ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অসঙ্গতির ইশতেহার

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

অসঙ্গতির ইশতেহার

কানাডার আদালত যাকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দু’দফায় দুটি পৃথক রায়ে উল্লেখ করেছে, সেই সংগঠনটি এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সঙ্গী হিসেবে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত আরেক সন্ত্রাসী সংগঠন এবং একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী। এই জোটের সঙ্গে রয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামক কয়েকটি ক্ষুদ্র দল। তারা নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা রকম ফন্দিফিকির চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির ১৯ দফা অঙ্গীকার সংবলিত ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কোন কথা নেই। অপরদিকে নবগঠিত জামায়াত-বিএনপির ধ্বজাধারী ঐক্যফ্রন্ট যুদ্ধাপরাধের বিচার অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে তাদের ইশতেহারে। জোটভুক্ত এই দলগুলোর একীভূত ও পৃথক ইশতেহার ঘোষণা করায় সাধারণ ভোটাররা এক ধরনের বিভ্রান্তিতে পড়েছে। ইশতেহারে দফার ছড়াছড়ি কেবলই। জনমানুষের জন্য নেই কোন তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিশ্রুতি। ধানের শীষ প্রতীকের মূল জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘটা করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার পরদিনই বিএনপি আলাদা করে তাদের দলীয় নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। একই জোটে থেকে একই প্রতীকে নির্বাচন করলেও আলাদা ইশতেহার ঘোষণা করা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এটা বাস্তব যে, যখন মূল জোট সম্মিলিতভাবে ইশতেহার ঘোষণা করে তখন ওই জোটভুক্ত কোন দলের আলাদা ইশতেহার ঘোষণা সাধারণ ভোটারদের বোধগম্য হওয়ার কথা নয়। জোট বা ফ্রন্টের ইশতেহারে ভিন্নতা থাকলে একীভূত নীতিতে সাংঘর্ষিক অবস্থা সৃষ্টি হতে বাধ্য। এর সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে ফ্রন্ট ও বিএনপির ইশতেহারে। ফ্রন্ট যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার অব্যাহত রাখার কথা বলছে, অথচ জোটভুক্ত বিএনপি-জামায়াত তা চায় না। কারণ শরিকদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী রয়েছে, যারা ফ্রন্টের মতোই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে ইশতেহারও জোটবদ্ধ হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। ঐক্যবদ্ধ জোট যদি একবার ইশতেহার দেয়, সেখানে ওই জোটের কোন দলের আলাদা ইশতেহার প্রদানের অর্থই হচ্ছে ঐক্যে ফাটল থাকার নমুনা। জোটের মধ্যে যে বিশৃঙ্খলা রয়েছে তা আবারও প্রমাণিত হলো। ঐক্যফ্রন্টের মোড়কে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তারা যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে না, সেটা প্রমাণ হয়ে গেল। ফ্রন্টের ইশতেহারের পর বিএনপির আরেকটি ইশতেহার দেয়ার মানে ভোটারদের সঙ্গে প্রতারণা করা। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্ট রীতিমতো মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলেই পরিষ্কার হয়ে গেছে বিএনপির ইশতেহারে এটি রাখার মাধ্যমে। ফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে ১৪ প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি রয়েছে আরও ৩৫ দফা। আর বিএনপির যে ১৯ দফা তাতে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কোন প্রতিফলন নেই। তারা ভোট চেয়েছে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ‘সম্মান ও মর্যাদা’ রক্ষার জন্য। বিএনপি নেতারা এতদিন বলে আসছিলেন, যুদ্ধাপরাধের চলমান বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা ক্ষমতায় গেলে ‘প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের’ বিচার করবেন। কিন্তু তাদের ইশতেহারের কোথাও তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অনেক বিষয়কে তারা সামনে নিয়ে এসেছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার কথা বলেছে, যা সংসদীয় গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়। নয় পৃষ্ঠার ইশতেহারে দেশ, জাতি জনগণের সমস্যাপূর্ণ সমাধানের উল্লেখ নেই। বিএনপি-জামায়াত বিশদলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পৃথক ইশতেহারে দেশের জন্য ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছু নেই।
×