ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাকলিয়াবাসীর ভোটেই জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে চট্টগ্রাম-৯ আসনের

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

বাকলিয়াবাসীর ভোটেই জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে চট্টগ্রাম-৯ আসনের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বন্দরনগরীর মর্যাদার আসন চট্টগ্রাম-৯ এ বাকলিয়াবাসীর ভোটই জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দেয় বলে হিসাব থেকে ওই এলাকার ভোটারদের মন জয়ে মরিয়া এখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আসনটিতে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বিএনপির প্রার্থী নগর কমিটির সভাপতি শাহাদাত হোসেন। নওফেল নিজে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে কারাগারে থাকা শাহাদাতের পক্ষে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তার দলের নেতারা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১৫ থেকে ২৩ এবং ৩১ থেকে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯১ হাজার ৬১২। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে যে ছয়টি আসনে সম্পূর্ণ ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে, তার একটি চট্টগ্রাম-৯। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে অতীতে টানা দুইবার জয়ী হতে পারেননি কেউ। এবার প্রধান দুই দলের প্রার্থীই নতুন। ১৯৯১ সালে আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান। ১৯৯৬ সালে নোমানকে হারিয়ে জিতেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত এম এ মান্নান। ২০০১ সালে মান্নানের কাছ থেকে আসন পুনরুদ্ধার করেন ধানের শীষের নোমান। আসন সীমানায় পরিবর্তন আসার পর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলই প্রার্থী বদলে ফেলে। নৌকার মাঝি হন নুরুল ইসলাম বিএসসি ও ধানের শীষে আসেন শামসুল আলম। দুই শিল্পপতির প্রতিদ্ব›িদ্বতায় জয়ী হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম বিএসসি। ২০১৪ সালের বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলে জিয়া উদ্দিন বাবলু সংসদ সদস্য হন। এবার ফিরে এলো নৌকার প্রার্থী। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ জিতলেও বাকলিয়া এলাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল বিএনপির প্রার্থী। চট্টগ্রাম-৯ আসনের ১৪৪ কেন্দ্রের মধ্যে এবার বাকলিয়া এলাকায় রয়েছে ৩৯টি কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৮০। বেশ কয়েকটি সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও ভয়েস অব আমেরিকার চট্টগ্রাম প্রতিনিধি হাসান ফেরদৌস বলেন, বাকলিয়া এলাকার ভোটই এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, এ আসনের প্রায় অর্ধেক ভোটার বাকলিয়ার। এখানে নিম্ন আয়ের লোকজনের বসবাস বেশি। তাদের অধিকাংশই চট্টগ্রামের বাইরে থেকে এসে বসতি করেছে। তাদের মধ্যে ‘রাজনৈতিক সচেতনতা’ কম থাকায় সেখানে ভোট ‘বেচাকেনার’ কাজও হয় বলে দেখে এসেছেন এই সাংবাদিক। তিনি বলেন, যিনি ওই এলাকা থেকে সর্বোচ্চ ভোট সংগ্রহ করতে পারবেন, তিনিই জয়ী হবেন। এই আসনের ভোটাররা বলছেন, রাজনৈতিক আদর্শগত ভিন্নতা থাকলেও তরুণদের কাছে দুই প্রার্থীই গ্রহণযোগ্য। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে এক দশকের বেশি সময় ধরে সক্রিয় শাহাদাত। চিকিৎসকদের এই নেতা ২০১১ সালে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। ২০১৭ সালে দায়িত্ব পান সভাপতির। নওফেল বেশি পরিচিত প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে হিসেবে। তার বাবার অবদান তার জন্য বড় পুঁজি হিসেবেই দেখছেন স্থানীয়রা। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন দলের তরুণ নেতা হাসান মনসুর। তিনিও বাকলিয়ার ভোটকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। মনসুর বলেন, এই এলাকায় স্থায়ী বাসিন্দাদের চেয়ে বাইরে থেকে এসে বসতি করা লোকজনের সংখ্যা বেশি। তাদের ভোটই মূলত প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ে ভূমিকা রাখে। শাহাদাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক বদরুল আনোয়ার বলেন, আসনের ১৪টি ওয়ার্ডের মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক বাকলিয়ার তিনটি ওয়ার্ডে। তিনি বলেন, এ আসনে কিছু ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ বেশি ভোট পায়। আর কিছু ওয়ার্ডে বিএনপি-আওয়ামী লীগের মিক্সড ভোট। বাকলিয়ার ভোট যে প্রার্থী বেশি নিতে পারবেন, তিনিই জয়ী হবেন। বাকলিয়ার তিনটি ওয়ার্ডকে ‘নিজেদের দুর্গ’ মনে করছেন এই বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, বাকলিয়া এলাকার লোকজনের মধ্যে সব সময় আওয়ামী লীগ বিরোধিতা বেশি। বিভিন্ন সময়ের নির্বাচনের ফল দেখলে বোঝা যায়, বাকলিয়া এলাকায় বিএনপি জয়ী হয়।’ আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলছেন, বাকলিয়ায় এক সময় আওয়ামী লীগ পিছিয়ে থাকলেও সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছেন তারা। তিনি বলেন, এ এলাকায় অনেক বস্তি ও সেখানে অনেক পোশাক শ্রমিকের বাস। রাজনৈতিক সচেতনতা না থাকায় সেখানকার ভোট কিছুটা এদিক-ওদিক হয়। তবে ওই এলাকায় গত ১০ বছরে অনেক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। তাছাড়া গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোসহ প্রধানমন্ত্রী যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তার সুফল নির্বাচনে পড়বে। এছাড়া নতুন প্রজন্মের ভোটারদের রায় পাওয়ার আশা রেখে বাবুল বলেন, নতুন প্রজন্মের তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আগ্রহ বেশি। এ সরকারের আমলে এ ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে, তাতে তারা আমাদের পক্ষেই থাকবেন। চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও ছয়টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রয়েছে। নেই কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এই আসনে ভোটের লড়াইয়ে আছেন কাস্তে প্রতীকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মৃণাল চৌধুরী, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আবু আজম, চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, বটগাছ প্রতীকে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মৌলভী রশিদুল হক, বাইসাইকেল প্রতীকে জাতীয় পার্টির (জেপি) মোরশেদ সিদ্দিকী, হাতপাথা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ আমজাদ হোসেন।
×