ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রয়টার্সের বিশেষ অনুসন্ধান

রাখাইনজুড়ে চলেছে বৌদ্ধ পুনর্বাসন, ফুরিয়ে আসছে প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

রাখাইনজুড়ে চলেছে বৌদ্ধ পুনর্বাসন, ফুরিয়ে আসছে প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ এ বছরের মার্চে প্রকাশিত ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছিল, ঘর ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে বৌদ্ধ মডেল গ্রাম গড়ে তুলছে মিয়ানমার। বুধবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের অনুসন্ধানী খবরে সেই খবরের অগ্রগতি জানা গেল। রাখাইনের স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে তারা জানিয়েছে, একসময়ের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের গ্রামগুলোতে এরইমধ্যে নাটকীয় রূপান্তর ঘটেছে। আগুন আর বুলডোজারে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত নিশ্চিহ্ন করার পর সেখানে শত শত নতুন ঘর-বাড়ি গড়ে তুলছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। আর তাতে পুনর্বাসিত হচ্ছে বৌদ্ধরা। রোহিঙ্গা গ্রামগুলো রূপান্তরিত হচ্ছে বৌদ্ধ অধ্যুষিত গ্রামে। রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিয়ানমার সরকার যে ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে তাতে প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা ক্রমাগত ফুরিয়ে আসছে। খবর ইয়াহু নিউজের। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি করলেও এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার সরকারের পরিকল্পনা জানতে গত এক বছর ধরে রাখাইনে চলা নির্মাণ কাজের স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করেছে রয়টার্স। মিয়ানমার সরকারের খসড়াকৃত ও অপ্রকাশিত একটি পুনর্বাসন মানচিত্রও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি পুনর্বাসন নীতিমালার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ত্রাণকর্মী, বাংলাদেশের শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা এবং এখনও রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাতকার নিয়েছেন রয়টার্স সাংবাদিকরা। সবমিলে তাদের প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে, তা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি আর এএফপির প্রতিবেদনেরই ধারাবাহিকতা। স্থানীয় কর্মকর্তা ও নতুন বসতি স্থাপনকারীদের উদ্ধৃত করে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, একইসঙ্গে নতুন ঘর-বাড়ি তৈরি ও বৌদ্ধদের পুনর্বাসনে সহায়তা করছে মিয়ানমার সরকার। এ ক্যাম্পেনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা। তারা ওই এলাকাকে বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত করতে চায়। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা পুনর্বাসন নিয়ে যে খসড়া মানচিত্র তৈরি করেছে তাতে দেখা যায়, রাখাইনে প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গারা তাদের মূল বাড়ি কিংবা গ্রামে ফিরে যেতে পারবে না। তাদের দেশের অন্য মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিভিন্ন রোহিঙ্গা বসতি কেন্দ্রে রাখা হবে। জাতিসংঘের এক অভ্যন্তরীণ নথিকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, রাখাইনে এখনও দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তাদের অনেকের অভিযোগ, অবস্থা দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে। খুব স¤প্রতি বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ২৪ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা রয়টার্সকে জানায়, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের হুমকি-ধামকি দিয়েছে ও মারধর করেছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় কারফিউ ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় কাজ করা ও খাদ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
×