ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সোনালি আঁশের সুদিন

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

 সোনালি আঁশের সুদিন

স্বর্ণযুগ ফিরে এসেছে সোনালি আঁশ পাটের। বর্তমানে পাট থেকে তৈরি হচ্ছে ২৩৫ রকমের আকর্ষণীয় ও মূল্যবান পণ্য। সবচেয়ে বড় কথা, পাট থেকে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব পচনশীল পলিথিন। বর্তমানে যে প্লাস্টিক পলিথিন দেশে ও বিদেশে যথেচ্ছ ব্যবহৃত হচ্ছে, তা প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য সমূহ ক্ষতিকর। শুধু স্থলভাগেই নয়, সাগর-মহাসাগর পর্যন্ত পলিথিন দূষণে জর্জরিত, পরিবেশের জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে অবস্থায় বিকল্প হিসেবে পাটের পলিথিন ব্যবহারের অত্যজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্ববাজারে পাটের ব্যাগের চাহিদা রয়েছে ৫০০ বিলিয়ন পিসের। এর ১০ শতাংশ বাজার দখল করতে পারলে বছরে আয় করা সম্ভব ৫০ হাজার কোটি টাকা। দেশে উৎপাদিত পাটপণ্য রফতানি হচ্ছে ১১৮টি দেশে। বিশ্বখ্যাত ভোগ্যপণ্য প্রতিষ্ঠান এইচএনএম, ওয়ালমার্ট, জারা আমদানি করছে বাংলাদেশী পাটপণ্য। গত এক দশকে পাটপণ্য রফতানি বেড়েছে ১৭৫ শতাংশ। বিশ্বে কাঁচাপাটের ৫৫ শতাংশ উৎপন্ন হয় ভারতে, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ। তবে পাটখাতের বৈশ্বিক রফতানি আয়ের ৭২ শতাংশ এখন বাংলাদেশের দখলে। বিশ্বের বৃহৎ পাঁচটি মোটরগাড়ি উৎপাদক কোম্পানি তাদের বিলাসবহুল গাড়ির অভ্যন্তরীণ কাঠামো ও সাজসজ্জার বড় একটি অংশ হিসেবে ব্যবহার করছে পাটজাত পণ্য, যা টেকসই, দৃষ্টিনন্দন ও আরামদায়ক। বিশ্বে পাটের বাজার পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ন্যাচারাল ফাইবার ওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে এই তথ্য। এর পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঘোষণা দিয়েছে, ২০১৯ সালের মধ্যে সদস্যভুক্ত সব দেশ পণ্যের মোড়কসহ বহনের জন্য সব ব্যাগে প্লাস্টিক ও কৃত্রিম আঁশজাত উপজাত দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধ করবে। এর পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে পাটের সোলা বা পাট কাঠি থেকে আহরণকৃত কয়লা তথা ছাই রফতানি হচ্ছে বিদেশে এবং ব্যবহৃত হচ্ছে ফটোকপি মেশিনের কালি তৈরিতে। এর ফলে বিশ্ব বাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানিতে দেখা যাচ্ছে উর্ধগতি, যা বাংলাদেশের জন্য আশাব্যঞ্জক নিঃসন্দেহে। তবে সুখবর দিয়েছেন বাংলাদেশ জুট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। তারা পাটের জন্মরহস্যের (জেনোম) তথ্য দিয়ে উদ্ভাবন করেছেন নতুন জাতের পাটবীজ, যা থেকে প্রায় তুলার সুতার মতো স্বচ্ছ আঁশ উৎপাদন করা সম্ভব হবে অচিরেই। এই সুতা দিয়ে উন্নতমানের জামদানিসদৃশ কাপড় উৎপাদন করা সম্ভব। উৎপাদনও ভাল, প্রতি হেক্টরে তিন টনের বেশি। তদুপরি আবাদের এক শ’ দিনের মধ্যে আঁশ আহরণ সম্ভব হবে পাট থেকে। ধানের পরই বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী কৃষিপণ্য পাট। পাটের জেনোম তথা বংশগতির মানচিত্র উদ্ভাবন করে বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম ও তার দল তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সারা বিশ্বে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পাটের মেধাস্বত্ব তথা প্যাটেন্ট রাইট সুরক্ষার জন্য আবেদনও করেছে আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে। এই আবিষ্কার ও স্বত্বাধিকারের ফলে বাংলাদেশ উফশী ও উন্নত জাতের পাট উৎপাদনের পাশাপাশি অতি সূ² পাটতন্তু তৈরি করে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় একচ্ছত্র প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হতে পারে। তবে এর জন্য চাই পাট নিয়ে আরও উচ্চ ও উন্নততর নিরন্তর গবেষণা এবং এর সঠিক ব্যবহার। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কর্মরত বিজ্ঞানীদের জন্য চাই আরও প্রণোদনা ও অনুপ্রেরণা। আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞান গবেষণাগার স্থাপনে বাড়াতে হবে আর্থিক বরাদ্দ। আর তাহলেই বিজ্ঞান গবেষণায় ইচ্ছুক মেধাবী ও প্রতিভাবানদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে।
×