ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩০ ডিসেম্বর আমরা কোন বাধা মানব না ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

৩০ ডিসেম্বর আমরা  কোন বাধা  মানব না ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বর সকালে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আসবেন। সেদিন আমরা কোন বাধা মানব না। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, তারা ভোট চুরিতে ওস্তাদ। যেমন মেগাপ্রকল্প চুরি করে, কুইকরেন্টাল বিদ্যুত চুরি করে তেমনি ভোট চুরি করতেও তারা ওস্তাদ। আগের রাতেই নাকি তারা ভোটবাক্স ভরে রাখবে বলছে। আগের রাত থেকেই ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের বন্দর সোনাকান্দা স্কুল মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত নির্বাচনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এক অদ্ভুত নির্বাচন হচ্ছে দেশে। নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, দেশে নাকি গণতন্ত্রের সুবাতাস বইছে। সুবাতাস কেমন? আমার ভাইয়েরা একটি নির্বাচনী জনসভায় আসতে পারে না। নির্বাচনী জনসভার পারমিশন নেয়ার পরও মঞ্চ করতে পারে না। মাইক লাগাতে দেয়া হয় না। রাস্তায় রাস্তায় নেতাকর্মীদের আটকে দেয়া হয়। চমৎকার নির্বাচন হচ্ছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১৬ প্রার্থীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পরে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে নেয়া হয়েছে। জামিন দেয়া হচ্ছে না। অথচ ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তফসিল ঘোষণার পর কোন গ্রেফতার হবে না। তাহলে এই প্রধানমন্ত্রীকে কি বলব সত্যবাদী। প্রধানমন্ত্রী বললেন, লেভেল প্লেইং ফ্লিল্ড হবে, একদল মঞ্চ করে হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে সমাবেশ করছে, হেলিকপ্টার নিয়ে পতাকা উড়িয়ে জনসভা করছে, আমাদের কোন সভা করতে দেয়া হয় না। সারাদেশের মানুষ জেগে উঠছে, মানুষ যত বেশি জেগে উঠছে, ততই এই সরকার সোচ্চার হচ্ছে। আমাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বাড়িয়ে দিচ্ছে। মির্জা ফখরুল বর্তমান সরকারের উন্নয়ন সম্পর্কে বলেন, উন্নয়ন হয়েছে বাংক লুট, শেয়ারবাজার লুট, কয়লা খেয়ে ফেলেছে, সোনা তামা হয়ে গেছে, রিজার্ভ চুরি করে খেয়ে ফেলল, হ্যাক হয়ে গেলো, কয়েকদিন আগে ঠাকুরগাঁ থেকে সড়কপথে ঢাকায় আসার পথে দেখলাম রাস্তার কি অবস্থা। গোটা বাংলাদেশে একই অবস্থা। দেশের উন্নয়ন না হলেও তাদের উন্নয়ন হয়েছে। তাদের পকেট বোঝাই হয়েছে। জনগণের পকেট খালি হয়েছে। বিদ্যুতের দাম দশগুণ বেড়েছে, গ্যাস, পানির দাম বেড়েছে, বাড়ি ভাড়া বাড়ছেই। চালের দাম বাড়ছে, বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে, বিনামূল্যে সার দেবে। এখন ৬০ টাকা কেজি চাল, বিনামূল্যে সার কোথায়? সারাদেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে তারা বৈতরণী পার হয়ে যাবে। তারা বলেছিল, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। কিন্তু চাকরি নেই। চাকরি আছে। লাখ লাখ টাকা দিলে চাকরি মিলে। তাও আবার ডিএনএ টেস্ট করে আওয়ামী লীগ হতে হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা এই নির্বাচনের দায়িত্বে আছেন। আপনারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন। এটাই জাতি আশা করে। আপনারা জনগণের পাশে থাকবেন। জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না। তিনি নির্বাচন কমিশনকে ঠুঁটো জগন্নাথ আখ্যা দিয়ে বলেন- তাদের কিছু বলার নেই, তারা অসহায়। আমরা যেই কথা বলি তারা অসহায়ের মতো চুপ করে বসে থাকে। নির্বাচন কমিশনকে বলি কোমর সোজা করে দাঁড়ান। সংবিধান, রাষ্ট্র আপনাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা সঠিকভাবে পালন করুন। নিরপেক্ষভাবে যাতে নির্বাচন হয়, জনগণ যাতে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে সে ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় পদত্যাগ করুন, না পারলে চলে যান। এদেশের মানুষ সেটা মেনে নেবে কিন্তু কোন অন্যায় মেনে নেবে না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের হাতে আর মাত্র ছয়দিন সময় আছে, ভয় পাবেন না। নারায়ণগঞ্জের বিপ্লবী মানুষকে সংগঠিত করুন। মানুষ তো একবারই মরে, দুবার মরে না। সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, ন্যায়ের জন্য বুক সোজা করে দাঁড়ান, ভোট দেয়া আপনার হক, তা আদায় করে নেবেন। বাধাবিপত্তি পেরিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে বিজয় অর্জন করতে হবে। তিনি বলেন, শত প্রতিকূূলতার মাঝেও আপনারা আজ এই মাঠে সমবেত হয়েছেন। দেশমাতা খালেদা জিয়ার বার্তা শোনার জন্য এসেছেন। একটি ভয়াবহ মুহূর্ত আমরা কাটাচ্ছি। গোটা জাতির জন্য এই মুহ‚র্তটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বাংলাদেশের মানুষ অন্ধকারে থাকবে নাকি আলোর পথে যাত্রা করবে। বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরতন্ত্র, স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদের অধীনে থাকবে, নাকি গণতন্ত্রের দিকে যাবে। বাংলাদেশের মানুষ পরাধীন হয়ে থাকবে, নাকি স্বাধীনতার দিকে যাবে। গত দশ বছর ধরে এই সরকার আমাদের অসংখ্য ভাইকে হত্যা করেছে, গুম করেছে, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বিনা কারণে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। সর্বশেষ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে দশ মাস ধরে অন্ধকার কারাগারে বন্দী রেখেছে। তিনি বন্দী অবস্থা থেকে দিন গুনছেন, কবে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পতাকা উড়বে। স্বাধীনতার পতাকা উড়বে। আমরা তাকে বের করে আনব। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দুই সপ্তাহ আগে কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। হাঁটতে পারেন না। হুইল চেয়ারে চলতে হয় তাকে। তিনি আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, তোমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকো, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রকে মুক্ত করো। তাহলেই আমার মুখে হাসি ফুটবে। মায়ের মুখের হাসির জন্য আমাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে ৩০ ডিসেম্বর আমাদের ধানের শীষে ভোট দিতে হবে। তিনি বলেন, আমারা যদি ক্ষমতায় যেতে পারি তবে যুবকদের জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে চাকরির ব্যবস্থা করব। যতদিন চাকরির ব্যবস্থা করতে না পারব ততদিন বেকার ভাতা দেয়া হবে। নারী শিক্ষার উন্নয়নের জন্য গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দেয়া হবে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টানদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করে তাদের সমস্যা সমাধান করা হবে। ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করব। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম গণতন্ত্রের জন্য। সেই গণতন্ত্র তারা উধাও করে দিয়েছে। এখন এক ব্যক্তির, এক দলের শাসন চলছে। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে যাদের ধানের শীষের প্রার্থী করা হয়েছে আপনাদের মনে করতে হবে তারা খালেদা জিয়ার প্রার্থী। সারাদেশে খালেদা জিয়া নির্বাচন করছে, আপনি একটি ভোট দেবেন খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সারাদেশ গত ৫ বছরে লুটের বাজার হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লক্ষ কোটি টাকা চুরি হয়ে গেছে, কোন ব্যবস্থা হয়নি। চারটি বড় বড় ব্যাংক থেকে লুট করে টাকা খেয়ে ফেলেছে, তার কোন ব্যবস্থা হয়নি। শেয়ারবাজার থেকে লুট করার ফলে অনেক মানুষ আত্মহত্যা করেছে, কোন ব্যবস্থা হয়নি। তিনি বলেন, গতবার তো আরাম-আয়েশে, হেলেখেলে ভোট করলেন। একটি ম্যাচে আর কোন টিম নেই। যে টিম আছে সে বলে আমরা চ্যাম্পিয়ন। ৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকল। এই ৫ বছর জনগণকে ভোট দিতে দেয়নি। মানুষের ওপর অত্যাচার করল। প্রার্থীকে পুলিশ পেটাল। কর্মীদের গ্রেফতার করল। তারপর বলে দেশে গণতন্ত্র কায়েম করছি। ৫ বছর পর যখন আবারও ভোট এলো তখন মনে করল আবারও গতবারের মতো অর্থাৎ ২০১৪ সালের মতো ওয়াকওভার দিয়ে যাবে। আমরা বলছি তা হবে না। এবারে আমরা মাঠে আছি। এবারে খেলা হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের কাছে একটিমাত্র পথ আছে। যতই অত্যাচার হোক, আগামী ৩০ তারিখে আপনি এবং আপনার বাড়ির প্রত্যেককে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জয় সুনিশ্চিত। তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচন ১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এবারের নির্বাচন জাতির বেঁচে থাকার নির্বাচন। এবারের নির্বাচন নির্ধারণ করবে এদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে বাঁচবে না পরাধীনভাবে। আজকে শাসকশ্রেণীর হৃদস্পন্দন যেমন বেড়েছে তেমনি তাদের অত্যাচারও বাড়ছে। আমরা এক ঢাকার উন্নয়ন চাই না, সারাদেশের উন্নয়ন চাই। ঢাকার উন্নয়ন মানে দুর্নীতির উন্নয়ন। জনসভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার, নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের বিএনপির প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী জমিয়তে ওলামা ইসলামের প্রার্থী মুফতি মনির হোসেন কাসেমী, নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর ও বন্দর) আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল।
×