ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটকেন্দ্র দু’ভাগে ভাগ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

   ভোটকেন্দ্র দু’ভাগে ভাগ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা

শংকর কুমার দে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে আগামী ২৪ ডিসেম্বর নির্বাচনী মাঠে নামবে সেনাবাহিনী। দুই দিন আগেই নির্বাচনী মাঠে নেমে ইতোমধ্যেই তৎপরতা শুরু করেছে বিজিবি। র‌্যাব, আর্মড ব্যাটালিয়ান পুলিশ, পুলিশ, কোস্টগার্ড, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, আনসারসহ সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাত লাখ সদস্য নির্বাচন সম্পন্ন করার দায়িত্বে মোতায়েন থাকবে। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ‘সাধারণ’ দুই ভাগে বিভক্ত করে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সারাদেশের ৪০ হাজার ২৭৩টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ২৫ হাজার ৮২৭টি কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ১৪ হাজার ৪৪৬টি কেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ ভোট কেন্দ্র হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে পুলিশ। দুর্গম এলাকায় ১ হাজার ৬৩২টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই উদ্যোগ। নির্বাচনের প্রস্তুতি সর্বোত্তম ও চমৎকার বলে দাবি করে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, এখন পর্যন্ত যে পরিবেশ আছে, সেরকম শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলে জাতিকে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারব। পুলিশ সদর দফতর ও নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারাভিযানের শুরুতে সহিংসতা ঘটলেও নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই শান্তিপূর্ণ অবস্থায় ফিরে এসে উন্নত হয়ে এখন উৎসব মুখর পরিবেশে বিরাজমান। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরোধে সেনাবাহিনী নামাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সহিংসতার শঙ্কা দূর করতে আগাম নির্বাচনী মাঠে নামানো হয়েছে বিজিবি। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মামলা, গ্রেফতারি পরোয়ানা ও ফৌজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরের পরিবেশ নির্বিঘœ করতে অধিক মাত্রায় কৌশলী হতে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিট। এবার ভোট কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন মাঠপর্যায়ের নেতৃত্বে থাকা উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। সার্বিক পরিস্থিতি, বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ, মাঠের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নাশকতার আশঙ্কা মাথায় রেখে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে আগের চেয়ে নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে পুলিশের কর্মপরিকল্পনা ও কৌশলসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত হওয়া একাধিক বৈঠকে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়া তথা ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগে ভুয়া তথ্য দিয়ে গুজব ছড়ানো হতে পারে। কেউ যেন অপপ্রচার চালিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে, সে বিষয়ে তৎপর ও সজাগ থাকার বিষয়টিকে প্রধান্য দেয়া হচ্ছে এবারের অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে। সামাজিক মাধ্যমে সাইবার টহলের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করতে গুরুত্বারোপ করা হবে বলে জানা গেছে। জাতীয় সংসদের তিন শ’ নির্বাচনী এলাকার কোন মেট্রোপলিটন ও বিভাগে কতটি ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, কতজন পুলিশ সদস্য লাগবে, পুলিশের চাহিদা, রাজনৈতিক ক্যাডার ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোপনে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের ঝুঁকি থাকলে সে বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, জামায়াত-শিবির ও সরকারবিরোধী চক্রের অপ-তৎপরতা সম্পর্কে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। নির্বাচন কমিশনে আইজিপি ॥ পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা প্রস্তুতি বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে সর্বোত্তম ও চমৎকার। বৃহস্পতিবার, ২০ ডিসেম্বর বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে দেখা করার পর এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যে পরিবেশ আছে, সেরকম শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলে জাতিকে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারব। মূলত নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের পরিকল্পনা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে এসেছি বলে জানান তিনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক নিয়মিত সাক্ষাত উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, আমাদের সর্বশেষ অবস্থা-পরিস্থিতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পুলিশের নিজস্ব পরিকল্পনার কথা কমিশনের সঙ্গে শেয়ার করেছি। পুলিশ প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে নেই বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের এমন অভিযোগ অবাস্তব বলে জানান ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি বলেন, শুধু পুলিশ নয়, সমস্ত প্রশাসনই এখন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে ঢালাও অভিযোগের বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, নাশকতা, নৈরাজ্য মোকাবেলায় কঠোর হস্তে দমনের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে কোন মূল্যে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বদ্ধপরিকর তারা। নির্বাচনের প্রচারকে কেন্দ্র করে গত দুই দিনে দেশের অন্তত ৩২ জেলায় রক্তক্ষয়ী সহিংস সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২ জন আওয়ামী লীগের কর্মী নিহত ও আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রায় দেড় শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা বন্ধ না হলে কঠোর এ্যাকশনে যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের ৬৪ জেলার ৩শ’ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের দিন তিন স্তরের নিরাপত্তা নেয়া হবে। আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে সেনাবাহিনী থাকবে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে থাকবে ম্যাজিস্ট্রেটও। বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, আনসার, গ্রাম পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ও টহলে থাকবে নির্বাচনের দিন। পুলিশ সদর দফতরে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত ও আলোচনা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোটরসাইকেল-চালক ও আরোহীদের প্রতি কঠোর হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নজরদারিতে থাকবে এই বাহনটির চালক ও আরোহী।
×