪টি ইউনিয়নকে সংযুক্ত করে ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে তৈরি করা হয়েছে পোর্টালটি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, ব্যাংকিং সেবা, মার্কেটিং, কৃষিসহ দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তন বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়। নারীর ক্ষমতায়ন নারী উন্নয়ন ও সমতার লক্ষ্যে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল ও দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের আলোকে বাংলাদেশ সরকারের সর্ববৃহৎ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর মাধ্যমে দেশের নারী সমাজকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ গ্রাম-শহরে নারীর কর্মজীবনকে দৃশ্যমান করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আইনী পরামর্শ সহজলভ্য হওয়ার কারণে নারীর জীবনযাত্রার মানে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। স্বাধীনতা উত্তর বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংসদে সর্বপ্রথম নারীদের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষণ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা ১৫ থেকে ৩০ থেকে ৪৫ বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বৃদ্ধি করে ৫০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে ১২ হাজারের বেশি নারী জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। গত ২৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করে আসছেন নারী। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা এবং সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী দলের নেতাও নারী। জাতীয় সংসদের উপনেতা, স্পিকার, একাধিক মন্ত্রী, এমপি, সচিব, রাষ্ট্রদূত, বিচারক, ডিসি, ব্যাংকের এমডির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করছেন নারীরা। আমাদের সামরিক বাহিনী, পুলিশ বাহিনীতেও নারীরা অবদান রাখছে। বর্তমানে প্রশাসনে সিনিয়র সচিব ও সচিব পদমর্যাদায় কাজ করছেন মোট ৭৭ জন কর্মকর্তা। শুধু প্রশাসনেই নয়, এমন কোন খাত নেই যেখানে নারীরা দায়িত্ব পালন করছেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাপকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বে অন্য কোন দেশে রাজনীতিতে নারীর এত উচ্চাসন নেই। এর স্বীকৃতি ও মিলেছে বিশ্বজুড়ে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর মাতারবাড়িতেই নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর। সেখানে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য জাহাজ ভিড়ানোর চ্যানেল ও টার্মিনালকে ঘিরে ইতোমধ্যে এই সমুদ্র বন্দরের প্রাথমিক অবকাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। সেখানে রয়েছে ভূ-প্রাকৃতিক অবকাঠামো সুবিধাও। সেখানে ৩২০ থেকে ৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ১৬ মিটার ড্রাফটের আট হাজার টিইইউএস কন্টেনারবাহী বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। ২০২৩ সালের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে এই গভীর সমুদ্র বন্দর। এটি দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জাইকা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কারিগরি সম্ভাব্যতার সমীক্ষা প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। জাইকার বিশেষজ্ঞদের মতে মাতারবাড়িতে এ সমুদ্র বন্দরটি জাপানের কাশিমা বন্দর এবং নিগাতা বন্দরের মডেল অনুসরণ করে নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়াও যমুনা রেল সেতু, মেট্রোরেল, মাতারবাড়ি বিদ্যুতকেন্দ্র, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেবাসহ বাংলাদেশের ছয়টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৮০ কোটি ডলার বা ১ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে জাপান। জাপানের ৩৯তম সরকারী উন্নয়ন সহায়তা ঋণ প্যাকেজের আওতায় এই অর্থ দেয়া হবে। জাপানী মুদ্রায় এর পরিমাণ ২০০ দশমিক ৩৭১ বিলিয়ন ইয়েন। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জাপান এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিনিময় নোট স্বাক্ষরিত হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু সকল দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসী নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে ৬.১৫ কিমি দীর্ঘ পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে। এ সেতুর এক প্রান্ত মুন্সীগঞ্জ-মাওয়া হয়ে অপর প্রান্ত শরীয়তপুর-জাজিরা গিয়ে মিলবে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে সংযোগ ঘটবে। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে এবং মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টে সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর এই সেতু দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অক্টোবর পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ৬০ শতাংশ সমাপ্ত হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে পুরোদমে এই সেতুর সুফল জনগণ ভোগ করতে পারবে দেশবাসী। এটি নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষি ও শিল্পের বিল্পব ঘটবে ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। মেট্রোরেল ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় মেট্রোরেল চালু হচ্ছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এর বাণিজ্যিক পরিচালনা শুরুর লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২২ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির প্রকল্প ঋণ ৭৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৫ শতাংশ। মেট্রোরেল ব্যবস্থায় প্রথম ধাপে প্রতিদিন ২৪টি ট্রেন চলাচল করবে। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে ট্রেনগুলো। প্রতি ট্রেনে থাকবে ছয়টি বগি। একটি ট্রেনে এক হাজার ৬৯৬ জন যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। মেট্রো রেলের চূড়ান্ত রুট এ্যালাইনমেন্ট হল : উত্তরা প্রথম ধাপ-পল্লবী, রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে খামারবাড়ি হয়ে ফার্মগেট-সোনারগাঁও হোটেল-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর-তোপখানা রোড থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটির প্রথম ধাপ চালু হবে পল্লবী থেকে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত। এই ১১ কিলোমিটার রেলপথ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ২০১৯ সালের মধ্যে। দ্বিতীয় ধাপে সোনারগাঁও হোটেল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ৪.৪০ কিলোমিটার পথ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ২০২০ সালে। তৃতীয় পর্যায়ে পল্লবী থেকে উত্তরা পর্যন্ত ৪.৭ কিলোমিটার চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে ২০২২ সালে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ২০১৮ সালের ১২ মে রাত ২টা ১৫ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। কৃত্রিম উপগ্রহের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। মার্কিন কোম্পানি স্পেসএক্স-এর সর্বাধুনিক রকেট ফ্যালকন-৯ যুক্তরাষ্ট্রের কেপ ক্যানাভেরাল উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ার ২টি গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য বাংলাদেশ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়ার স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারস্পুটনিক’এর কাছ থেকে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলারে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় কক্ষপথ স্লট ক্রয় করে। ২৬টি কে ইউ ও ১৪টি সি ব্যাসসহ ৪০টি ট্রান্সপোন্ডার আছে। ২০টি বাংলাদেশ ব্যবহার করবে। বাকি ২০টি ভাড়া দিয়ে বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উপগ্রহটি থেকে সার্ক দেশগুলোর পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং কাজাকিস্তানের একটি অংশ এর সুযোগ নিতে পারবে। বঙ্গবন্ধু-১ এর মাধ্যমে ডাইরেক্ট-টু-হোম (ডিটিএইচ) ভিডিও সার্ভিস, ই-লার্নিং, টেলি-মেডিসিন, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি খাতসহ দুর্যোগ উদ্ধারে ভয়েস সার্ভিসের জন্য সেলুলার নেটওয়ার্কের কার্যক্রম এবং এসসিএডিএ, এওএইচও এর ডাটা সার্ভিসের পাশাপাশি বিজনেস-টু-বিজনেস (ভিসেট) পরিচালনায় আরও সহজ হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প স্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল সেই ১৯৬১ সালে। ঈশ্বরদীর রূপপুরে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল দেশ স্বাধীন হওয়ারও ১০ বছর আগে। ১৯৬২ হতে ১৯৬৮ সালের মধ্যে পদ্মা নদীর তীরে ঈশ্বরদীর রূপপুরকে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছিল। পরে প্রকল্পটি পশ্চিম পাকিস্তানে সরিয়ে নেয়া হয়। স্বাধীনতার পর দুই দফা সম্ভাব্যতা যাচাই হলে ও অর্থের যোগান না থাকায় প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদকালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সুপারিশ করা হয়েছিল। চলবে...
×