ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

 ২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৯ সালে রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সরকারী-বেসরকারী সব মিলিয়ে ৩৩টি বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। এগুলো নির্মাণ শেষ হলে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে আরও ৪,৩৪০ মেগাওয়াট। সে হিসাবে আগামী বছরকে বিদ্যুত উৎপাদনের বছর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ২০ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুত উৎপাদনে সক্ষম। তবে এখন পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে সর্বোচ্চ ১১ হাজার মেগাওয়াট। আগামী বছর সরকারী খাতের ১,৮৪৬ মেগাওয়াট এবং বেসরকারী খাতে ২,৪৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে আসবে। আগামী জুনে পটুয়াখালীর পায়রায় ১,৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রটি। আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা কেন্দ্রটির কাজের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ৬৬০ মেগাওয়াট ওই সময়ে উৎপাদনে আসবে। চীন ও বাংলাদেশের সমান অংশীদারিত্বে কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসবে। এছাড়া সরকারী খাতের মধ্যে বাগেরহাটের মধুমতি ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা বিদ্যুতকেন্দ্রটি ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারিতে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক এই বিদ্যুতকেন্দ্রের মোট ৬৬ শতাংশ কাজ হয়েছে। একই মাসে উৎপাদনে আসার কথা গাজীপুর ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রটি। ফার্নেস অয়েলভিত্তিক এই বিদ্যুতকেন্দ্রের কাজ হয়েছে ৫২ শতাংশ। কাপ্তাইয়ে ৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুতকেন্দ্রটিও ফেব্রুয়ারিতে আসার কথা। এই বিদ্যুতকেন্দ্রের কাজের অগ্রগতির পরিমাণ ৭৮ শতাংশ। ২০১৯ সালের মে মাসে আসার কথা ঘোড়াশাল বিদ্যুতকেন্দ্রের ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৪ নম্বর ইউনিট। গ্যাসভিত্তিক এই বিদ্যুতকেন্দ্রের কাজ হয়েছে ৬৬ শতাংশ। জুনে আসবে শাহজিবাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র। এই কেন্দ্রের কাজ হয়ে মাত্র ২০ শতাংশ। মিরসরাই ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রটি আগস্টে আসবে। এ কেন্দ্রের কাজ হয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ। একই মাসে উৎপাদনে আসবে ঘোড়াশাল বিদ্যুতকেন্দ্রের ২০৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩ নম্বর ইউনিটটি। এই কেন্দ্রের কাজ হয়েছে ৭১ শতাংশ। একই সময়ে আসবে সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র। তাদের কাজের অগ্রগতি ৬৮ শতাংশ। সিলেট ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রের ক্ষমতা ৮৭ মেগাওয়াট বাড়িয়ে ২২৫ মেগাওয়াট করার প্রকল্পটি আসবে ডিসেম্বরে। গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রটির কাজ হয়েছে ৩১ শতাংশ। উল্লেখ্য, কেন্দ্রটির স্থাপিত ক্ষমতা ছিল ১৫০ মেগাওয়াট। উৎপাদন ক্ষমতা কমে ৮৭ মেগাওয়াটে নেমে আসে। এখন কেন্দ্রটি রিপাওয়ারিং করে একই জ্বালানি খরচে ১৩৮ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এদিকে বেসরকারী খাতের মধ্যে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আসবে শিকলবাহা ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রটি। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৩০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি আসবে এপ্রিলে। জুনে আসবে চট্টগ্রামের পটিয়ায় অবস্থিত ৫৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রটি। আগস্টে আসবে সিরাজগঞ্জ ১৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র। দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক কেন্দ্রটির ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। মে মাসে আসবে টাঙ্গাইলের ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রটি। এ কেন্দ্রের কাজ হয়েছে ৫ শতাংশ। একই মাসে আসবে চট্টগ্রামের শিকলবাহা ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুতকেন্দ্রটি। এ কেন্দ্রটির কেবল ভূমি উন্নয়ন কাজ চলছে। জুনে আসবে মোট ৫টি বিদ্যুতকেন্দ্র। সব কেন্দ্রই ফার্নেস অয়েলভিত্তিক। এর মধ্যে আছে চট্টগ্রামের জুলদায় নির্মিতব্য ১০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির কাজের অগ্রগতি মাত্র ৭ শতাংশ। বগুড়া ১১৩ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির ৪০ শতাংশ, রংপুর ১১৩ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির ৩৫ শতাংশ, নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ১১৩ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির ১২ শতাংশ এবং ভৈরবের ৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির কাজ হয়েছে ৪৮ শতাংশ। জুলাইয়ে আসবে তিনটি কেন্দ্র। এর মধ্যে মেঘনাঘাট ১০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রের কাজ হয়েছে ৩ শতাংশ, চাঁদপুর ১১৫ মেগাওয়াটের ১৫ শতাংশ, জামালপুর ১১৫ মেগাওয়াটের ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। আগস্টে আসবে নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চনের ৫৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি। এটির কাজ হয়েছে ৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে আসবে ফেনীর ১১৪ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি। এর প্রাথমিক কাজ মাত্র শুরু হয়েছে। অক্টোবরে আসবে চট্টগ্রামের পটিয়ার ১১৬ মেগাওয়াট কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের কাজের অগ্রগতি ৩০ শতাংশ। নবেম্বরে আসবে ঠাকুরগাঁও ১১৫ মেগাওয়াট কেন্দ্র। এর কাজ হয়েছে ৫ শতাংশ। এদিকে আগামী বছরের ডিসেম্বরে বেসরকারী খাতের সবচেয়ে বেশি কেন্দ্র ৮টি কেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এর মধ্যে সাতটিই সৌর বিদ্যুতকেন্দ্র। কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আছে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের ৫ মেগাওয়াট এবং গাইবান্ধার ২০০ মেগাওয়াট কেন্দ্র দুটির ফিন্যানসিয়াল ক্লোজিং হয়েছে। এদিকে ময়মনসিংহের সুতাখালীতে ৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির অগ্রগতি ১০ শতাংশ, রংপুর ৩০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির ২৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক কাজ চলছে তেঁতুলিয়ায় ৮ মেগাওয়াট, সিলেট ৫ মেগাওয়াট, টেকনাফ ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র দুটিতে। এর বাইরে গ্যাস ও তেল ভিত্তিক ভোলা ২২০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটিও ডিসেম্বরে আসার কথা। এই কেন্দ্রের কাজ হয়েছে ১৭ শতাংশ। ২০১৮ সালে সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে এক হাজার ৩৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এর মধ্যে সরকারী দুটি কম্বাইন্ড সাইকলে বিদ্যুতকেন্দ্র রয়েছে। যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৬২৫ মেগাওয়াট। গ্যাসচালিত কেন্দ্র দুটি নির্মাণ করা হয়েছে হবিগঞ্জ এবং সিরাজগঞ্জ বিদ্যুত হাবে। বিদ্যুত বিভাগ জানায়, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশনের সিরাজগঞ্জ ২২৫ মেগাওয়াট (তৃতীয় ইউনিট), বাংলাদশে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের বিবিয়ানা তৃতীয় ইউনিট ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট (সিসিপিপি), কনফিডেন্স পাওয়ার এর বগুড়া ১১৩ মেগাওয়াট, প্যারামাউন্ট বিট্রাক এনার্জির বাঘাবাড়ি ২০০ মেগাওয়াট, মডিল্যান্ড ইস্ট পাওয়ার এর আশুগঞ্জ ১৫০ মেগাওয়াট, দেশ এনার্জিস চাঁদপুর ২০০ মেগাওয়াট, একর্ন ইনফ্রাস্টাকচার এর জুলদা, চট্টগ্রাম ১০০ মেগাওয়াট। এ বিষয়ে বিদ্যুত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, প্রতি বছরের চাহিদা ধরে আমরা উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। সবাইকে এজন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে দেশে তিন হাজার ৭৮৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুতকেন্দ্র উৎপাদনে আসে। তবে এর সঙ্গে ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হয়েছে।
×