ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবু সাইদ কামাল

কিমা রাংসার কবর কিংবা স্মৃতি সৌধ

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

কিমা রাংসার কবর কিংবা স্মৃতি সৌধ

সাপ্তাহিক ছুটিতে গ্রামে যাচ্ছে মোফাজ্জল। গারো পাহাড়ের পাদদেশে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা। অনুপম পাহাড়ি নিসর্গের কোলে যেন স্বপ্নের মতো তাদের গ্রাম। পশ্চাৎপদ এলাকা বলে কথা। কর্মস্থল থেকে সেই ভোরে রওয়ানা হয়েছে। অথচ গ্রামে পৌঁছতে পৌঁছতে দুপুর একটা বেজে গেল। বাড়ি পৌঁছানোর আগেই গাঁয়ের বাজার। শুক্রবারে হাট জমে পুরোমাত্রায়। সোমবারেও জমে, তবে শুক্রবারের মতো জমজমাট হয় না। দুপুর একটার দিকে হাট জমতে শুরু করেছে কেবল। মোফাজ্জল বাড়ি যাবার আগে মাছ মহালে ঢুকে। মাছের বাজারে বেশ ক’জন জেলে মাছের ঝাঁপি নিয়ে বসেছে। ক্রেতা আসেনি বলেই বোধ হয় ঝাঁপির ডালা খুলেনি। ফিসÑশেডের একপাশে চান মিয়া কসাই এবং মুক্তু মিয়া গরু জবাই করে গোশত বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছে। মোফাজ্জল হোসেন পরিচিত চান মিয়া কসাইকে বলে, চানমিয়া! কী জবাই করছ, গাই না ষাঁড় ? -বড় জাতের একটা বকন। -বিদেশী গরু না কি? -বিদেশী না। দেশী জাতেরই। এক্কেবারে পাহাড়ের কাছের তো, পাহাড়ি ঘাস খাওয়া গরু। এই জন্য বেশ মোটা-তাজা। -কত টাকা কেজিতে বিক্রি করতেছ! -নিবেন নাকি! বাজার দর যা তাই তো দিবেন। কতটুকু নিবেন ? -কেজি দেড়- দাও না । -আইচ্ছা, ব্যবস্থা কইরা দিতেছি। আপনে মাছ কিইন্যা আইয়েন। পাশেই মাছ বিক্রেতার কাছে যায় মোফাজ্জল। একজন জেলে জিয়ল মাছ নিয়ে বসে আছে। শিং আর মাগুর একই পাত্রে। ছোট ছোট শিং মাছ কিলবিল করছে। তার মাঝে ক্বচিৎ দু-একটা মাগুর। আর একটা বড় বোলে রেখেছে বেশকিছু জীবন্ত শোল মাছ। নড়াচড়া করছে। মোফাজ্জল বড় শোল মাছটা কিনে। শোল মাছ আর দেড় কেজি মাংস নিয়ে দুপুর দেড়টার দিকে সে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। বাবা তখন মাটির দেয়াল-ঘরে চাটাই পেতে বসে আছেন। গ্লুকোমা হওয়ায় একটা চোখ তার দৃষ্টিহীন হয়ে গেছে। বাম চোখ একটু ভাল। তবে ঝাপসা দেখেন। চশমা চোখে থাকলে পরিচিত জনদের চিনতে পারেন। কানেও শোনেন কম। বার্ধক্যজনিত কারণে যেন ওসব অঙ্গ অসহেযোগিতা করে চলছে। মাও বৃদ্ধা। উচ্চরক্ত চাপের রোগী। মোফাজ্জল মায়ের হাতে মাছ-মাংস দিয়ে বাবার পাশে বসে। প্রায় একমাস পর ছেলেকে কাছে পেয়ে বাবা-মা যেন চাঁদ হাতে পেয়েছেন। বৃদ্ধ মা-বাবার চোখে-মুখে উৎফুল্লতার ছাপ চকচক করছে। মাছ-মাংস নিয়ে মা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পারলে যেন তখনই রান্না করে খাওয়ায়। কিন্তু মোফাজ্জল মা’র আগ্রহে বাধা দিয়ে বলে, আমি তিনটার দিকে চলে যাব। -এইডা কী কও! মাত্র আইছ। কাইল সহালে যাইবানে। -না মা। কালকে তো অফিস আছে। চলে যাওয়া লাগবে। -আইজ যাইতে পারব না। কাইলকে ভোরে যাইবা। -এইখান থেকে বাসায় পৌঁছতে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। কাজেই অফিস ধরা যাইব না। -তাইলে আইজ একটু দেরী কইরা যাও। এই বলে মা রান্না ঘরে বেশ তৎপর হন। মোফাজ্জল বাবাকে বলে, আইজ চইলা যাইতে অইব বাজান। অফিসে বেশ ঝামেলা। অথচ মা তা বুঝতে চাইতেছে না। -তোমার মা তো মাছ গোশত পাক কইরা তোমারে নিজের হাতে খাওয়াইয়া দিতে চায়। এর লাগিই যাইবার না করে। বাবার কথা শেষ হতে না হতেই মা আবার ঘরে ফিরে আসে। তখন মোফাজ্জল বলে, মা আমি কি এখনও তোমার সেই ছোট্ট ছেলেটিই রয়ে গেছি ? আজ না গেলে কালকে তো অফিস কামাই হবে মা। এভাবে বেশ বলে-কয়ে বাবা-মাকে মানিয়ে নেয় সে। দুপুরের জন্য যে সব খাবার তৈরি আছে, তা খেয়েই রওয়ানা হয় মোফাজ্জল। তখন সোয়া তিনটা বাজে। গ্রামের বাড়ি থেকে প্রথমে গাঁয়ের বাজার। মোফাজ্জল ভেবেছিল, বাজারে রিক্সা পাবে। কিন্তু তার সে আশা পূরণ হয়নি। হাটবারেও বাজারে কোন রিক্সা নেই। এর কারণও আছে। গোবিন্দপুর বাজার থেকে বাউশাম বাজার পর্যন্ত তিন মাইল রাস্তা পাকা করার কাজ চলছে। রাস্তা নির্মাণ কজের জন্যই এ পথে রিক্সা বা অন্য কোন যানবাহন চলতে পারছে না। কাজেই তিন মাইল পথ না হেঁটে উপায় নেই। তখন বেলা সাড়ে তিনটা বেজে গেছে। ফাগুনের বিকেলে সূর্যটা মিঠে রোদ বিলাচ্ছে। দ্রুত পা চালিয়ে হাঁটছে মোফাজ্জল। বাউশাম পৌঁছে রিক্সায় আরও তিন মাইল। তারপর বাস। শেষ বাসটি ধরার জন্যই তার প্রাণপণ চেষ্টা। বিকেল ছ’টায় ছাড়বে শেষ বাস। বামনগাঁও তিন রাস্তার মোড়ে গিয়ে মোফাজ্জল সিদ্ধান্ত নেয়, নির্মাণাধীন পথে না গিয়ে সুন্দরীঘাটের সহজ ও সোজা পথে হেঁটে যাবে। এ পথের খাল-নদী ভাংতিগুলোতে বাঁশের সাঁকো রয়েছে। কিছুটা পথ হাঁটার পরই একটা খাল পার হতে হয়। খালের ওপাড় ঘেঁষে একটা গারো বাড়ি। ওই বাড়িতে রাস্তামুখী একটা দোকান। একজন গারো সদস্য দোকানটা চালায়। চায়ের ব্যবস্থাও রয়েছে দোকানে। মোফাজ্জল শেষ বাস ধরার তাগিদে দ্রুত হেঁটে চলে। খালের ওপর এক বাঁশের সাঁকো। সাঁকো পার হলেই ওপারে মধুকুড়া গ্রাম। এ গ্রামের অধিকাংশ অধিবাসীই গারো। সামনেই মধুকুড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। মোফাজ্জল ডানে-বাঁয়ে না তাকিয়ে উর্ধশ্বাসে হাঁটে। পথের ডানপাশে রাস্তা লাগুয়া আর একটা গারো বাড়ি। এ বাড়ির উঠোনে তিন বছরের একটা গারো শিশু ধুলোমাটিতে খেলা করছে। মোফাজ্জলকে দেখেই শিশুটা নেচে নেচে বলে উঠে, বাঙাল মামা-বাঙাল মামা। শিশুটার আধো আধো কথা মোফাজ্জলের মনোযোগ আকর্ষণ করে। সে অভীভূত হয়ে রাস্তায় থমকে দাঁড়ায়। একটু এগিয়ে গিয়ে শিশুটার মাথায় আদূরে হাত বুলিয়ে বলে, তুমি কে! মান্দি(গারো ) খোকা? বাড়ির আদূরে শিশুকে অচেনা কোন পথিকের সঙ্গে কথা বলতে দেখে দশ এগারো বছরের আর একটি ছেলে বেরিয়ে আসে। ততক্ষণে তিন বছরের চপল ছেলেটা চলে যায় নাগালের বাইরে। মোফাজ্জল কিশোর ছেলেকে বলে, ওই শিশুটা তোমার কী হয়? -ভাই। -কী নাম তার? -লেভার। -কী বললে? - লেভার। -নামের বানান বলো তো! এ কথার কোন জবাব না দিয়ে ছেলেটা নির্বোধের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। তখন মোফাজ্জল বলে, তুমি কি পড়ালেখা কর না? -না। -তোমার বাবার নাম কি! -দানিয়েল রাংসা। -কী করে তোমার বাবা? -কাম করে আর লাকড়ি উবায়(উবায় মানে-বহন করে)। -ও আচ্ছা। মোফাজ্জলের কথা শেষ হতে না হতেই ঘর থেকে একজন গারো মহিলা বের হয়। তাকে দেখে চমকে উঠে বলে, আরে! আপনে মোফাজ্জল দা না ? -হ্যাঁ। কিন্তু...? -আমি রনিকা সাংমা। -ও আচ্ছা। এই বাড়ি কি তোমাদেরই! -হ্যাঁ দাদা, বাড়িতে আসছিলে বুঝি ? -হ্যাঁ, আজই আসছিলাম। আবার চলেও যাচ্ছি। এই ছেলে দু’টি বুঝি তোমার...? -হ্যাঁ, দাদা। -তোমার শিশু ছেলেটা ভবিষ্যতে খুব মেধাবী হবে। এই অল্প বয়সেই সে শারীরিক গঠনের বৈষম্য বিচার করে আমাকে বলে ফেলল, আমি তার বাঙাল মামা। অথচ তার সঙ্গে আমার কোনদিন দেখা হয় নাই। ওকে কিন্তু তুমি পড়ালেখা করাবে রনিকা! -আমরা গরিব মানুষ দাদা। তবু চেষ্টা করব। আপনি দোয়া করবেন দাদা। -অবশ্যই। ঠিক আছে-আসি তাহলে! বলেই মোফাজ্জল দ্রুত পা বাড়াবার তাগিদ অনুভব করে। আবার সচল হয় তার পা-যুগল। সমানে মধুকুড়া মাঠের মাঝ বরাবর দুপেয়ে পথ। এ পথে নামার সঙ্গে সঙ্গে তার শৈশব এসে হামলে পড়ে মনের চোখে। তখন সে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। মধুকুড়া স্কুল মাঠে আন্তঃস্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতা। মোফাজ্জল সেন্টার ফরওয়ার্ডের খেলোয়াড়। বল নিয়ে প্রতিপক্ষদের পাশ কাটিয়ে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে মোফাজ্জল। লক্ষ্য সামনের গোলবার। উপচে পড়া দর্শকদের কোরাসে উজ্জীবিত হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে। দূরন্ত গতিতে দুপায়ে বল নিয়ে নিশ্চিত গোল দিতে বলে লাথি দেয় মোফাজ্জল। কিন্তু বিধি বাম। বলটি লক্ষভ্রষ্ট হয়ে চলে যায় গোলের বাইরে। কিছুক্ষণ আগেও যেসব দর্শক তাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিল, ওরাই কেউ কেউ তখন গালাগাল দিয়ে বলে, ঐশ -আ-লা। কী বলডাই না মিস করল রে! ওই গালাগাল শোনার পর মোফাজ্জল আর ফুট বল খেলায় তেমন উৎসাহ বোধ করেনি। কারণ, তার ধারণা, দর্শকরা খেলোয়াড়দের সফলতা দেখলে উৎসাহ দিতে জানে, কিন্তু ব্যর্থতায় ক্ষমা করতে জানে না। স্কুলের মাঠ পেরিয়ে আর একটা সাঁকো। ওই সাঁকো পার হয়েই মোফাজ্জল ওই গারো শিশু এবং তার মা রনিকা সাংমার প্রসঙ্গে ভাবে। রনিকার বাবার বাড়ি ছিল মোফাজ্জলদের পাড়াতেই। বাবা ছিল প্রান্তিক চাষী। বাড়ি ভিটা আর সামান্য চাষযোগ্য জমি ছিল রনিকার মায়ের। চাষাবাদের আয়ে তাদের সংসার চলত না। তাই বাবা-বাধ্য হয়ে পাহাড় থেকে কাঠ কেটে এনে চেরাই করে গ্রামের বাজারে লাকড়ি বিক্রি করত। রনিকার মা অন্যের জমিতে শ্রমও বিক্রি করত। রনিকা-জনিকা নামে দুটি মেয়ে ছিল তাদের। রনিকার তখন পাঁচ বছরের শিশু। জনিকা তার দু’বছরের বড়। তখনি শুরু হয় একাত্তরের মুক্তিসংগ্রাম। রনিকার বাবা ছিল একটু পাগলাটে স্বভাবের। সবাই তাকে কিমা পাগলা বলে ডাকত। তার লাকড়ি কাটার বাহু ছিল বেশ প্রবল। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওরা সপরিবারে ওপারে চলে যায়। বাগদাখালী বাজারের পাশেই ছিল শরণার্থী শিবির। সেখান থেকে কিমা পাগলা অংশ নেয় মুক্তিযুদ্ধে। অল্পদিনের মাঝেই অসম সাহসী হিসেবে কিমা পাগলার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের আঙিনা উপচে জনসাধারণের মাঝে ছড়িয়ে যায়। আর ওই দুঃসাহসই হয়েছিল তার কাল। শেষ বর্ষায় একদিন কলমাকান্দায় হানাদার ক্যাম্পে আক্রমণ চালায় কিমা রাংসাদের মুক্তিযোদ্ধাদের দল। কোম্পানি কমান্ডার এ যুদ্ধ নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলেন। তাদের দুর্ধর্ষ আক্রমণে লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছিল শত্রু শিবিরের প্রতিরোধ ব্যুহ। অত্যন্ত দুঃসাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে কিমা পাগলা শত্রু সেনাদের টার্গেটে পরিণত হয়। ওদের মর্টার শেলের কবলে পড়ে ঘটনাস্থলে পড়েই কিমা রাংসা শহীদ হয়। কোম্পানি কমান্ডারও সে যুদ্ধে কিছুটা আহত হয়। মুক্তিযুদ্ধে স্বামীকে হারিয়ে রনিকার বিধবা মা দুটি কন্যা সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়ে যায়। দু’সন্তানকে লালন-পালন করতে গিয়ে ধীরে ধীরে মাঠের জমি খোয়াতে থাকে। শেষে ভিটেসহ অবশিষ্ট জমি বিক্রি করে রনিকার মামার বাড়ির কাছে এ ভিটেটা কিনেছিল। জনিকার বিয়ে হয় হালুয়াঘাটে। গারোদের মাতৃতান্ত্রিক সমাজ হওয়া সত্ত্বেও জনিকা স্বামীর বাড়ি চলে যায়। রনিকাই থাকে মায়ের ভিটায়। রনিকাকে বিয়ে দিয়ে বাড়িতে জামাই আনা হয়েছে। রনিকার স্বামী দানিয়েল মানুষের বাড়িতে রোজ ভিত্তিক কাজ করে। এলাকায় কাজ না পেলে পাহাড় থেকে কাঠ কেটে আনে। বাড়িতে সে কাঠ চিরে লাকড়ি করে এলাকায় বিক্র করে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ রনিকার বাবাকে হয়ত সীমান্ত সংলগ্ন মঙ্গলেশ্বরী বা অন্য কোন নদীর তীরে কোথাও সমাহিত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত অবদানের জন্য কিমা রাংসা পায়নি কোন খেতাব। কিংবা বিধবা স্ত্রী রনিকার মা-ও পায়নি কোন সুবিধা। বরং স্বাধীনতার পর দুটি সন্তানকে বড় করতে গিয়ে কী যে অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হয়েছে। স্বামীর শোক বুকে নিয়ে রনিকার বিয়ের ক’বছর পরই তার মা পরপারে পাড়ি জমায়। রনিকার সন্তানেরা হয়ত বা একদিন জানতে পারবে তার পূর্ব পুরুষ একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কিন্তু খুঁজে পাবে না তার সমাধি। কারণ, কিমা রাংসাদের কবর ঘিরে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতি সৌধ। এভাবে কত যে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধি সীমান্ত জুড়ে বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে অবহেলায় পড়ে আছে, একদিন হয়ত এগুলোর কোন চিহ্নই থাকবে না। এসব ভাবতে ভাবতে কেমন যেন অব্যক্ত আবেগ-তাড়িত হয় পথিক মোফাজ্জল হোসেন।
×