ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিরিয়া ও আফগানিস্তানে জঙ্গীবিরোধী যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধ

জিম ম্যাটিসের পদত্যাগ

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

জিম ম্যাটিসের পদত্যাগ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেছেন বলে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। অন্যদিকে টুইটারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী বছর ফেব্রæয়ারির শেষদিকে ম্যাটিস ‘সসম্মানে’ দায়িত্ব থেকে অবসরে যাচ্ছেন বলে জানান। শীঘ্রই নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হবে বলেন তিনি। এএফপি ও বিবিসি। সিরিয়া থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারে ট্রাম্পের ঘোষণার একদিন পরই ম্যাটিসের দায়িত্ব ছাড়ার এ ঘোষণা এলো। ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে তার সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দিতে গিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কি মধ্যপ্রাচ্যের পুলিশ হিসেবে কাজ করতে চায় কিছুই না পেয়ে। যে জন্য বহুমূল্যবান জীবন দিচ্ছে ও কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে অন্যদের রক্ষা করছে। যারা প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমরা কি করছি তা উপলব্ধি করে না? আমরা কি সেখানে চিরতরে থাকতে চাই? সময় এসেছে চ‚ড়ান্ত লড়াই করার। সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার ও আফগানিস্তানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনা প্রত্যাহারের আদেশের পর দেশে ও বিদেশে সমালোচার সম্মুখীন ট্রাম্প প্রশাসনে নতুন করে সঙ্কট সৃষ্টি হলো ম্যাটিসের পদত্যাগের ঘোষণায়। ট্রাম্প বলেন, বন্ধু নির্ধারণ ও সামরিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলার ক্ষেত্রে অন্য দেশগুলোর অংশীদারিত্ব নিশ্চিতে জেনারেল ম্যাটিস অসাধারণ সাহায্য করেছেন। পদত্যাগপত্রে ম্যাটিস লিখেছেন, তার দর্শন ছিল ‘মিত্রদের মর্যাদার সঙ্গে দেখা’ এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রের সব শক্তি কাজে লাগিয়ে’ একটি সাধারণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা দাঁড় করানো। এসব ও অন্যান্য বিষয়ে আপনার বিবেচনার সঙ্গে খাপ খায় এমন কাউকেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বানানোর অধিকার আপনার রয়েছে। আমার মনে হয়, সরে দাঁড়ানোর এটিই সঠিক সময়। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিরিয়া থেকে সৈন্য তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার একদিন পর তিনি এ সিদ্ধান্ত নিলেন। বৃহস্পতিবার এক মার্কিন কর্মকর্তা একথা জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘আফগানিস্তান থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ সন্ত্রাস দমন অভিযানে আফগান বাহিনীকে সহযোগিতা করতে ন্যাটো মিশনের পাশাপাশি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৪ হাজার সৈন্য আফগানিস্তানে কাজ করছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, সাত হাজারের বেশি সৈন্য আফগানিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনা হবে। তালেবানের সঙ্গে শান্তি চুক্তির জন্য মার্কিন চাপের অংশ হিসেবে এসব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে। ম্যাটিসের পদত্যাগ রিপাবলিকান দলের ভেতরেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সিনেটর মার্কো রুবিও একে ‘ভীতি সৃষ্টিকারী’ হিসেবেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতর বিশৃঙ্খলার মধ্যেও জেনারেল ম্যাটিস ছিলেন স্থিতিশীলতার প্রতিমূর্তি। জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) পরাজিত করার দাবি জানিয়ে ট্রাম্প বুধবার সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব সৈন্য ফিরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন। রিপাবলিকান দলের সিনেটররা মনে করেন, মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা হলে ওই অঞ্চলে ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব বেড়ে যাবে। ন্যাটো মিত্র ব্রিটেন ও ফ্রান্স বলছে, তারা সিরিয়া-ইরাকে জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের পরাজয়ের ব্যাপারে ট্রাম্পের ধারণার সঙ্গে একমত নয়। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেছেন, মার্কিন সিদ্ধান্তে আইএসবিরোধী যুদ্ধ বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে। ট্রাম্প সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও কতদিনের মধ্যে তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে তা জানায়নি হোয়াইট হাউস। সামরিক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ট্রাম্প ৩০ দিনের মধ্যে সিরিয়ায় থাকা সেন্যদের দেশে দেখতে চান। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ সিদ্ধান্ত বিস্মিত হয়েছে কুর্দী নেতৃত্বাধীন জোট সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (এসডিএফ)। এ সিদ্ধান্ত আইএসবিরোধী অভিযানে ‘নেতিবাচক প্রভাব’ ফেলবে। যা জঙ্গীগোষ্ঠীটির পুনরুত্থানের ঝুঁকি তৈরি করবে বলেও মন্তব্য করেছে তারা। যুদ্ধে পারদর্শী ম্যাটিস একজন চার তারকার জেনারেল। তিনি প্রায়ই প্রেসিডেন্টের মতের বিরোধিতা করেন। তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে তার মতবিরোধ গোপন করার ন্যূনতম চেষ্টাও করেন না। ম্যাটিস আইএসকে পরাজিত করার জন্য ন্যাটোকে কার্যকরী ভ‚মিকা নিতে আহŸান জানাতেন। ৭০ বছর ধরে কাজ করে যাওয়া উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের জোট ন্যাটোর ব্যয় ও প্রভাব নিয়ে প্রায়ই ট্রাম্প প্রশ্ন উত্থাপন করে থাকেন। সিরিয়া নিয়ে বিস্ময়কর ঘোষণার একদিন পর মার্কিন এক কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকেও উল্লেখযোগ্য সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেখানকার অভিযান অনেক দীর্ঘমেয়াদী হয়েছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন যুদ্ধের অংশ হিসেবে আফগানিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে ১৪ হাজার সেনা লড়াই করে যাচ্ছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, অর্ধেকেরও বেশি সৈন্য ফিরিয়ে নেয়া হতে পারে। ট্রাম্প নিজের চারপাশে সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের দিয়ে ঘিরে থাকেন এবং তিনি তাদের প্রতি তার সমর্থন বজায় রাখেন। অক্টোবরে ট্রাম্প সিবিএস চ্যানেলকে ম্যাটিসের পদত্যাগের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি সে সময় বলেছিলেন, এটা হতে পারে যে তিনি (ম্যাটিস) পদত্যাগ করবেন। আমি মনে করি, তিনি ডেমোক্র্যাটদের মতো। যদি আপনি সত্য জানতে চান... তিনি চলে যেতে পারেন। আমি বলতে চাচ্ছি, কিছু বিষয়ে সবাই চলে যায়।
×