ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হুদা ও তালুকদারের দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত নির্বাচন কমিশন

প্রকাশিত: ০৭:২৯, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

হুদা ও তালুকদারের দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত নির্বাচন কমিশন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে বক্তব্যের জের ধরে উত্তপ্ত হয়ে পড়ছে কমিশন। বিশেষ করে এই ঘটনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা এবং ইসি মাহবুব তালুকদারের ভেতরকার দ্ব›দ্ব প্রকাশ্য হয়ে পড়ছে। একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে কথা বলছেন তারা। গত তিন দিন ধরে একে অপরের প্রতি আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণ করেও কথা বলছেন। বুধবার ইসি মাহবুব তালুকদার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশে বলেন, তিনি একজন নির্বাচন কমিশনারের অস্তিত্বের ওপর আঘাত করেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের জবাবে তিনি আরও বলেন, ইতিপূর্বে সিইসি মহোদয় আমার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানারূপ বিরূপ উক্তি করেছেন। আমি কখনও তার কথার প্রতিবাদ করিনি। কিন্তু নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে আমি মিথ্যা কথা বলেছি, এ কথার প্রতিবাদ না করে পারছি না। গত সোমবার থেকে ইসি মাহবুব তালুকদারের ‘আমি মনে করি না নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রয়েছে’ মন্তব্যের পর থেকে শুরু হয়েছে দুজনের মধ্যে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের পালা। ওই দিন নির্বাচন কমিশন বিটের কয়েক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব লিখিত আকারে দেন ইসি মাহবুব তালুকদার। এর আগে সাংবাদিকরা মাহবুব তালুকদারকে প্রশ্ন করেন আপনার মতে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মোটেই মনে করি না নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে কিছু আছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কথাটা এখন একটা অর্থহীন কথায় পরিণত হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে। আপনি এ কথার কি বিরোধিতা করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি কখনও তার (সিইসি) বক্তব্যের বিরোধিতা করি না। তিনি তার কথা বলেছেন। আমি প্রয়োজনে আমার ভিন্ন মত প্রকাশ করি। আপনারা তো সাংবাদিক। আপনারা দেশের সব খবরা খবর রাখেন। সবকিছু দেখেন। আপনারা আপনাদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করুন নির্বাচনে এখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে কি না, তাহলে উত্তর পেয়ে যাবেন। মাহবুব তালুকদারের এই মন্তব্যে জবাবে পরদিন রাঙ্গামাটিতে আয়োজিত ইসির এক মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই’, মাহবুব তালুকদারের এমন বক্তব্য অসত্য এবং ব্যক্তিগত। তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে মাহবুব তালুকদার সত্য বলেননি। নির্বাচনের সামগ্রিক পরিস্থিতি ভাল আছে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে। ছোটখাটো কিছু সংঘাত হয়ে থাকে, সেটা তেমন বড় কিছু নয়। সেগুলো আবার স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই সমাধান করছে উল্লেখ করেছেন। সিইসির এই জবাবের প্রেক্ষিতে বুধবার এর পাল্টা জবাব এবং প্রতিবাদ করেন ইসি মাহবুব তালুকদার। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে দেয়া এক লিখিত জবাবে বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা মঙ্গলবার রাঙ্গামাটিতে বলেছেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে আমি মিথ্যা কথা বলেছি। আমি তার এই বক্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কারণ, এ কথা বলে তিনি একজন নির্বাচন কমিশনারের অস্তিত্বে আঘাত করেছেন। বুধবার নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, সিইসিসহ সব নির্বাচন কমিশনার সমান। ইতিপূর্বে সিইসি মহোদয় আমার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানারূপ বিরূপ উক্তি করেছেন। আমি কখনও তার কথার প্রতিবাদ করিনি। কিন্তু নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে আমি মিথ্যা কথা বলেছি, এ কথার প্রতিবাদ না করে পারছি না। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমি গত ১৭ ডিসেম্বর বলেছিলাম, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে কি নেই, সাংবাদিকরা নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করলেই উত্তর পেয়ে যাবেন। এখনও সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলছি, আপনারা নিজেরা বিচার-বিবেচনা করে দেখুন, নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞেস করুন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে কি নেই। একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকে বিএনপি অভিযোগ করে আসছিল, ভোটে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত হচ্ছে না। তফসিল ঘোষণা শেষে প্রচার শুরুর পরও বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইসিতে দফায় দফায় অভিযোগ দিয়ে একই কথা বলে আসছে। এর মধ্যেই শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়েছে। এরপর সোমবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল ইসির সঙ্গে বৈঠক করে পুনরায় একই অভিযোগ জানানোর পর মাহবুব তালুকদার একটি লিখিত বক্তব্য দেন, যেখানে তিনি বলেন, নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ হয়েছে বলে মনে করেন না তিনি। এরপর থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি মাহবুব তালুকদারের মধ্যে শুরু হয়েছে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের পালা। এর আগে একাধিকবার নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে কমিশনের সভা বর্জন করেছেন ইসি মাহবুব তালুকদার। ইভিএম নিয়ে বিরোধিতা করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে এবং সভা বর্জন করে আলোচনার জন্ম দেন তিনি।
×