ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগকে আবারও দেশ সেবার সুযোগ দিতে আহবান;###;ফের সরকার গঠন করে দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেয়ার ওয়াদা

নৌকা মানেই ভাগ্য বদল ॥ গুলশানের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

নৌকা মানেই ভাগ্য বদল ॥ গুলশানের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর গুলশানের বিশাল নির্বাচনী জনসভায় দাঁড়িয়ে শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নয়ন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও মানুষের কল্যাণের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও দেশ সেবার সুযোগ দিতে দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সারাদেশে নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে, নৌকার পক্ষে জোয়ার উঠেছে। ইনশাল্লাহ নির্বাচনে নৌকার জয় হবে। আমরা আবারও সরকার গঠন করে দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেব। আজ এ ওয়াদা রেখে যাচ্ছি। বিশাল এ জনসমুদ্রে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা এবং আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ধানের শীষ মানেই দুর্নীতি, জঙ্গীবাদ, অর্থপাচার, এতিমের টাকা আত্মসাত, গ্রেনেড হামলা, বোমাবাজি আর অগ্নিসন্ত্রাস। আর নৌকা মানেই স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি, উন্নয়ন, জনগণের ভাগ্য বদল, মানুষের কল্যাণ। যার শুভফল মানুষ ভোগ করছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা (বিএনপি-জামায়াত) ক্ষমতায় থাকতে সন্ত্রাস, খুন, দুর্নীতি, গ্রেনেড হামলা, অস্ত্র চোরাকারবারি, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করেছে, বিদেশে বিপুল অর্থ-সম্পদ পাচার করেছে, যারা এতিমের টাকা আত্মসাত করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে- তারা কোন মুখে মানুষের কাছে ধানের শীষে ভোট চায়? যারা মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করে না, তারা কিভাবে আবার ধানের শীষে ভোট চায়? আগামী নির্বাচনে দেশের মানুষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কোন পথে যাবে? বর্তমান উন্নয়ন, সমৃদ্ধির পথে, নাকি অতীতের মতো সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্ধকারের যুগে? ইনশাল্লাহ দেশের মানুষ নৌকার পক্ষেই থাকবে, নৌকাকেই বিজয়ী করবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় রাজধানী ঢাকাকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথাও জানান ঢাকাবাসীকে। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান ইয়ুথ ক্লাব মাঠে বিশাল এ নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীতে এই প্রথম আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মহানগর উত্তর থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদেরকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহবান জানান। আগামী ২৪ ডিসেম্বর সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কামরাঙ্গিরচর মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের পক্ষে ভোট চাইবেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণসংযোগের অংশ হিসেবে এদিন গুলশানে এসে ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। ঢাকা-১৭ আসনে নৌকার প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান (চিত্রনায়ক ফারুক), ঢাকা-১১ আসনের এ কে এম রহমতুল্লাহ, ঢাকা-১২ আসনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা-১৩ আসনের সাদেক খান, ঢাকা-১৪ আসলামুল হক, ঢাকা-১৫ আসনের কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা-১৬ আসনের মোঃ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা-১৮ আসনের এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এবং ঢাকা-১ আসনের প্রার্থী সালমান এফ রহমানকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের পক্ষে নৌকায় ভোট চাইলে জনসভায় উপস্থিত লাখো মানুষ দু’হাত তুলে ভোট দেয়ার অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় সংগঠনের সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহর সভাপতিত্বে ও উপ-প্রচার সম্পাদক আজিজুল হক রানার পরিচালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোঃ আবু কাওছার, ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-১৩ দলীয় প্রার্থী সাদেক খান, ঢাকা-১৬ আসনের দলীয় প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী সুলতান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক হেদায়েতউল্লাহ, বনানী থানার সভাপতি জসিম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মীর মোশাররফ হোসেন, উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান রহমান হৃদয় প্রমুখ। দুপুর আড়াইটায় জনসভার সময় নির্ধারিত করা থাকলেও জুমার নামাজের পর থেকেই মানুষের ঢল নামে গুলশান ইয়ুথ ক্লাব মাঠে। ঢাকা মহানগর উত্তরের সবগুলো আসন থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আসতে থাকে জনসভা স্থলে। নির্বাচন সন্নিকটে। এ কারণে প্রতিটি মিছিলেই ছিল নির্বাচনী আমেজ। রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশে বাদ্য-বাজনার তালে তালে নৌকার প্রতীক নিয়ে নেচে গেয়ে ইয়ুথ ক্লাব মাঠে জড়ো হন নেতাকর্মীরা। তাদের গায়ে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকার আদলে লাল-সবুজের পোশাক বর্ণিল করে তোলে জনসভাকে। প্রধানমন্ত্রী জনসভা স্থলে আসার আগেই মানুষের তীব্র স্রোতে জনসভা স্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। এরপরও যেন মিছিলে স্রোত থামে না। প্রধানমন্ত্রী বিকেল পৌনে চারটার দিকে যখন নির্বাচনী জনসভায় আসেন, তখন নির্বাচনী জনসভাটি রূপ নেয় রীতিমতো জনসমুদ্রে। গুলশানের ইয়ুথ ক্লাবের বিশাল মাঠ ছাপিয়ে আশপাশের সকল রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে দেখা যায়। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী যখন জনসভার মঞ্চে ওঠে দু’হাত নেড়ে সবাইকে স্বাগত জানান, তখন জনসমুদ্র থেকে নৌকার স্লোগানে স্লোগানে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা মার্কা মানেই উন্নতি, সমৃদ্ধি। নৌকা মানেই দেশের স্বাধীনতা, নৌকা মানেই জনগণের ভাগ্যকে উন্নীত করা। নৌকা মানে এদেশের মানুষের কল্যাণ হওয়া, যা চিরজীবন দেশবাসীর প্রাপ্য। কাজেই এটা বিবেচনা করে আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধি এনে দেয়ার প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, আমরা ঘোষণা দিয়েছি, আমরা দুর্নীতি দূর করব। মানুষের কল্যাণে কাজ করব। মানুষের উন্নয়ন করব। দেশের শান্তি, নিরাপত্তা, কল্যাণ ও দুর্নীতি দমন করার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আগামী ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও পরে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে বাংলাদেশ। সেই উদ্যাপন সামনে রেখে সরকার ইতোমধ্যে ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছে। সেই সুবর্ণজয়ন্তী আমরা তখনই পালন করতে পারব, যখন নৌকা মার্কায় ভোট পেয়ে আমরা সরকার গঠন করে জনগণের সেবা করতে পারব। দারিদ্র্য বিমোচন করে ‘উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা’ গড়তে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিতে ভোটারদের প্রতি আহবান জানান তিনি। নির্বাচন বানচাল ও সরকার উৎখাতের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল সন্ত্রাস-নাশকতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর নামে এরা পেট্রোল বোমা দিয়ে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। গাড়ি, ট্রেন, লঞ্চ পুড়িয়েছে, ট্রাক-বাসের ভেতরে থাকা ড্রাইভার-হেলপারকে আগুন দিয়ে অঙ্গার করে দিয়েছে। কোন মানুষের ন্যূনতম মানবিকতা থাকলে এভাবে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করতে পারত না। তারা মসজিদে আগুন দিয়েছে, কোরান শরিফ পুড়িয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থী, ছোট শিশুরা পর্যন্ত রেহাই পায়নি। মানুষ জীবন ভিক্ষা চেয়েছে, তারা দেয়নি। সরকার উৎখাতের নামে খালেদা জিয়া অফিসে বসে নির্দেশ দিয়ে এসব করিয়েছেন। যত রকমের অপকর্ম আছে সবই তারা করেছে। কিন্তু জনগণের প্রতিরোধের মুখে নাখে খত দিয়ে আদালতে হাজিরা দিয়ে ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এরা কোন মুখে এখন ধানের শীষে ভোট চায়? বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্মরণের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংস কায়দায় হত্যার মাধ্যমে জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার চক্রান্তের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর ৬ বছর আমাকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল জিয়াউর রহমান দেশে ফিরতে দেয়নি। আমার ছোট বোন শেখ রেহানাকে পাসপোর্ট পর্যন্ত দেয়া হয়নি। পরে আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। দেশে ফিরেই মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করি। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারে এসে উন্নয়ন কর্মকাÐ বন্ধ করে দেয়। আবারও পিছিয়ে দেয়া হয় দেশকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করে দেশের উন্নয়নে মনোযোগ দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন দুর্যোগ-দুর্ভিক্ষের দেশ নয়, সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেলের স্বীকৃতি পেয়েছে। আজকে কারও কাছে আমাদের হাত পেতে চলতে হয় না। বাজেট বাড়িয়েছি ৭ দশমিক ৬ ভাগ। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে এসে দেখি এই ঢাকা শহরেই পানির অভাব, বিদ্যুতের জন্য হাহাকার। দিনে ৭-৮ ঘণ্টা লোডশেডিং, রাস্তাঘাট নাই। ছিনতাই-জঙ্গীবাদ তো ছিলই। সব কিছু কাটিয়ে উঠেছি আমরা। ২০০৮ সালে যেখানে আমাদের বিদ্যুত ছিল ৩২০০ মেগাওয়াট, এখন আমরা ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। দেশে এখন কোন লোডশেডিং নেই। প্রধানমন্ত্রী এ সময় পানি শোধন এবং বিদ্যুত উৎপাদনে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি প্রদানের কথা উল্লেখ করে জনগণকে পানি ও বিদ্যুত ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, নিজেদের ভাগ্যবদল নয়, জনগণের ভাগ্যোন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আগে চিকিৎসার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে হতো। আজকে প্রত্যেকটি এলাকায় বড় বড় বিশেষায়িত হাসপাতাল করে দিয়েছি। ডিজিটালাইজেশনে সরকারের নানা কর্মকান্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রত্যেকের হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন। বিএনপির একজন মন্ত্রী ছিলেন, মোবাইল ব্যবসা করতেন। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে তখন একটা মোবাইল ফোন কিনতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা লাগত। মোবাইলে কল করলেও ১০ টাকা, ধরলেও ১০ টাকা। এখন সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট। আমরা এই সুযোগ করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মহানগরীকে যানজট মুক্ত করতে গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার করে দিয়েছি। ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ হচ্ছে। পাতাল ট্রেনের ব্যবস্থা করব। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করব। রাজধানীর আশপাশে অনেক ইউনিয়ন ছিল, সেগুলোকে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এনে দিয়েছি, যেন মানুষ নাগরিক সুবিধা পায়। আমরা সুন্দর ঢাকা গড়ে তুলব, বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থায় আমরা পরিবর্তন এনেছি। বিদ্যুতের তারগুলোকে আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেব। ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করতে যা কিছু করার দরকার, আমরা করে দেব। কারণ আমাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে এ দেশের মানুষের উন্নয়ন করা। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বলেন, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদের স্থান বাংলাদেশে নেই। এই গুলশানেই হলি আর্টিজানে হামলা হয়েছিল। অনেকে ভেবেছিল এই অবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা দ্রæত সেই অবস্থা থেকে উদ্ধার করেছি। হামলাকারী জঙ্গীদের দমন করে অনেককে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছি। এরপর কঠোর হাতে জঙ্গীবাদ দমন করেছি। মাদক নির্মূলে অভিযান শুরু করেছি। তিনি এ সময় প্রত্যেক সন্তানের বাবা-মা, অভিভাবক, শিক্ষকসহ সবার প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনার ছেলে কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে, স্কুল-কলেজে অনুপস্থিত থাকে কি না, কোন বিপথে চলে যাচ্ছে কি না, তা নজর রাখবেন। আমরা চাই দেশের তরুণ সমাজ সুন্দরভাবে গড়ে উঠুক। সেজন্যও আমরা নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি এ সময় দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের মানুষ মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে। জীবনমান উন্নত হয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, প্রতিটি মানুষের বেতন-ভাতা বেড়েছে। আয়-রোজগারও বেড়েছে। আমরা হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতি করে না আওয়ামী লীগ, করবেও না। দেশের মানুষের কল্যাণ ও তাদের ভাগ্যে বদলের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি, যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। আর পদ্মা সেতুসহ দশটা মেগাপ্রকল্প আমরা গ্রহণ করেছি। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার সুযোগ দিতে সবাই নৌকায় ভোট দিন। নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জনসেবা করার সুযোগ দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এতিমের অর্থ আত্মসাত করি না। এতিমের অর্থ আত্মসাত করেছিলেন (বিএনপি প্রধান) খালেদা জিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে এই মামলা দিয়েছিল তাঁরই পছন্দের ইয়াজউদ্দিন আহমেদ-ফখরুদ্দিন আহমেদ-মইন উ আহমেদের সরকার। সেই মামলায় খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। এতিমের টাকা চুরি করলে তো শাস্তি ভোগ করতেই হবে, এটা কোরানেরও বিধান। খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো (প্রয়াত) অর্থপাচার করে ধরা পড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাঁর এক ছেলের অর্থ আমরা দেশে ফেরত এনেছি। যত অপকর্ম করা যায়, তা-ই তারা করেছে। আসলে ধানের শীষ মানেই দুর্নীতি, জঙ্গীবাদ, অর্থপাচার, এতিমের টাকা আত্মসাত। আর নৌকা মানেই স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি, জনগণের ভাগ্যবদল ও কল্যাণ, যার শুভফল মানুষ ভোগ করছে। আওয়ামী লীগ কেবল বিত্তশালীদের দিকে তাকায় না, নিম্নবিত্তের লোকজনের জীবনমান উন্নয়নের জন্যও কাজ করে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, এই এলাকায় বস্তিবাসী রয়েছেন। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কিন্তু আপনারা যে অবস্থায় বসবাস করছেন, এই অবস্থা থাকবে না। আপনারা যেন ফ্ল্যাটে ভাড়া করে থাকতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আমরা করে দেব। আমরা বহুতল ভবন করে সেখানে স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করব। সেইসব ফ্লাট কেউ দৈনিক হিসেবে ভাড়া দিতে চাইলে দিতে পারবেন, সাপ্তাহিক হিসেবে ভাড়া দিতে চাইলেও দিতে পারবেন, মাস হিসেবে ভাড়া দিতে চাইলে সেটাও পারবেন। যে যেভাবে চান, সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা করব। আমাদের লক্ষ্য একটাই, ক্ষমতায় এলে নিম্ন আয়ের মানুষ যেন আরেকটু ভালভাবে বসবাস করতে পারে, সে ব্যবস্থা করে দেব। জনসভার শেষ পর্যায়ে ঢাকার বিভিন্ন আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আসন্ন নির্বাচনে তাদেরকে বিজয়ী করতে নৌকা মার্কায় ভোট চান। এ সময় উপস্থিত লাখো মানুষ দু’হাত তুলে এবং মুখে নৌকা ও জয় বাংলার স্লোগান তুলে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
×