ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৮০ দেশে রফতানি হচ্ছে সফটওয়্যার ॥ ঢাকা বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ আউটসোর্সিং শহর

তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ১ বিলিয়ন ডলার আয়ের হাতছানি

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

  তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ১ বিলিয়ন ডলার আয়ের হাতছানি

রহিম শেখ ॥ দেশে বর্তমানে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)। এটি সরকারের অগ্রাধিকার খাতের অন্যতম। সেই বিবেচনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে সরকার। তথ্য ও প্রযুক্তির সেবার পরিধি দ্র‍ুত বিস্তারের ফলে দেশে অসংখ্য বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ২৬তম আকর্ষণীয় আইটি আউটসোর্সিং গন্তব্যের দেশ এবং আর্থিকভাবে প্রথম আকর্ষণীয় তথ্যপ্রযুক্তি গন্তব্যের দেশ। বাংলাদেশ সেরা ৩০টি অফশোর তথ্যপ্রযুক্তি গন্তব্যের একটি। রাজধানী ঢাকা বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ আউটসোর্সিং শহর। দেশে গত ১০ বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে এক শ’ গুণের বেশি। এক দশক ধরে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা রফতানি করছে বাংলাদেশ। রফতানি করছে ওয়েবসাইট তৈরি ও ডিজাইন, মোবাইল এ্যাপস, গেমস, এ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম, ডেটা এন্ট্রি ইত্যাদি। এই মুহ‚র্তে বিশ্বের ৮০ দেশে এসব সফটওয়্যার রফতানি করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক এ খাত থেকে রফতানিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে। চলতি বছর শেষে তথ্য ও প্রযুক্তি রফতানি খাতে ১ বিলিয়ন ডলার আয় হবে বলে আশা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে এই খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলারের (৪০ হাজার কোটি টাকা) পণ্য ও সেবা রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। গত ১০ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অনেক অগ্রগতি দেখিয়েছে বাংলাদেশ। তথ্য ও প্রযুক্তির আশীর্বাদে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে বাংলাদেশে। পৃথিবীতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ এখন এক নম্বরে। মোবাইল ফোনে লেনদেন হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ যেভাবে গ্রহণ করেছে তা অসাধারণ। ২০১৩ সালের অক্টোবরে তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) মোবাইল ফোন সেবা চালু হওয়ার প্রায় সাড়ে চার বছর পর চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি চালু হয় চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) মোবাইল ফোন সেবা। সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে ২০২১ সালে পঞ্চম প্রজন্ম বা ফাইভজি মোবাইল সেবা চালু করা। অপারেটরদের তথ্য অনুসারে, দেশে এ পর্যন্ত থ্রিজি গ্রাহকের সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি। ফোরজি গ্রাহকও ৫৮ লাখের কাছাকাছি। সাহসী সিদ্ধান্ত ও দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে অবশেষে মহাকাশে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ ও স¤প্রচার স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’। এর মাধ্যমে স্যাটেলাইটের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ ছাড়া ‘বঙ্গবন্ধু-১’ নামটির মাধ্যমেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে আরও স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। দেশের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলো থেকে এখন প্রতি মাসে ৪৫ লাখ মানুষ ৬০ ধরনের সেবা গ্রহণ করতে পারছে। গ্রামের এক লাখের বেশি তরুণ-তরুণীকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশে সম্ভাবনার আলোচনা এখন বিশ্বজুড়ে। শুরু হয়েছে ‘ইনফো সরকার-৩’ প্রকল্প। এর মাধ্যমে দেশের দুই হাজার ৬০০ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) চলতি বছরের মধ্যেই ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্ক পৌঁছে যাবে। এতে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার বা ইউডিসিগুলো উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পাবে। ইউডিসির উল্লেখযোগ্য সরকারী সেবাগুলো হলোÑ জমির পর্চা, জীবন বীমা, পল্লী বিদ্যুতের বিল পরিশোধ, সরকারী ফরম, পাবলিক পরীক্ষার ফল, অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, অনলাইনে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ভিজিএফ-ভিজিডি তালিকা, নাগরিক সনদ, নাগরিক আবেদন, কৃষি তথ্য, স্বাস্থ্য পরামর্শ। বেসরকারী সেবাসমূহ হলোÑ মোবাইল ব্যাংকিং, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ই-মেইল, চাকরির তথ্য, কম্পোজ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংরেজী শিক্ষা, ভিসা আবেদন ও ট্র্যাকিং, ভিডিওতে কনফারেন্স, প্রিন্টিং, স্ক্যানিং, ফটোকপি এবং লেমিনেটিং। এছাড়া এ্যাপস ও গেমিং ডেভেলপমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি প্রকল্পের যাত্রা মহেশখালীকে ডিজিটাল দ্বীপে রূপান্তরের কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। সারা দেশে তৈরি করা হয়েছে ২ হাজার ৯৭২টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার। মোবাইল নম্বর পোর্ট্যাবিলিটি (এমএনপি) যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভ‚মিকম্পে রাজধানী ঢাকার চরম বিপর্যয় ঘটে গেলে জাতীয় তথ্যভান্ডারে রক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য হারানোর ভয় আর নেই। দেশের সবচেয়ে কম দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবে যশোরকে চিহ্নিত করে স¤প্রতি সেখানে ‘ইনফো-সরকার’ প্রকল্পের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার। এই সেন্টারে ব্যাকআপ হিসেবে জাতীয় তথ্যভান্ডারের সব তথ্য জমা থাকছে। এ ধরনের ব্যবস্থা এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম। কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে। এই হাইটেক পার্ককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, কল সেন্টার এবং টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। এখানে তৈরি হবে বিশ্বমানের পণ্য। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে দেশব্যাপী নির্মীয়মাণ ২৮টি হাইটেক ও আইটি পার্কে প্রায় তিন লাখ চাকরি সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। জানা গেছে, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্প গ্রহণের পর সবচেয়ে বেশি নজর দেয় সরকারী সেবা খাতে। আট বছর আগে সরকারী সেবা খাতে মাত্র ৩ ভাগ মানুষ ডিজিটাল বা অনলাইন মাধ্যমে সেবা লাভ করত। এই ক্ষেত্রে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য সরকারের তথ্য সেবা খাত। বর্তমানে দেশে সরকারী সেবা ক্ষেত্রে ৩৫ ভাগ মানুষ ডিজিটাল সেবা লাভ করছে। সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সেবা ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ সেখানে পাওয়া যাচ্ছে। ২০১৫ সালে সরকারের উদ্যোগে স্থাপন করা হয়েছে ৬০ হাজার বর্গফুটের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। সেখানে ইতোমধ্যে ১৬টি কোম্পানি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। আরও ৩৪টি কোম্পানি সেখানে দ্রুতই তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। এ সময়ের মধ্যে সারাদেশে ৫ হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এই সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে ২০০টির বেশি সরকারী সেবা পাচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ। সেই সঙ্গে পৃথকভাবে ৮ হাজার পোস্ট অফিসে স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল সেন্টার। সেন্টারগুলোর মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদানসহ বেশকিছু সেবা পরিচালনা করা হচ্ছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ২০০৯-১০ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১০-১১ অর্থবছরে গিয়ে দাঁড়ায় ৭ কোটি ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা রফতানি ছিল প্রায় ১০ কোটি ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল প্রায় ৩৫ কোটি ডলার। পরবর্তী অর্থাৎ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রফতানি ছিল সাড়ে ৪৪ কোটি ডলার। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানি ছিল প্রায় ৭০ কোটি ডলার। ২০১৮ সাল শেষে এই খাতে বাংলাদেশের রফতানি আয় ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের আয়কে ‘ডিজিটাল বিপ্লব’ মনে করছেন প্রযুক্তিবিদরা। বেসিসের সাবেক সভাপতি শামীম আহসান জনকণ্ঠকে জানান, তথ্য ও প্রযুক্তি খাত বর্তমানে শীর্ষস্থানীয় ১৫টি রফতানি খাতের একটি। গত দুই অর্থবছরে গড়ে ৫০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধিও হয়েছে এ খাতে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে রফতানি আয় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে জানান তিনি। জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৫০টি প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা রফতানি করছে। যেসব দেশে বেশি রফতানি হচ্ছে সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ভারত, মালয়েশিয়া, জাপানসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ। গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গার্টনারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো যেমন হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্ক, সবখানে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা এবং দক্ষ জনশক্তি বাড়াতে পারলে আরও দ্রুত সফটওয়্যার খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব। বর্তমানে সফটওয়্যার খাতের যেসব পণ্য রফতানি হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ওয়েবসাইট তৈরি ও ডিজাইন, মোবাইল এ্যাপস, গেমস, এ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম, ভিওআইপি এ্যাপ্লিকেশন, ডেটা এন্ট্রি, গ্রাফিক ডিজাইন, প্রি-প্রেস, ডিজিটাল ডিজাইন, সাপোর্ট সেবা, কাস্টমাইজড এ্যাপ্লিকেশন তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ। বর্তমান সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জনকণ্ঠকে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে বাংলাদেশের সাফল্য অসাধারণ। বাংলাদেশ আইসিটিতে এখন উপরের সারির দেশ। বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এটকারনারির মতে, বাংলাদেশ ২৬তম আকর্ষণীয় আইটি আউটসোর্সিং গন্তব্যের দেশ এবং আর্থিকভাবে প্রথম আকর্ষণীয় তথ্যপ্রযুক্তি গন্তব্যের দেশ। গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গার্টনারের মতে, বাংলাদেশ সেরা ৩০টি অফশোর তথ্যপ্রযুক্তি গন্তব্যের একটি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেস ওডেস্কের মতে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ আউটসোর্সিং শহর। বাংলাদেশে শতাধিক আইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে ১৫ হাজারের বেশি আইটি পেশাজীবী তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশে নিবন্ধিত আট শতাধিক আইটি কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানিগুলো থেকে ৩০ কোটি ডলারের বেশি বার্ষিক রাজস্ব আসে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ বছরে ১২ দশমিক ৫ কোটি ডলার রফতানি করে থাকে, যার ৬৫ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে করে থাকে। বাংলাদেশের তরুণদের কাজ বিশ্বমানের হওয়ায় অনেক আইটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসছে। জানা গেছে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যাপক স¤প্রসারণে ২০১০ সালে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইতোমধ্যে ৫২টি আইটি কোম্পানি দুই হাইটেক পার্কে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। অন্যদিকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব (পিপিপি) মডেলে হাইটেক পার্ক (সিলেট ইলেকট্রনিকস সিটি) গঠনের মৌলিক অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়া প্রতিটি জেলায় হাইটেক পার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ময়মনসিংহ, জামালপুর, রংপুর, নাটোর, খুলনা, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ও ঢাকার কেরানীগঞ্জে কাজ চলছে। হাইটেক পার্ক স্থাপনে ৭ বছর কর নয় ॥ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য কর সুবিধা আরও বাড়িয়েছে সরকার। এখন থেকে যে কোন হাইটেক পার্কে কোন কোম্পানি স্থাপন করা হলে প্রথম সাত বছর কোন কর দিতে হবে না। ওই সাত বছর শতভাগ কর অব্যাহতি পাবে ওই তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলো। এর পরের তিন বছর বার্ষিক যে আয় হবে, সেই আয়ের ৩০ শতাংশের ওপর শুধু কর দিতে হবে। বাকি ৭০ শতাংশ আয়ের ওপর ওই তিন বছর কর অব্যাহতি সুবিধা পাওয়া যাবে। স¤প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে এনবিআর হাইটেক পার্কে স্থাপিত তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশেষ কর সুবিধা ঘোষণা করে। ওই সময় এনবিআরের পক্ষ থেকে কোম্পানি স্থাপনের প্রথম তিন বছরের জন্য শতভাগ কর অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হয়েছিল। এ ছাড়া চতুর্থ বছরে ৮০ শতাংশ, পঞ্চম বছরে ৭০ শতাংশ, ষষ্ঠ বছরে ৬০ শতাংশ, অষ্টম বছরে ৪০ শতাংশ, নবম বছরে ৩০ শতাংশ এবং দশম বছরে ২০ শতাংশ হারে কর অব্যাহতি মিলত। এখন নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কোম্পানি স্থাপনের প্রথম সাত বছর মিলবে শতভাগ কর অব্যাহতি সুবিধা। আর পরের তিন বছর আয়ের মাত্র ৩০ শতাংশের ওপর কর দিতে হবে। এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কর অব্যাহতি সুবিধা পেতে কোম্পানিগুলোকে কিছু শর্ত পালন করতে হবে। প্রথমত, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অবশ্যই কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, আয়কর অধ্যাদেশের ৩৫ ধারা অনুযায়ী যথাযথভাবে হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে এবং ৭৫ ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন সংশ্লিষ্ট আয়কর কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করতে হবে।
×