ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

নয় মাসের সশন্ত্র সংগ্রাম শেষে বিজয়। পাকিস্তানের প্রশিক্ষিত বাহিনীর সঙ্গে লড়ে জয়ী হয়েছিল বাঙালী। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় দেশ। আর এবার উদ্যাপিত হলো বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকী। দিবসটি উদ্যাপনে রবিবার সারা দেশেই ছিল উৎসব অনুষ্ঠান। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলিল শহর ঢাকার প্রতি প্রান্তে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। এসব মঞ্চ থেকে সঙ্গীত, নৃত্য, কবিতা, নাটকের ভাষায় একাত্তরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। কৃতজ্ঞতা জানানো হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। এবারও বিজয় দিবসের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়েছে লাল সবুজের মিলনমেলা। জাতীয় পতাকার রঙে সেজে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছিলেন সব বয়সী মানুষ। শাহবাগ টিএসসি এলাকায় তো জনস্রোত নেমেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের এখানে ওখানে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। টিএসসি হয়ে উঠেছিল তারুণ্যের আবেগ- আনন্দ প্রকাশের অন্যতম প্রধান ভেন্যু। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ছায়ানট। শত শত শিক্ষার্থী-শিল্পী বিশাল খোলা মঞ্চের চারপাশে বসেছিলেন। গ্যালারিও ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। পঞ্চ কবির গান, লোকসঙ্গীত, সেই সঙ্গে নাচ। কবিতার সঙ্গে সুন্দর কোরিওগ্রাফি। আর ছিল ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আগে থেকেই চলছিল বিজয় উৎসব। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজন। এখানেও ঢল নেমেছিল মানুষের। এভাবে সারা শহরেই আনন্দ আর ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে উদ্যাপিত হয় মহান বিজয় দিবস। পৌষের কথায় আসা যাক। অবশেষে এসেছে পৌষ। আর পৌষ মানেই শীতের আনুষ্ঠানিক শুরু। এরই মাঝে ঠান্ডায় জবুথবু অবস্থা হয়েছে রাজধানীবাসীর। আগে থেকেই শীত শীত অবস্থা চলছিল। এখন বিশেষ টের পাওয়া যাচ্ছে। ঘটনাটা আসলে ঘটিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘পেথাই।’ এর প্রভাবে গত দুই/তিন দিন ধরে মেঘলা আকাশ। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। হুট করেই শীত বেড়ে যায়। মোটা জ্যাকেট গায়ে দিয়ে তার ওপর অনেককে আবার চাদর জড়িয়ে নিতে দেখা যায়। মোটামুটি নাড়িয়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছে পেথাই। বৃহস্পতিবার মিষ্টি রোদের দেখা মিলেছে। তবে ঠা-া কমেনি। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, শীত আরও বাড়বে। তাদের দেয়া তথ্য মতে, রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা যথেষ্ট কমেছে। বুধবার ছিল ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার তা নেমে হয় ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আগামী তিন দিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলেও আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ অবস্থায় একটি কথা মনে করিয়ে দেয়া খুব জরুরী যে, ঢাকার রাস্তার ধারে সংসার পাতা হতদরিদ্র মানুষ ভাল নেই। আসা-যাওয়ার পথে ফুটপাথে বিছানাপাতা পরিবারগুলোর দিকে প্লিজ, একটু তাকান। দাঁড়ান তাদের পাশে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ। হ্যাঁ, সারা দেশের মতো ঢাকায়ও আলোচনার কেন্দ্রে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ পর্যায়ে এসে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার ইশতেহার ঘোষণা করেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, সরকারে থাকা অবস্থায় কোন ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে সে জন্য উদারচিত্তে ক্ষমাও চেয়ে নেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর আসনে এখনও আসীন শেখ হাসিনার এমন নমনীয়তা প্রশংসিত হচ্ছে সর্বত্র। ইশতেহার ঘোষণা করেছে বিএনপিও। তাদের নির্বাচনী জোট ঐক্যফ্রন্ট। এই ফ্রন্টের পক্ষ থেকেও ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। ভাল অনেক প্রতিশ্রুতি এসেছে তাদের ইশতেহারে। কিন্তু আছে স্ববিরোধিতাও। অস্পষ্টতা আছে। বিশেষ করে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবিরকে ধানের শীষ মার্কা দিয়ে পুনর্বাসন করার কৌশল সমালোচিত হচ্ছে। একদিকে তারা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখা হবে। অন্যদিকে তারাই একাত্তরের চিহ্নিত শত্রুদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করছেন। এই বর্ণচোরা চরিত্রের দেদার সমালোচনা হচ্ছে। ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনও আলোচনায়। যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে প্রশ্ন করায় এক সাংবাদিককে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। পাল্টাপালি হুমকি গাড়ি ভাংচুর ইত্যাদিও চলছে। চলছে নানা নাটকীয়তা। কিন্তু শেষটা কেমন হবে? ভাল হওয়া চাই। হবে তো?
×