ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব-মাহমুদুল্লাহর দুর্দান্ত ব্যাটিং, ৪ উইকেটে ২১১ রান টাইগারদের ;###;দ্বিতীয় টি২০

লিটন ঝড়ে মিরপুরে রেকর্ড সংগ্রহ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

লিটন ঝড়ে মিরপুরে রেকর্ড সংগ্রহ বাংলাদেশের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সিলেটে টপঅর্ডারদের ব্যাটিং ব্যর্থতা বড় পরাজয়ের মূল কারণ ছিল বাংলাদেশের। তাই মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ওপরের সারির ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে ছিল দল। দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে বৃহস্পতিবার সেই আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন টপঅর্ডাররা। তাই এবার আগে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ২১১ রান করেছে বাংলাদেশ দল। এটি মিরপুরে আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। এর আগে নিউজিল্যান্ড ২০১৩ সালের ৬ নবেম্বর মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫ উইকেটে ২০৪ রান করেছিল। সেটিকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। নির্ভরযোগ্য ওপেনার তামিম ইকবাল বড় স্কোর গড়তে না পারলেও প্রথম উইকেটে ভাল একটি শুরু দিয়েছেন দলকে। তবে ব্যাট হাতে রুদ্রমূর্তিতে আবির্ভূত হয়ে লিটন কুমার দাস খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তিনি পেয়েছেন মাত্র এক ম্যাচ বিরতি দিয়েই। ২৬ বলে ফিফটির পর শেষ পর্যন্ত ৩৪ বলে ৬০ রানে আউট হওয়ার আগেই দলকে দিয়েছেন বড় সংগ্রহের ভিত। ওয়ানডাউনে নেমে সৌম্য সরকারও এদিন তান্ডব দেখিয়েছেন। এই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে পরবর্তীতে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দুর্ধর্ষ ব্যাটিং বাংলাদেশ দলকে দিয়েছে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। এর আগে ৫ উইকেটে ২১৫ রান ছিল বাংলাদেশের সেরা টি২০ সংগ্রহ। সিলেটে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমেও ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। এর পেছনে ছিল ব্যাটসম্যানদের আত্মাহুতি। মিরপুরে সিরিজ বাঁচানোর দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে নামার আগে অবশ্য ব্যাটসম্যানরা পূর্বের ভুল শুধরে দারুণ কিছু করার প্রত্যয় জানিয়েছিলেন। সেই ম্যাচের অপরিবর্তিত স্কোয়াড নিয়ে নেমে এবার টস হারেন অধিনায়ক সাকিব। তবে ব্যাটিংয়ে আবার নামে বাংলাদেশ। এবার শেলডন কটরেল ও ওশান টমাসের গতিময় বলের বিপক্ষে বেশ সতর্ক ছিলেন তামিম ও লিটন। লিটন ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ঝলসে ওঠেন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে তুলে নেন ১৩ রান। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই অবশ্য নিশ্চিত আউট থেকে বেঁচে যান তামিম ব্যক্তিগত ১৩ রানে কটরেলের বলে কাভারে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন। তবে সেটি ধরতে পারেননি ফ্যাবিয়ান এ্যালেন। সেই জীবন ফিরে পাওয়াটা কাজে লাগাতে পারেননি তামিম। এ্যালেন পঞ্চম ওভারে বল করতে এসেই শিকার করেন তামিমকে (১৬ বলে ১৫)। তবে লিটনের ঝড়ে ততক্ষণে প্রথম উইকেট জুটিতে ৪২ রান যোগ হয়। তামিম সাজঘরে ফিরে গেলে উইকেটে আসেন সৌম্য। দুই প্রান্ত থেকে এরপর রানের ফুলঝুরি ছুটতে থাকে। সমানতালে ক্যারিবীয় বোলারদের পেটাতে থাকেন লিটন-সৌম্য। শর্ট অব লেন্থের বল যে সর্বনাশ করেছিল সিলেটে, সেই টমাস-কটরেলকেই পিটিয়েছে তারা। ফলে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে আসে ১ উইকেটে ৬১ রান। দারুণ ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আরও ভারমুক্ত হয়ে খেলেন প্রথম টি২০ ম্যাচে মাত্র ৬ রানে সাজঘরে ফেরা লিটন। মাত্র ২৬ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি পেয়ে যান লিটন। গত ৫ আগস্ট লডারহিলে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষেই ৩২ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলার ম্যাচে তিনি ২৪ বলে ফিফটি হাঁকিয়েছিলেন। সেটি ছিল ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক। সেই ইনিংসটির পর সিলেটের ম্যাচটিতেই শুধু রান পাননি, মিরপুরে আবার জ্বলে উঠলেন। কিমো পলের করা দশম ওভারে তিনি-সৌম্য মিলিয়ে ১৬ রান তুলে নেন। ১১তম ওভারের প্রথম বলেই শতরান পেয়ে যায় বাংলাদেশ দল। দারুণ খেলতে থাকা সৌম্যকে অবশ্য পরের ওভারের প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরান ফিরতি স্পেলে আসা কটরেল। অধিনায়ক কার্লোস ব্রেথওয়েটের দুর্দান্ত ক্যাচে ২২ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় করা সৌম্যর ইনিংসের ইতি ঘটে। তবে দ্বিতীয় উইকেটে লিটনের সঙ্গে তার করা ৬৮ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ দল। কিন্তু একই ওভারের শেষ বলে লিটনকেও শিকার করেন কটরেল। তিনি ৬ চার, ৪ ছয়ে ৩৪ বলে ৬০ রান করে সাজঘরে ফেরেন। পরের ওভারের শেষ বলে মুশফিকুর রহীমকেও (১) ফিরিয়ে দেন টমাস। হঠাৎ করেই বাংলাদেশের ইনিংসে বিপদ নেমে আসে। ১৩ ওভারে ৪ উইকেটে ১২০ রান নিয়ে অবশ্য বেশ মজবুত অবস্থানেই তখন বাংলাদেশ দল। সে জন্যই সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ব্যাট চালিয়েছেন নিজেদের খেয়াল খুশিমতো। দু’জন ইনিংসের ১৬তম ওভারে ব্রেথওয়েটকে তুলোধুনো করে তুলে নেন ১৯ রান। ১৭তম ওভারে কিমো পলকে বিধ্বস্ত করে আরও ২০ রান তুলে নিয়ে দুই শতাধিক রানের স্বপ্ন দেখান এ দু’জন। তবে শেষ ওভারে এই পলই মাত্র ৯ রান দেয়াতে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ টি২০ সংগ্রহ পায়নি বাংলাদেশ দল। তবে ইনিংসের প্রথম ১০ ওভারে ৯৯ রান তুলে যে ভিত পেয়েছিল দল সে কারণেই শেষ ১০ ওভারে আসে আরও ১১২ রান। তাই ৪ উইকেটে ২১১ রানে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের ইনিংস। তাদের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৭ ওভারে এসেছে ৯১ রান। এটি মিরপুরে এখন পর্যন্ত যত টি২০ ম্যাচ হয়েছে তার মধ্যে সর্বাধিক দলীয় সংগ্রহ। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের করা ৫ উইকেটে ২০৪ রানকে টপকে গেছে বাংলাদেশ। সাকিব ২৬ বলে ৫ চার, ১ ছক্কায় ৪২ ও মাহমুদুল্লাহ ২১ বলে ৭ চারে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন। কটরেল ৩৮ রানে ২টি, টমাস ৪৩ রানে ১টি উইকেট নেন। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় দুই শতাধিক টি২০ সংগ্রহ। এর আগে গত ১০ মার্চ কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫ উইকেটে ২১৫ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। সেটিই এখন পর্যন্ত সেরা সংগ্রহ। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেরা সংগ্রহ ছিল গত ৫ আগস্ট লডারহিলে করা ৫ উইকেটে ১৮৪ রান। দেশের মাটিতে গত ফেব্রুয়ারিতে লঙ্কানদের বিপক্ষে ৫ উইকেটে ১৯৩ রানই ছিল বাংলাদেশের সেরা। সবকিছুকে ছাড়িয়ে রেকর্ড একটি সংগ্রহই পেয়েছে বাংলাদেশ দল।
×