ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘দেবী’ চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

 ‘দেবী’ চলচ্চিত্রের  বিরুদ্ধে অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত ‘দেবী’ চলচ্চিত্রে ব্যাপকভাবে ধুমপানের দৃশ্য ব্যবহারে আইনী লড়াইয়ে যাচ্ছে তামাকরিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা। আইন অনুযায়ী ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ হলেও চলচ্চিত্রে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বার বার আনা হয়েছে ধূমপানের দৃশ্য। ব্যবহার করা হয়েছে নিজস্ব মনগড়া সতর্কবাণী। এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে চলচ্চিত্রে যে ফাস্টলুক পোস্টার প্রকাশ হয়, তাতেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করে ধূমপানের বিতর্কিত ছবি ব্যবহার করা হয়। তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর প্রতিবাদের মুখে সেটি পরিবর্তন করা হয়েছিল। অথচ মূল চলচ্চিত্র মুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রতি ঠিক একই অবহেলা প্রদর্শন করেছে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা ২০১৭ সালের ৬.৯-এ চলচ্চিত্রে তামাক ও তামাকজাত পণ্য সেবন দেখানো যাবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে চরিত্রের প্রয়োজনে সিগারেট সেবন প্রদর্শন আবশ্যক হলে এ সংক্রান্ত আইন-বিধির বিধান অনুযায়ী এসবের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে দর্শকদের অবহিত করতে হবে মর্মে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫-এর ৫(ঙ) ধারায় বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বা লভ্য ও প্রচারিত চলচ্চিত্র, নাটক এবং প্রামাণ্যচিত্রে ধূমপান ও অন্যান্য তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে কাহিনীর প্রয়োজনে এমন কোন দৃশ্য অন্তর্ভুক্ত করা হলে, সে ক্ষেত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিরুতসাহিতকরণে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০১৫ দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে সতর্কীকরণ বার্তা জুড়ে দেয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। বিধিমালায় ৫(ক) ধারা বলছে, ‘তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রদর্শনকালে পর্দার মাঝখানে পর্দার আকারের অন্তত এক পঞ্চমাংশ স্থান জুড়িয়া কালো জমিনের ওপর সাদা অক্ষরে বাংলা ভাষায় ‘ধূমপান/তামাক সেবন মৃত্যু ঘটায়’ শীর্ষক সতর্কবাণী প্রদর্শন করিতে হইবে এবং উক্তরূপ দৃশ্য যতক্ষণ চলিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সতর্কবাণী প্রদর্শন অব্যাহত রাখিতে হইবে। বিধিমালা ৫(খ) ধারা অনুযায়ী, টেলিভিশনে প্রচারিত চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য রহিয়াছে এইরূপ অংশ দুইটি বিজ্ঞাপন বিরতির মাঝখানে প্রচারের ক্ষেত্রে প্রথম বিজ্ঞাপন বিরতির পর অর্থাৎ উক্ত অংশ আরম্ভ হইবার পূর্বে এবং দ্বিতীয় বিজ্ঞাপন বিরতির পূর্বে অর্থাৎ উক্ত অংশ শেষ হইবার পর সম্পূর্ণ পর্দা জুড়িয়া কালো জমিনের ওপর সাদা অক্ষরে বাংলা ভাষায় ‘ধূমপান/তামাক সেবন মৃত্যু ঘটায়’ শীর্ষক সকর্তবাণী অন্যূন ১০(দশ) সেকেন্ড সময় ধরিয়া প্রদর্শন করিতে হইবে’। বিধিমালা ৫(গ) ধারা অনুযায়ী ‘প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য রহিয়াছে এইরূপ সিনেমা আরম্ভ হইবার পূর্বে, বিরতির পূর্বে ও পরে এবং সিনেমা প্রদর্শনের শেষে অন্যূন ২০বিশ) সেকেন্ড সময় পর্যন্ত সম্পূর্ণ পর্দা জুড়িয়া ‘ধূমপান/তামাক সেবন মৃত্যু ঘটায়’ শীর্ষক সতর্কবাণী বাংলা ভাষায় প্রদর্শন করিতে হইবে’। ‘কোন ব্যক্তি এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনুর্ধ তিন মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড দন্ডনীয় হবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুনঃ একই ধরনের অপরাধ করলে উক্ত দন্ডের দ্বিগুণ হারে দন্ডনীয় হবেন’। গত ১৯ অক্টোবর ২০১৮ থেকে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটির প্রদর্শন শুরু হলেও ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ও এর বিধিমালার এই সুস্পষ্ট নির্দেশনাগুলো মানা হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, চলচ্চিত্রের পরিবেশক জাজ মাল্টিমিডিয়ার অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ১১ অক্টোবর যে ট্রেইলার মুক্তি দেয়া হয়, তাতেও এই বিধিমালা মানা হয়নি। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট মিসির আলী বাংলাদেশে কিশোর ও তরুণ পাঠকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এক জনপ্রিয় চরিত্র। একাধারে নিষ্ঠাবান পাঠক, বিজ্ঞানমনস্ক পরিশ্রমী গবেষক, নিখুঁত পর্যবেক্ষক এবং অনন্য রসবোধের অধিকারী এই মিসির আলী। ‘দেবী’ চলচ্চিত্রে মিসির আলীর যেমন চিত্রায়ন হয়েছে, তেমনটা চালু থাকলে মিসির আলীর চরিত্র অনুসরণ করা অসংখ্য কিশোর ও তরুণভক্তরা ধূমপানকেও উপরিল্লেখিত গুণাবলীর একটি অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হিসেবে ধরে নিতে পারেন, যা সন্দেহাতীতভাবে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যকে চরম ঝুঁকিতে ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
×