ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকগুলোকে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের চিঠি

দেশে অবৈধ অর্থ প্রবেশের বিষয়ে সতর্কতা জারি

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

  দেশে অবৈধ অর্থ প্রবেশের বিষয়ে সতর্কতা জারি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে অবৈধ অর্থ ঢুকতে পারে, এমন আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে আসা রফতানি ও প্রবাসী আয়ের গতিপ্রকৃতির দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। আমদানি ও রফতানির ঋণপত্র খোলার সময় বেশি মূল্য ও কম মূল্য দেখানোর বিষয়ে সচেতন থাকতে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের ওই চিঠিতে। এ প্রসঙ্গে বিএফআইইউ’র প্রধান আবু হেনা মোঃ রাজী হাসান বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে অবৈধ অর্থ ব্যবহারের ঝুঁকি থাকে। আমরা সেই ঝুঁকি থেকেই ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকতে বলেছি, যাতে কেউ নির্বাচনে অবৈধ অর্থ ব্যবহার করতে না পারে।’ এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর আবু হেনা মোঃ রাজী হাসান বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য ব্যাংকগুলোকে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে বলা হয়েছে, কোন ব্যাংক যাতে সন্ত্রাসে অর্থায়নের কাজে ব্যবহৃত না হয় বা কোন সন্ত্রাসী যেন ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে না পারে, সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্ক নজর দিতে হবে। নিয়ম মেনে হিসাব খোলা ছাড়া কোন ধরনের লেনদেন করা যাবে না। চিঠিতে সব ধরনের নগদ লেনদেনেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সংবেদনশীল এলাকার ব্যাংক শাখার লেনদেনে বিশেষ তদারকি করতে হবে। অনলাইনের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ কোন লেনদেন হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাংকের শাখাগুলোতে নগদ লেনদেন অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে অবৈধ অর্থ লেনদেনের আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই বছরের পুরোটা সময় আমদানির আড়ালে অর্থপাচার হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি যেভাবে বেড়েছে, সে হারে বিনিয়োগ হয়নি। এই প্রবণতাই বলে দেয়, মূলধনী যন্ত্রপাতির আড়ালে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে।’ নির্বাচন এলেই টাকা পাচার হয়, এ জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন দরকার বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরজুড়েই শিল্প স্থাপনে ব্যবহৃত মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) আমদানি বেড়েছে ব্যাপক হারে। যদিও বাস্তবে নতুন শিল্প স্থাপন নেই বললেই চলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার মূল্যের আমদানি হয়। এর মধ্যে শুধু মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি দেখানো হয়েছে এক হাজার ৪৫৬ ডলার, অর্থাৎ এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট আমদানির ২৫ শতাংশ। এটি আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি। এ প্রসঙ্গে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমদানি পর্যায়ে পাচারকৃত অর্থের বড় একটি অংশ যায় মূলত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির আড়ালে। কারণ, এসব পণ্য আমদানিতে ন্যূনতম শুল্কহার থাকে।’ নির্বাচন এলে অনেকের মধ্যেই অনিশ্চয়তা তৈরি হয় এবং এই অনিশ্চিয়তা থেকেই অনেকে অর্থপাচার করে থাকে বলেও মনে করেন তিনি। এদিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট বা বিআইবিএম-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। বিআইবিএমের তথ্য বলছে, পণ্য রফতানির আড়ালে অর্থপাচার হচ্ছে। এমনকি ব্যাংক থেকে ঋণের নামে অর্থ নিয়ে তা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে এটি করা হয়।
×