ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত নেতাদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি নিয়ে ইসিতে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

জামায়াত নেতাদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি নিয়ে ইসিতে আওয়ামী লীগ

বিডিনিউজ ॥ মনোনয়নপত্রে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রার্থিতা বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে দাবি তুলেছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া বিএনপির প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সে বিষয়েও নির্বাচন পরিচালনা সংস্থাটির পদক্ষেপ চেয়েছে তারা। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমামের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে এসব দাবি জানান। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সেখান থেকে বেরিয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এইচটি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট থেকে জামায়াতের কয়েকজন প্রার্থীর বিষয়ে একটি তালিকা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তারা মনোনয়ন ফরমে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন। দলের জায়গায় তারা তো লিখেছে বিএনপি, কিন্তু তারাতো বিএনপির নয়- যেটা বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছে। মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তাদের মনোনয়ন বাতিলযোগ্য। আমরা কমিশনকে জামায়াতের মনোনয়ন বাতিলের অনুরোধ করেছি। হাইকোর্টের রায়ে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতারা এবার তাদের জোটসঙ্গী বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন। স্বতন্ত্র হিসেবেও প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আছেন কয়েকজন। এই প্রেক্ষাপটে জামায়াতের ২৫ নেতার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত দিতে বলেছে। সোমবারের মধ্যে কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে বলে বৃহস্পতিবার ইসি সচিব জানিয়েছিলেন। পোস্টারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ব্যবহারে আপত্তি জানিয়ে এইচটি ইমাম বলেন, খালেদা জিয়া বর্তমানে দলের চেয়ারম্যান পদে বহাল নেই, তাই নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী তার ছবি ব্যবহার করা যাবে না। অন্যদিকে তারেক রহমান একজন ফেরারি আসামি। তাই তারেকের ছবি নির্বাচনী পোস্টারে ব্যবহার করা যাবে কি না, সেই বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। পোস্টার সম্পর্কে পরিষ্কার বলা হয়েছে, নির্বাচনী পোস্টারে ছবি থাকবে দলের যিনি সভাপতি তার। বর্তমান সভাপতির ছবি এবং প্রার্থীর ছবি। বিএনপি প্রচারে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার দুইজনের ছবি ছাপাচ্ছেন। এটি তো আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। বর্তমান সময়ে খালেদা জিয়া তো সভাপতি নন বিএনপির। বর্তমান সভাপতি তাদের মতে তারেক রহমান। মওদুদ আহমদের বক্তব্যে নির্বাচনের আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি একটি নির্দেশনা দিয়েছেন- যেখানে নির্বাচনী সমাবেশ হবে, সেখানে একটি লাঠির মাথায় ধানের শীষ প্রদর্শন করা হবে। এটি আচরণবিধির সুস্পষ্ট লংঘন। কদিন আগে আমরা পল্টনে এসব লাঠির নির্মম ব্যবহার দেখেছি। বিষয়টি আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানান এইচটি ইমাম। নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে অনুমোদন পাওয়া ১১৮টি এনজিওর মধ্যে চারটি নিয়ে আপত্তির কথা আবারও নির্বাচন কমিশনে তুলেছেন বলে জানান তিনি। ওই চার সংস্থা হল- খান ফাউন্ডেশন, ডেমোক্রেসি ওয়াচ, লাইট হাউস এবং মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ। নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে এমন কাউকে দায়িত্ব দেয়া যাবে না, যারা কোন দল, ব্যক্তি বা বিশেষ কোন প্রতিষ্ঠানের আদর্শের প্রতি অনুগত। এই চারটি প্রতিষ্ঠান বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এগুলোকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও আক্রমণের প্রতিকার চেয়ে এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত কমিশনে জমা দিয়েছেন বলে জানান ইমাম। তিনি বলেন, সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা ও আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। এই বিষয়টি এর আগেও আমরা কমিশনে জানিয়েছি। আজও আমরা লিখিতভাবে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে অবগত করেছি এবং এর প্রতিকার চেয়েছি। সারা দেশে আমাদের কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছে অথচ বিএনপি-জামায়াত উল্টো অভিযোগ করে যাচ্ছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে এ ধরনের ঘটনা আমরা প্রতিদিন নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরব। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এইচটি ইমাম বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের কোন আস্থাহীনতা নেই। এখানে ভিন্নমত থাকতেই পারে। এটি একটি কোর্টের মতো, সেখানে একজন নোট অব ডিসেন্ট দিতেই পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সকলের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। প্রতিনিধি দলে আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, এবিএম রিয়াজুল কবির কাওসার ও নজিবুল্লাহ হিরুসহ কয়েকজন ছিলেন।
×