ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উন্নত জীবন দেব ॥ নৌকায় ভোট দিন

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮

উন্নত জীবন দেব ॥ নৌকায় ভোট দিন

উত্তম চক্রবর্তী/ আবদুর রউফ সরকার, রংপুর থেকে ॥ সিলেটের পর রবিবার পুরো রংপুর বিভাগে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার তুললেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে তরুণসহ দেশবাসীর কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও দেশ সেবার সুযোগ দেয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তারুণ্যের কাছে ভোট চাই, মা-বোনদের কাছে ভোট চাই, বয়ঃবৃদ্ধ মুরব্বিসহ সবার কাছে ভোট চাই। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিন, আমরা উন্নয়ন দেব, সুন্দর জীবন দেব, উন্নত জীবন দেব। নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে, নৌকার বিজয় হবেই ইনশাল্লাহ। বিএনপি-জামায়াত জোট সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা শত শত মানুষকে গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে, ওরা মানুষ না, ওরা দানব। ওদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। আজকে যারা ধানের শীষ নিয়ে আসছে, মানুষ পোড়ার গন্ধ তাদের গায়ে। তাদের থেকে সাবধান থাকবেন। পুরো উত্তরবঙ্গ থেকে মঙ্গা দূর করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আগে উত্তরবঙ্গ মানেই মঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, অনাহারি মানুষের আহাজারি ছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে উত্তরবঙ্গের দুর্দিনকে সুদিনে পরিণত করেছি, মঙ্গা দূর করেছি। এখন কোথাও মঙ্গা নেই, মানুষের পেটে খাদ্যের কোন অভাব নেই। প্রধানমন্ত্রী রবিবার রংপুরে নিজ শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জ, তারাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ মাঠে আয়োজিত দুটি বিশাল নির্বাচনী জনসভায় এবং ঢাকা ফেরার পথে দিনাজপুরের একাধিক নির্বাচনী পথসভায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে আরও বলেন, আজকে যারা ধানের শীষ করে সেই বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকা জামায়াত একাত্তর সালে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ করেছে, দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। আর বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলনের নামে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। তারা বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে, গ্রাম পুড়িয়েছে, রাস্তাঘাট কেটে দিয়েছে, নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলেছে। দেশবাসীকে বলব একটিবার তাদের ভয়াল ঘটনার কথা একটু চিন্তা করুন। এরা তো মানুষ নয়, এরা দানব। আওয়ামী লীগ সভাপতি খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এতিমের টাকা চুরি করে আজকে জেলে আছেন। আর তার ছেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত, যারা (খালেদা-তারেক) এমনি একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত- এরা দেশের উন্নয়ন কী করবে? কাজেই এদের থেকে দেশবাসীকে সাবধান থাকতে হবে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করতে নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে রবিবার সকালে ঢাকা থেকে রংপুরের উদ্দেশে রওনা হন। ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুর এয়ারপোর্টে অবতরণের পর দুপুর সোয়া ১২টায় রংপুরের তারাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে এ নির্বাচনী জনসভাটিও রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ নেয়। এখানে প্রধানমন্ত্রী এই আসনে (রংপুর-২) আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম মোঃ আহসানুল হক চৌধুরী ডিউককে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে জনসভায় উপস্থিত জনতার কাছে ওয়াদা চাইলে তারা দুহাত তুলে এবং মুখে নৌকা ও জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে ভোট দেয়ার অঙ্গীকার করেন। তারাগঞ্জের জনসভা শেষে সড়ক পথে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর প্রধানমন্ত্রী সোজা চলে আসেন তার শ্বশুরবাড়ি পীরগঞ্জের ফতেহপুরে। সেখানে গিয়েই প্রথমে প্রধানমন্ত্রী তার প্রয়াত স্বামী দেশের প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া (সুধা মিয়া) কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে কবর জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করেন। সৈয়দপুর থেকে পীরগঞ্জ পর্যন্ত দীর্ঘ এই পথেই দুধারেই ছিল মানুষের ঢল। হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ দলের প্রতীক নৌকা নিয়ে এবং মুখে স্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীও গাড়ি থেকে তাদের উদ্দেশে হাত নেড়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী যান তাঁর শ্বশুরবাড়ি ‘জয় সদন’-এ। শ্বশুরবাড়িতে প্রবেশের সময় তার আত্মীয় স্বজনরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী স্বজনদের সঙ্গে কুশলবিনিময় ও কিছু সময় অতিবাহিত করেন। এরপর দুুপুরের আহার সেরে প্রধানমন্ত্রী সোজা চলে যান পীরগঞ্জ সরকারী হাইস্কুল মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল নির্বাচনী জনসভায়। সেখানে তিনি এই আসনের দলীয় প্রার্থী জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে নিজের মেয়ে হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য এলাকার ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। পীরগঞ্জের জনসভায় বক্তব্য রাখার পর প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ফেরার পথে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, ফুলবাড়ী, বিরামপুর, পার্বতীপুর, দিনাজপুর শহর বাসস্ট্যান্ড এবং দশমাইলে ছয়টি পৃথক পথসভায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য এলাকার জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। এরপর সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট থেকে বিমানযোগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ফিরে যান। প্রতিটি নির্বাচনী জনসভা ও পথসভায়ও ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। জনারণ্যে পৌঁছার পর সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ ও নেতাকর্মী বিপুল উচ্ছ্বাস, করতালি ও স্লোগানে বরণ করে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। একইসঙ্গে নৌকাকে বিজয়ী করতেও তাদের অঙ্গীকারের কথা জানান বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে। পীরগঞ্জে জনসমুদ্রের উত্তাল ঢেউ ॥ দীর্ঘ পাঁচ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ির এলাকায় আসা উপলক্ষে এলাকার মানুষের মধ্যে রীতিমত উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সর্বশেষ এখানে এসেছিলেন তিনি। সকাল থেকেই এলাকার হাজার হাজার মানুষ তাদের পুত্রবধূ শেখ হাসিনার আগমনের প্রতীক্ষায় রাস্তার দুই পাশে দীর্ঘ অপেক্ষায় থেকেছেন। শেখ হাসিনার যাত্রাপথে সমবেত এসব মানুষ হাত নেড়ে ও ফুল ছিটিয়ে স্বাগত জানান তাঁকে। জবাবে প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়া পীরগঞ্জের নির্বাচনী জনসভাতেও নেমেছিল উত্তাল মানুষের ঢেউ। সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ছাপিয়ে চতুর্দিকের এক কিলোমিটার পথই জনারণ্যে জনসভাটি রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ নেয়। পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান রাঙ্গার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামিমের সঞ্চালনায় বিশাল এ জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন এ আসনের প্রার্থী জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সদ্য আওয়ামী লীগের যোগদানকারী বিএনপির উপজেলা সভাপতি ও সাবেক এমটি নুর মোহাম্মদ ম-ল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, রেজাউল করিম রাজু, সাফিয়া খানম, অধ্যাপক মাজেদ আলী, সাফিউর রহমান সাফি, এ্যাডভোকেট হোসনে আরা ডালিয়া এমপি প্রমুখ। পীরগঞ্জের নির্বাচনী জনসভায় বিশেষ চমক ছিল দেশের চলচ্চিত্র ও নাট্য জগতের জনপ্রিয় এক নায়ক ও দুই নায়িকার উপস্থিতি। সবাইকে চমকে দিয়ে জনসমুদ্রের সামনে হাজির হন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস, চলচ্চিত্র ও নাট্যাভিনেত্রী তারিন জাহান এবং চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পূর্ণিমা। তাঁরারও জনসভায় বক্তব্য দিয়ে দেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও শান্তির ধারা বজায় রাখতে নৌকায় মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী রংপুর-৬ আসনের প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ছাড়াও রংপুর-৪ আসনের প্রার্থী টিপু মুন্সি এবং রংপুর-৫ আসনের এইচ এন আশিকুর রহমানকে পরিচয় করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, পীরগঞ্জ উপজেলায় নিয়ে গঠিত রংপুর-৬ আসনে আগে নির্বাচন করতেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। ২০১৪ সালের বিজয়ের পর শেখ হাসিনা এই আসন ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনী বিজয়ী হন জাতীয় সংসদের স্পীকার হন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশাল এ জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মানুষের উন্নতি হয়, তার যথেষ্ট উদাহরণ দেশবাসী দেখেছে। আমরা যুব সমাজের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। কারো কাছে চাকরি চাইতে হবে না, নিজেরা চাকরি দিতে পারবে, সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। আমরা তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাব। শ্বশুরবাড়ি এলাকার সবার কাছে দোয়া চেয়ে এলাকার পুত্রবধূ শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের কাছে দোয়া চাই, আপনারা দোয়া করবেন, যেন দেশের মানুষের কল্যাণ পারতে পারি। বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ জাতির পিতা শেখ মুজিব চেয়েছিলেন। সেই বাংলাদেশ আমরা করে দিব। তিনি বলেন, আজকে প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো, যার জন্য আমাদের ছেলে-মেয়েরা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। সারা পীরগঞ্জে শতভাগ বিদ্যুত দিয়ে দিয়েছি। সারা বাংলাদেশে বিদ্যুত আমরা দিচ্ছি। ইনশাল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে দেশের কোন ঘর অন্ধকার থাকবে না। সব ঘর আলোকিত হবে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অবহেলিত রংপুরের উন্নয়ন কার্যক্রম হয় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা একটা কথা চিন্তা করুন, ১০ বছর আগে কোথায় ছিলেন? এই এলাকার অবস্থা কি ছিল? আর আজকে কত উন্নয়ন হয়েছে। আজ প্রত্যেকটা মানুষের উপার্জন বেড়েছে। আমরা ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। ছেলে-মেয়েরা সেখানে বসে কাজ করছে। আগামীতে ক্ষমতায় আসলে দেশের কোন মানুষ গৃহহারা থাকবে না, চিকিৎসার অভাবে একটি মানুষ কষ্ট পাবে না ১০ বছর অগে রংপুরের এলাকার অনেক মানুষকে খাবারের জন্য হাত পাততে হতো মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা দেখেই অঙ্গীকার করেছিলাম, যদি ক্ষমতায় আসি, এই রংপুর থেকে মঙ্গা দূর করব। প্রতিটি মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। তিনি বলেন, ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে মঙ্গা দূর করেছিলাম। কিন্তু ওই বিএনপি-জামায়াত জোটের লুটেরাদের দল, খুনীর দল, আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার দল- তারা ক্ষমতায় এসে আবার সেই মঙ্গা শুরু করেছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা জয়ী হই, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি, তখন থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এই ১০টা বছর রংপুরে কোন মঙ্গা নেই। মঙ্গা আমরা দূর করেছি। আর জীবনে কখনো এখানে মঙ্গা-দুর্ভিক্ষ ইনশাল্লাহ হবে না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী রংপুরের আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন এবং নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। পীরগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর হাত উঁচু করে ধরে তিনি বলেন, এই যে আমার মেয়েকে আপনাদের সামনে তুলে দিচ্ছি। শিরীন শারমিন চৌধুরী নির্বাচিত হলে তাঁকে আমরা আবারও স্পীকার করতে পারব। মনে রাখবেন রাষ্ট্রপতির পরের স্থানটি কিন্তু স্পীকার, এরপর প্রধানমন্ত্রী। আর ড. শিরীন যেভাবে আপনাদের জন্য কাজ করছে আমি হলে এতটা পারতাম না। কারণ আমার সারা দেশ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। তিনি আরও বলেন, পীরগঞ্জের ব্যাপক উন্নয়ন এরই মধ্যে আমরা করেছি। পীরগঞ্জের আরও উন্নয়নের জন্য আমি একটা মাস্টারপ্ল্যান করতে বলেছি। আজকে আমার করা ব্রিজের ওপর দিয়ে এখান থেকে আমি দিনাজপুর যাব। এভাবে সারা বাংলাদেশের উন্নয়ন করেছি আমরা। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। পীরগঞ্জে আপনারা আমাকেই ভোট দেবেন। শুধু ব্যালটে শিরীন শারমিন চৌধুরীর নাম থাকবে। নৌকার সঙ্গে মহাজোটের প্রার্থীদের পক্ষেও ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী ॥ দুপুরে রংপুর-২ আসনের তারাগঞ্জ উপজেলার তারাগঞ্জ সরকারি ডিগ্রী কলেজ মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন ও জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর কাছে নৌকায় ভোট চাই। পুরো রংপুর এলাকা দুর্ভিক্ষ পীড়িত ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে সেই দুর্দিন চলে গেছে। আজকে সুদিন এসে গেছে। এখন আর মঙ্গা ও দুর্ভিক্ষ নাই। প্রত্যেকটি মানুষের খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান-সবকিছুর ব্যবস্থাই আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। পুরনো স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, আগে শুনেছি, দেখেছি উত্তরাঞ্চলের মানুষ ছিল মঙ্গার শিকার। আজ মঙ্গা নামের অভিশাপ দূর হয়েছে। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। সবাই দুবেলা খেতে পায়। কোন মানুষ আজ অনাহারে থাকে না। শেখ হাসিনা তারাগঞ্জের জনসভায় তাঁর ভাষণে আরও বলেন, জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই বাংলা ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছে, আজকে স্বাধীনতা পেয়েছে দেশের মানুষ। আর নৌকা যখন ক্ষমতায় আসে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, দেশে শান্তি আসে, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ঘটে। অতীতের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এই এলাকা তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জসহ সমগ্র বাংলাদেশ তিনি ঘুরে দেখেছেন দরিদ্র মানুষ, মানুষের দুর্দশা এবং হাহাকারের করুণ চিত্র। এসব এলাকায় ছিল মঙ্গা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে ২০০৮ সালে আর ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেছে। সে থেকে এ পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে কোন মঙ্গা হয়নি। খাবার কোন কষ্ট হয়নি। মানুষ অনাহারে মরেনি। মানুষ আজ দুবেলা পেটপুরে খায়। আগামী সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, একটি মানুষও অনাহারে থাকবে না। কারণ গৃহায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ঘর-বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। প্রতিটি মানুষ যাতে চিকিৎসা পায় সেজন্য আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। সেখান থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাসহ ৩০ প্রকারের ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেক উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করে দিচ্ছি, সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ কাম কালচারাল সেন্টারের আওতায় প্রতিটি উপজেলায় আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা হবে, প্রতিটি এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। সৈয়দপুর বিমানবন্দর এবং উত্তরা ইপিজেডও আমরা করে দিয়েছি। উত্তরা ইপিজেডে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে সেখানে এ অঞ্চলের কর্মহীন মানুষের কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। আমার একটাই লক্ষ্য আপনারা ভাল থাকবেন, দুবেলা পেট ভরে ভাত খাবেন, ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখবে, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। তিনি বলেন, জনগণ বারবার নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই তার সরকারের পক্ষে এসব উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব হয়েছে। তিনি এ সময় এই আসনের নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম মোঃ আহসানুল হক চৌধুরী ডিউককে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে তাকে জনগণের হাতে সোপর্দ করেন। মঞ্চে তাঁর তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সকলের কাছে নৌকায় ভোট প্রদানের প্রতিশ্রুতি চাইলে জনগণ দুহাত তুলে তাতে সম্মতি জানায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা ডিউককে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেন, যাতে করে আমরা আবারও আপনাদের সেবা করার সুযোগ পাই। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার নির্বাচনী মহাজোটের উল্লেখ করে যেসব স্থানে মহাজোটের প্রার্থী রয়েছে সেসব আসনের জনগণকে মহাজোটের প্রার্থীকেও ভোট প্রদানের আহ্বান জানান। তারাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে জনসভায় আর বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম সাধারণ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রংপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রেজাউল করীম রাজু প্রমুখ। সভাপটি পরিচালনা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম। দিনাজপুরে পথসবায় ব্যালটের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের সমুচিত জবাব দেয়ার আহ্বান ॥ দিনাজপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, অগ্নিসন্ত্রাস, এতিমের অর্থ আত্মসাতকারী এবং নির্যাতন অত্যাচারের অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসার জন্য ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আপনাদের সমর্থন চাই। আমরা আর জাতি হিসেবে পেছনের দিকে যেতে চাই না। উন্নয়নের মাধ্যমে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার যে গতি আওয়ামী লীগ সরকার সৃষ্টি করেছেন তা নস্যাৎ করার জন্য যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যালটের মাধ্যমে সমুচিত জবাব দিন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দিনাজপুর শহরের ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে এক বিশাল পথসভায় একথা বলেন। দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফের সভাপতিত্বে ৩ মিনিটের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন, নজিরবিহীন সন্ত্রাস, অত্যাচার-নির্যাতন, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, মানিলন্ডারিংসহ জাতিকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করে যারা জনগণের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা মুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে। আওয়ামী লীগ অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার যে উন্নয়ন মহাসড়কে জাতিকে গতিশীল করেছে তা বজায় রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতি হিসেবে আমরা আর অন্ধকারে থাকতে চাই না। হত্যা, খুন, অত্যাচার-নির্যাতন এবং জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের বিরুদ্ধে জনগনকে ব্যালটের মাধ্যমে সমুচিত জবাব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ছিটমহল বিনিময়, মহাকাশ বিজয়ের পাশাপাশি সমুদ্র বিজয় করে জাতিকে সমৃদ্ধি নতুন দিগন্তের পথে অগ্রসর করেছেন। আওয়ামী লীগ মানেই সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন আর জাতির মর্যাদা, সম্মান বৃদ্ধি করা। আর যারা জনগণের সম্পদ ও জীবনের হানি করে তারা কখনই জনগণের সেবক হতে পারে না। অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে নিরপরাধ নারী-শিশু ও মানুষকে যারা পুড়িয়ে মেরেছে তাদের বিরুদ্ধে জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। শেখ হাসিনা গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ দিন বদলের সনদ বাস্তবায়িত করে সারা দেশে রাস্তা-ঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুত সরবরাহসহ সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রার সূচনা করেছে। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। মানুষ এখন পেট ভরে দুবেলা খাচ্ছেন। এসবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথ ধরে আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রা। তিনি বলেন, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল, বাহাউদ্দীন নাসিম, আহমদ হোসেন, সদর-৩ আসনের মহাজোট প্রার্থী হুইপ ইকবালুর রহিম, দিনাজপুর-২ আসনের প্রার্থী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদ সরকার ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন এবং শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রায়হান কবির সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান রাজু বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এর আগে নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর, বিরামপুর ঢাকা মোড়, ফুলবাড়ী নিমতলা, আমবাড়ীতে পথসভায় বক্তব্য দেন। পরে তিনি সদর উপজেলার বাশেরহাট ও ব্যাংকালী, কাহারোল উপজেলার দশমাইল, চিরিরবন্দরের রানীরবন্দর এবং পার্বতীপুর উপজেলার সোনাপুকুর রাবেয়া মোড়ে পথসভায় ভাষণ দেন। সফরের সময় তিনি দিনাজপুর-৬ আসনের প্রার্থী শিবলী সাদিক, দিনাজপুর-৫ আসনের প্রার্থী প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, দিনাজপুর-৪ আসনের প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সদর-৩ আসনের মহাজোট প্রার্থী হুইপ ইকবালুর রহিম, দিনাজপুর-২ আসনের প্রার্থী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর-১ আসনের প্রার্থী মনোরঞ্জনশীল গোপালকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।
×