ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

মস্তিষ্কের ভেতরে দুই ঘড়ি

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

মস্তিষ্কের ভেতরে দুই ঘড়ি

ভবিষ্যতের সময় নির্ধারণের জন্য মানব মস্তিষ্ক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে দুটি অভ্যন্তরীণ নিউরাস্ক ঘড়ির অধিকারী হয়েছে। কথাটাকে অন্যভাবেও বলা যায় যে, আমাদের মস্তিষ্কে আগাম সময় নির্ধারণের দুটো ব্যবস্থা আছে। একটি ব্যবস্থা অতীত অভিজ্ঞতার স্মৃতির ওপর নির্ভর করে এবং অন্য ব্যবস্থাটি নির্ভর করে ছন্দের ওপর। চলাফেরা করে এই বিশ্বজগতকে উপভোগ করার জন্য এই দুটো ব্যবস্থাই গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এ দুটো ঘড়ির প্রতিটিকে সহায়তাকারী নিউরাল নেটওয়ার্কগুলো হাতে কি কাজ আছে তার ওপর নির্ভর করে মস্তিষ্কের দুটি ভিন্ন অংশে বিভক্ত। প্রসিডিংকস অব দি ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের অনলাইনে প্রকাশিত গবেষণায় এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, খেলাধুলা হোক, সঙ্গীতের বেলায় হোক, বক্তৃতার বেলায় হোক কিংবা মনোযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে হোক সময় নির্ধারণের ব্যাপারটা সমন্বিত কোন প্রক্রিয়া নয় বরং আমাদের কালগত পূর্বাভাস দেয়ার দুটি স্বতন্ত্র উপায় আছে এবং সেগুলো নির্ভর করে মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন অংশের ওপর। একত্রিতভাবে ধরলে মস্তিষ্কের এই দুটি ব্যবস্থার ফলে আমাদের এই মুহূর্তে অস্তিত্বমান হওয়াই কেবল নয়, উপরন্তু ভবিষ্যতকে আগে থেকে দেখতে পাওয়াও সম্ভব হয়ে উঠছে। গবেষণায় পার্কিনসন রোগে আক্রান্ত এবং সেরিবেলার ডিজেনারেশন আছে এমন ব্যক্তিদের আগাম কাল নির্ণয়ের ক্ষমতা ও ঘাটতি পরীক্ষা করে দেখা হয়। তারা জন্মগত কাল নির্ণয়কে মূল স্নায়ুকেন্দ্রের সঙ্গে এবং অন্তর্বর্তী কালনির্ণয়কে লঘু মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত করেন। মস্তিষ্কের প্রধান এই অঞ্চল দুটি চলাফেরা এবং চেতনার সঙ্গে সম্পর্কিত। উল্লেখ করা যেতে পারে যে অন্তর্বর্তী কালনির্ণয় হলো একটা অভ্যন্তরীণ টাইমার যার ভিত্তি বহুলাংশে হলো আমাদের আগাম অভিজ্ঞতাগত স্মৃতি। উপরন্তু গবেষণার ফলাফল থেকে বোঝা যায় যে এ দুটি নিউরাল ঘড়ির একটি যদি চালু হতে না পারে তাহলে অন্যটি তত্ত্বগতভাবে এগিয়ে আসে। গবেষক দলের অন্যতম আসাফ ব্রেসকা বলেন, গবেষণায় শুধু পূর্ব ধারণানির্ভর পরিস্থিতিগুলোই চিহ্নিত করা হয়নি যেখানে এসব নিউরো রোগীদের কাজকর্ম ব্যাহত হয়। উপরন্তু সেই পরিস্থিতিগুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে তাদের কাজকর্মের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হয় না তা থেকে বুঝা যায় যে এই শ্রেণীর রোগীদের পরিবেশ পরিস্থিতিকে এমনভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব যে তাদের জন্য বহির্বিশ্বের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার কাজটা করা সহজতর হয়। নিউরোলজিক্যাল সময় নির্ধারণ ক্ষমতার ঘাটতির ওষুধ বহির্ভূত সমাধানগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রেন ট্রেনিং কম্পিউটার গেমস ও স্মার্টফোন পরিকল্পনার পরিবর্তন। গবেষকরা তাদের উপসংহারে পৌঁছার জন্য পার্কিনসনস ও সেরিবেলার ডিজাপানেশনের রোগীরা নিজেদের মনোযোগ নিবন্ধ করার জন্য কত ভালভাবে টাইমিং বা সময় গত সূত্রগুলোকে কাজে লাগিয়ে থাকে তা তুলনা করে দেখেন। উভয় শ্রেণীর রোগীরা কম্পিউটার স্ক্রিনে বিভিন্ন গতিতে ফ্ল্যাশ হওয়া লাল, সাদা ও সবুজ চতুষ্কোণগুলো দেখেছেন এবং সবুজ চতুষ্কোণটি দেখামাত্র একটি বোতাম টিপে দিয়েছেন। সাদা চতুষ্কোণটি তাদের সঙ্গে করে দিয়েছে যে এরপর সবুজ চতুষ্কোণ আসছে। একটি ক্ষেত্রে লাল, সাদা ও সবুজ চতুষ্কোণগুলো একটা সুষ্ঠু ছন্দ অনুসরণ করেছে এবং সেরিমেলার ডিজেনারেশনের রোগীরা সেইসব ছন্দগত মূত্রগুলোতে ভালভাবে সাড়া দিয়েছে। আরেকটি ক্ষেত্রে রঙিন চতুষ্কোণগুলো অধিকতর জটিল ধারা অনুসরণ করেছে যেখানে লাল ও সবুজ চতুষ্কোণগুলোর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন বিরতিকাল ছিল। এই সিকোয়েন্সটা পার্কিনসন রোগীদের অনুসরণ করা সহজতর ছিল এবং তারা তাতে সফলও হয়েছিল। চূড়ান্ত বিশ্লেষণে এই গবেষণার ফলাফলের মধ্য দিয়ে নিশ্চিতভাবে ধারণা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে মস্তিষ্ক আগাম কালনির্ণয়ে দুই ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অনুসরণ করে। এর দ্বারা প্রচলিত তত্ত্বগুলোই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যে মস্তিষ্কের একক একটি ব্যবস্থাই আমাদের কালনির্ণয়ের যাবতীয় প্রয়োজনগুলো মিটিয়ে থাকে। সূত্র : সায়েন্স নিউজ
×