ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী পোস্টার ছেপে বাণিজ্য হবে এক শ’ কোটি টাকার

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

 নির্বাচনী পোস্টার ছেপে বাণিজ্য হবে এক শ’ কোটি টাকার

এম শাহজাহান ॥ নির্বাচনী পোস্টার ছেপে চাঙ্গা দেশের মুদ্রণ শিল্প খাত। সাদাকালো পোস্টারের সঙ্গে ১০০ কোটি টাকার বাণিজ্যের হাতছানিতে দম ফেলার সময় নেই দেশের প্রায় ৪ হাজার ছাপাখানায়। দিন শেষে গভীর রাত পর্যন্ত ছাপাখানার খটর খটর শব্দের মাঝে তৈরি হচ্ছে সাদাকালোয় নির্বাচনী পোস্টার। এমনিতেই সারা বছর ব্যস্ত থাকে প্রেসগুলো। সরকারী বই ছাপা, গার্মেন্টসের প্যাকেজিংয়ের কাজ, ব্যাংক-বীমার কাগজপত্র এবং নতুন বছরের ক্যালেন্ডার তৈরিসহ সারাবছর বহুবিধ কাজ হয় ছাপাখানায়। সেই বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। এবার বাড়তি পাওয়া হিসেবে যুক্ত হয়েছে নির্বাচনী পোস্টার ছাপার কাজ। ফলে প্রিন্টিং প্রেসের অর্থনীতিতে বইছে সুবাতাস। জানা গেছে, প্রিন্টিং প্রেসের মূল বাণিজ্য গড়ে উঠেছে ঢাকায়। ফকিরাপুল, আরামবাগ, পুরান ঢাকার বাংলাবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য প্রেস রয়েছে। শুধু ঢাকায় রয়েছে ৩ হাজার প্রেস, বাকি ১ হাজার প্রেস বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জেলায় রয়েছে। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জহুরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনী পোস্টার ছাপার কাজ সাত দিনের। প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীরা সাদাকালো পোস্টার ছাপার জন্য প্রেসে আসছেন। এখন অর্ডারের চাপ রয়েছে। তিনি বলেন, সারাবছর যে কাজ হয় তার সঙ্গে নির্বাচনী পোস্টার ছাপার কাজটি বাড়তি পাওনা হিসেবে এসেছে। এ সময়টাতে সারাদেশের প্রেসগুলোতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাজ হবে। এই কাজ করতে এখন প্রেসের কর্মকর্তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বলেন, বছরের শুরুতে এমনিতেই প্রিন্টিং প্রেসে কাজ বেশি থাকে। এরপর এবার নির্বাচনী বছর। ফলে এ শিল্পের বাণিজ্য এখন বেশ ভালই হচ্ছে। জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি এবার বিএনপি এবং দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ফলে গত দশ বছরের মধ্যে এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। সব প্রার্থী ইতোমধ্যে পোস্টার, লিফলেট ও ব্যানার তৈরির জন্য প্রেসগুলোতে আসছেন। সবদিক বিবেচনায় যাদের মনোনয়ন নিশ্চিত ছিল তাঁরা বেশ আগেই নির্বাচনী পোস্টার করে রেখেছেন। রাজধানীর অলিগলি ইতোমধ্যে সাদাকালো পোস্টারে ভরে গেছে। এ কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ছাপাখানাগুলো নির্বাচনী পোস্টার তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, ছাপাখানা বা প্রেসগুলোর পাশাপাশি কাগজ, কালির চাহিদাও বেড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, পোস্টার ডিজাইনের সঙ্গে যারা জড়িত তারাও এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফকিরাপুলের প্রেসগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দম ফেলার সময় নেই। রাজধানীর আরামবাগ, ফকিরাপুল ও পুরানা পল্টন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি প্রেসেই ছাপা হচ্ছে নির্বাচনী পোস্টার। প্রেসের কর্মীরা জানান, সারা রাত তারা নির্বাচনী পোস্টার ছাপার কাজ করেন। কয়েকজন প্রেস মালিক জানালেন, নতুন কোন অর্ডার নেয়ার মতো সক্ষমতা তাদের প্রেসের নেই। এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি কাজ হবে বলে মনে করছেন প্রেস ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, গত নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস ও নির্বাচন বয়কটের কারণে বাণিজ্য কম হয়েছে। তবে এবার সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। সবচেয়ে বড় কথা এবার বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ হওয়ায় ব্যবসাও জমে উঠেছে। সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। এ কারণে কাজও বেড়েছে দেশের মুদ্রণ শিল্পে। ইতোমধ্যে এবারের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোটামুটি ভাল ব্যবসা হয়েছে। তবে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এবার বাজার বেশ চাঙ্গা। ফকিরাপুল গরম পানি গলির ছাপাখানার কর্মচারী জয়নাল জনকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনী পোস্টার ছাপার কাজ চলে গভীর রাত পর্যন্ত। সবাই দ্র‍ুত পোস্টার চাচ্ছেন।
×