ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও নৌকা

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

আবারও নৌকা

আর এক সপ্তাহ পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশজুড়ে চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার-প্রচারণা। ভোটারের দ্বারে দ্বারে প্রার্থীদের উপস্থিতি মানুষের মধ্যে এক নয়া জাগরণ তৈরি করেছে। উৎসাহ-উদ্দীপনা দেশের মানুষের মধ্যে প্রকট হয়ে উঠেছে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এখন নির্বাচনমুখী। সব পথ এসে মিলিত হচ্ছে ভোট কেন্দ্রের দিকে। আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক চলছে জোরেসোরে। এবারের নির্বাচন দেশবাসীর জন্য ১৯৭০ সালের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধিকার ও ছয় দফা আদায়ের দাবিতে সেদিন বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে এনেছিল। সাতচল্লিশ বছর পর এবার সামনে এসে দেখা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবার রথে চলবে নাকি পাকিস্তানী ভাবধারায় আবার ফিরে যাবে। তাই দেশের মানুষকে সচেতন করে তোলায় সচেষ্ট বিভিন্ন স্তরের মানুষ। মানুষ ক্ষুব্ধ মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীর দায়ে চিহ্নিত ও আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচ্য জামায়াতে ইসলামীর বিএনপির বক্ষলগ্ন হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ। স্বাধীনতার সাতচল্লিশ বছর পরও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক ছাউনিতে জন্ম নেয়া রাজনৈতিক দলের পাকিস্তানী ভাবধারার বিপরীতে গণমানুষের ও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির বিকাশ বাংলার মানুষ চায়। গত এক দশকে দেশ উন্নয়নের পথ ধরে যতদূর এগিয়েছে, তা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। দেশের সরকারী ও বেসরকারী খাতের বিকাশমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার স্বার্থে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার পক্ষে অন্যান্য পেশজীবীর মতো ব্যবসায়ীরাও চায় শেখ হাসিনার সরকার আরেকবার ক্ষমতাসীন হোক। তারা মনে করে বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা, প্রবৃদ্ধি দুই ডিজিটে নিয়ে যাওয়া, বেসরকারী বিনিয়োগ আকৃষ্টে সরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর, রফতানি বাড়াতে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাড়াতে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকা দরকার বলে মনে করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সরকারের ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অর্জন বাধাগ্রস্ত হওয়ারও আশঙ্কা করছে এই সংগঠনটি। ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে’ শীর্ষক ব্যবসায়ী সম্মেলনে প্রধান অতিথি শেখ হাসিনাও বলেছেন, উন্নয়ন যেন অব্যাহত রাখতে পারি, তাই জনগণের সেবা করার জন্য আরেকবার সুযোগ চাই। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেনও, যেনতেনভাবে ক্ষমতায় আসার আকাক্সক্ষা নেই তার দলের। দেশের শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে জনগণের ম্যান্ডেটে ক্ষমতায় যেতে চান তিনি। দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়ে তার সরকার পছন্দ করে নেবে- এমনটাই শেখ হাসিনার প্রত্যাশা। শেখ হাসিনা যেমন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তেমনি ব্যবসায়ীরাও বিশ্লেষণ করেছেন, কি কারণে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। দেশকে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস মুক্ত করার অভিপ্রায়ে গত দশ বছরে যে তৎপরতা চালানো হয়েছে তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার তিনিই করতে পারেন। জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষকরা বিজয়ী হলে দেশ অন্ধকারের রসাতলে ডুবে যাবে। হাওয়া ভবন তৈরি করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতীতে যেভাবে চাঁদা ও কমিশন নেয়া হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি ঘটুক তা কেউই চায় না। ব্যবসায়ীরা সেই ‘আহেমি-জাহেলিয়াত’ যুগে ফিরে যেতে চায় না। তারা চায় সরকার ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখবে। এক দশক ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা সেই পরিবেশই তৈরি করেছেন। যা অব্যাহত রাখার জন্য দেশের ব্যবসায়ীরা সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই এখন দেশবাসীর মূলমন্ত্র। এর বিপরীতে শুধুই অন্ধকার। সে পথে নয়, যেতে হবে আলোর দিকেই।
×