ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা

অঙ্গীকারের আবরণে প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে স্পষ্ট করা হয়েছে পরবর্তী পাঁচ বছরের পথচলা, রাষ্ট্র পরিচালনার দিকনির্দেশনাসমূহ। দেশের মানুষের উন্নয়নের দিগন্তকে আরও সম্প্রসারিত করার পথরেখা হয়েছে ঘোষিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল ও জোট। এই ইশতেহারেই উঠে এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী অঙ্গীকার। নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনকারী দল বা জোট এই অঙ্গীকার পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে। জনগণের কাছে তুলে ধরা ইশতেহারের ভিত্তিতে ভোটাররা তাদের প্রতি দায়বদ্ধ দলকে সাধারণত ভোট প্রদান করে থাকে। আগামী পাঁচ বছর দেশ পরিচালনায় ঘোষিত অঙ্গীকারসমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন করা হবে বলে জনগণ মনে করে। তারা চায় অঙ্গীকার প্রতিপালনে দল বা জোট যেন থাকে আন্তরিক। সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ শীর্ষক আওয়ামী লীগের ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, নারীর ক্ষমতায়ন, নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তাসহ একুশটি বিশেষ অঙ্গীকার করা হয়েছে। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে এই ইশতেহারে। এসব অঙ্গীকারের মধ্যে দুটি বিষয়ের উপর জোর দেয়া হয়েছে। প্রথম, প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা পৌঁছে দেয়া এবং দুই, তরুণদের শ্রম ও মেধার সৃজনশীল বিকাশে পদক্ষেপ গহণ। নির্বাচিত হলে এক কোটি আটাশ লাখ তরুণের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ অঙ্গীকার করেছে যে, ক্ষমতায় গেলে কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন করা হবে না। ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালু করা হবে। উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করার জন্য যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করা হবে। ইশতেহার ঘোষণাকালে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে তার দল ‘টেকসই বিনিয়োগ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ নিশ্চিত করবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান, গত দশ বছরের অর্জন এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ধরে সাজানো হয়েছে আশি পৃষ্ঠার এই ইশতেহার। ২০০৮ সালে ‘দিনবদলের সনদ’, ২০১৪ সালে ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ এরপর এবার ত্রিশে ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ।’ ইশতেহারে বিভিন্ন মেয়াদে সরকারে থাকার সময়কার অর্জনগুলোর পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়কার দুঃশাসন, লুটপাট, সন্ত্রাস, খুন, জঙ্গীবাদ ও বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়গুলোও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। একুশ দফা অঙ্গীকারে আরও রয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশুকল্যাণ, পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ ও মাদক নির্মূল, মেগা প্রকল্পসমূহের দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা, দারিদ্র্য নির্মূল, সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সকলের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, বিদ্যুত ও জালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার লক্ষ্যে যান্ত্রিকীকরণ, দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, ব্লু-ইকোনমি ও সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন, নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উত্তরণ ইত্যাদি। একটি রাজনৈতিক দল বা জোট নির্বাচনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করতে সক্ষম হলে তারা দেশ ও জনগণের জন্য কী কী কাজ করবেÑ ইশতেহার এক অর্থে সেসবের অঙ্গীকারনামা হলেও এদেশে এর বাস্তবায়ন ঘটে নামেমাত্র। একানব্বই সালে যারা ক্ষমতাসীন হয়েছিল তারা নির্বাচনী অঙ্গীকারকে এক পাশে ফেলে রেখেছিল। এটা ভুলে গেলে চলবে না, নির্বাচিতরা যেন জনপ্রিতিনিধি হিসেবে জনগণকে দেয়া অঙ্গীকার ভুলে না যান। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা না করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট অতীতের মতো এবারও নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবে এমনটাই প্রত্যাশা।
×