ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নসরুল হামিদের জনপ্রিয়তার ধারে কাছে নেই গয়েশ্বর

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮

  নসরুল হামিদের জনপ্রিয়তার ধারে কাছে নেই গয়েশ্বর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা-৩-এ নসরুল হামিদ বিপুর ব্যাপক জনপ্রিয়তার ধারে কাছে নেই গয়েশ^র চন্দ্র রায়। আসনটিতে বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নৌকা প্রতীকে এবার লড়ছেন ধানের শীষের প্রার্থী গয়েশ^র চন্দ্র রায়ের বিপরীতে। গয়েশ^র চন্দ্র রায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। বিএনপিতে তিনি হেবিওয়েট প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হলেও কেরানীগঞ্জে বিপুর জনপ্রিয়তায় সব কিছু ম্লান হয়ে গেছে। টানা দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিপু কেরানীগঞ্জের মানুষের মধ্যে অধুনিক নগরী গড়ার স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছেন। এলাকার বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে বিপু আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়েছেন। এলাকায় নতুন যে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো নির্মাণ করা হয়েছে তার সবগুলোই আধুনিক নক্সায় নির্মাণ করা হয়েছে। এর কোথাও সরকারী গতানুগতিক নক্সা ব্যবহার করা হয়নি। এছাড়া ক্রীড়া কমপ্লেক্স, কলেজ, মসজিদ নির্মাণে আধুনিকতার ছোঁয়াতে বিপু অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নসরুল হামিদ বলেন, ১০ বছর আগের কেরানীগঞ্জ ছিল অনেকটা সন্ত্রাসের জনপদ। বর্তমানে কেরানীগঞ্জে সন্ত্রাসীর কোন ঠাঁই নেই। দলমত নির্বিশেষে এখানে সুন্দরভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করছে সকলে। কোথাও চাঁদাবাজি কারও ওপর হামলা করা হয়েছে এমন কোন নজির নেই। আমি নির্বাচিত হলে এই ধারাবাহিকতা বজার থাকবে। নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে নৌকার এই প্রার্থী বলেন, এখানে নৌকার জোয়ার তৈরি হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী ২০০৮ সালে বিপুর কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন এবার আরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করবে কেরানীগঞ্জের জনগণ। আসনটিতে নসরুল হামিদ বিপু প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকায় উঠান বৈঠক আয়োজন করছেন। এসব বৈঠকে তিনি এলাকাবাসীর সমস্যা শুনছেন। আগামীতে নির্বাচিত হলে তিনি এলাকার মানুষের জন্য কি করবেন সে বিষয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছেন। নৌকার পোস্টারে ছেয়ে রয়েছে পুরো এলাকায়। কিন্তু এর বিপরীতে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কোনো পোস্টার নেই। কিছু এলাকায় হাতপাখান পোস্টার চোখে পড়েছে। বিএনপির কোন পোস্টার না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, এই আসনে কোথাও কোন নির্বাচনী সহিংসতা নেই। সব প্রার্থী তাদের নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করতে পারছে। যদি বাধা দেয়া হতো তাহলে কিন্তু মিডিয়ায় আসত। তাদের পোস্টার কেন নেই সে বিষয়ে তারাই ভাল বলতে পারবে। আমাদের পোস্টার জনগণ এবং কর্মীরা লাগাচ্ছে। তাদের হয়তো কর্মীই নেই। ঢাকার এই উপজেলায় পদ্মা সেতুকে ঘিরে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। এক্সপ্রেসওয়ের পাশাপাশি সেখান দিয়ে রেল রাস্তাও নির্মাণ করা হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের এই উন্নয়ন দেখে নতুন এক নগর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে কেরানীগঞ্জকে। কেরানীগঞ্জ হবে ঢাকার পাশে সব থেকে পরিকল্পিত নগরী। কেরানীগঞ্জের মাস্টারপ্ল্যান, ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, শিক্ষা বিস্তার, নদী ও খাল উদ্ধার, মাদক নির্মূল, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী মুক্ত মডেল কেরানীগঞ্জের স্বপ্ন নিয়ে দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। কেরানীগঞ্জের উন্নয়নে বিসিক এলাকায় গ্যাস সংযোগ দিয়ে নতুন নতুন শিল্প স্থাপন, স্টেডিয়াম নির্মাণ, বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদন ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার ঘোষণা ভোটারদের মনে সাড়া ফেলেছে। টানা ১০ বছরে সংসদ সদস্য ও শেষ ৫ বছরে বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে নানামুখী উন্নয়ন কর্মকা-ের কারণে এমনিতেই জনগণ তাকে এগিয়ে রাখছে। জিনজিরার দোকানি আহমেদ আনোয়ার বলেন, এক সময়ে এখানে দিনে ২০ ঘণ্টার মতো লোডশেডিং হতো। বিদ্যুত নির্ভর কলকারখানা লোকসান দিতে দিতে পথে বসতে বসেছিল। কিন্তু এখন কোন লোডশেডিং নেই। সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকে জিনজিরার কলকারখানাগুলো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালের পর দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের হাতছাড়া ছিল আসনটি। ১৯৭৯ সালে বিএনপি, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হন। এরপর টানা তিনটি সংসদে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান নির্বাচিত হন। পরে ২০০৮ সালে বিএনপির প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন নসরুল হামিদ। এরপর ২০১৪ সালে নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিপরিষদে ঠাঁই করে নেন। বিপুর ব্যাপক প্রচারণার সামনে গয়েশ^রকে ভোটের মাঠেই দেখা যায় না বলে মন্তব্য করেন কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বিএনপি ভোটে আছে কি নেই তাই বোঝা যাচ্ছে না। কখনও কেউ ধানের শীষের পক্ষে তার কাছে ভোট চাইতে আসেননি। এছাড়া রাস্তায় তাদের কোন পোস্টারও দেখা যায় না। বিএনপি নির্বাচনী প্রচারে নামলে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে কি না জানতে চাইলে বলেন, তারাতো নামছেই না। না নামলে অপ্রীতিকর ঘটনা কিভাবে ঘটবে।
×