ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাঁচ বছর পর ফাইনালে শেখ রাসেল

প্রকাশিত: ০৭:১১, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

পাঁচ বছর পর ফাইনালে শেখ রাসেল

রুমেল খান ॥ এক দলের সামনে ১৩ বছর পর ফাইনালে ওঠার হাতছানি। আরেক দলের সামনে পাঁচ বছর পর ফাইনালে নাম লেখানোর সুযোগ। শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি লড়াইয়ে বিজয়ীর হাসি হেসেছে দ্বিতীয় দলটিই, মানে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র লিমিটেড। বুধবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের প্রথম সেমিফাইনালে তারা ২-০ গোলে হারিয়েছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেডকে। ব্রাদার্সের ভারতীয় কোচ সৈয়দ নাঈমউদ্দিন অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে। কিন্তু মাঠের রণকৌশলে তাকে হারিয়ে দিলেন রাসেলের কোচ সাইফুল বারী টিটু। ‘রক্ষণাত্মক ঘরানার কোচ’ হিসেবে বরাবরই পরিচিত টিটু। কিন্তু কাল দর্শকরা দেখলেন ভিন্ন কোচ টিটুকে। তার অধীনে বিপুলরা খেললো এ্যাটাকিং স্টাইলের ফুটবল। আর তাতেই বাজিমাত করে ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করলো ‘বেঙ্গল ব্লুজ’ খ্যাত রাসেল, যারা ২০১২-১৩ মৌসুমে জিতেছিল স্বাধীনতা কাপের শিরোপা। এই আসরের ২০০৫ সালের রানার্সআপধারী ‘দ্য অরেঞ্জ ব্রিগেড’ খ্যাত ব্রাদার্স এবার কোয়ার্টার ফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আরামবাগকে হারিয়ে দিয়ে যে চমক-শক্তিমত্তা দেখিয়েছিল (গ্রুপপর্বে শক্তিশালী ঢাকা আবাহনীকেও রুখে দিয়েছিল তারা গোলশূন্য ড্র করে), সেমিতে এসে সেটা আর ধরে রাখতে পারেনি। যদিও ম্যাচের শুরুতে প্রতিপক্ষের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই খেলেছে গোপীবাগের দলটি। তবে তাদের মাইনাস পয়েন্ট ছিল পানামা ফরোয়ার্ড জ্যাক দানিয়েলসকে না পাওয়াটা। কোয়ার্টারে আরামবাগের সঙ্গে একটি গোল করেছিলেন দানিয়েলস। গোল করেই জার্সি খুলে ফেলে উল্লাসে মেতে ওঠেন। কিন্তু রেফারি জালালউদ্দিন জার্সি খোলার অপরাধে হলুদ কার্ড এবং লালকার্ড দেখান দানিয়েলকে। এর আগেই একটি হলুদ কার্ড ছিল তার। তাই দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় দানিয়েলকে। ফলে সেমির ম্যাচে খেলতে পারেননি দানিয়েলস। তার অভাব হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ব্রাদার্স। ম্যাচের ১২ মিনিটে রাফায়েল দা সিলভার কর্নারের বল বক্সে ঝাঁপিয়ে উঠে নিয়ন্ত্রণে নিতে চেয়েছিলেন ব্রাদার্স গোলরক্ষক সুজন। তবে বল চলে যায় মাঠের বাইরে। ১৮ মিনিটে এভারটনের কর্নার বক্সে পেয়েও কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন সতীর্থরা। ২০ মিনিটে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন লিওনার্দো। কিন্তু বল কেড়ে নেন রাসেলের নাইজিরিয়ান ডিফেন্ডার এ্যালিসন উদোকা। ৩৭ মিনিটে রাসেলের নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড রাফায়েল ওদোইন ডি-বক্সের মাথা থেকে বাঁ পায়ের গড়ানো ক্রস গ্রিপ করতে চেষ্টা করেছিলেন সুজন চৌধুরী। কিন্তু বলের গতি এতটাই বেশি ছিল যে তিনি ঠিকমতো বল ধরে রাখতে পারেননি। ফলে কর্নার পায় শেখ রাসেল। তবে গোলের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি তারা। অবশেষে প্রথমার্ধের অন্তিম সময়ে দারুণ এক গোলে ম্যাচে লিড নেয় তারা। ৪৫ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে রাসেলের রাফায়েল ওদোইনের ডান পায়ের ক্রসে বাঁপ্রান্ত থেকে লাফিয়ে উঠে উড়ন্ত বলে বাঁ পায়ের দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন উজবেক ফরোয়ার্ড আজিজভ আলিশের (১-০)। তবে রাসেলের গোলটি মেনে নিতে পারেনি ব্রাদার্স শিবির। তাদের দাবি গোলটি ছিল অফসাইড। তাই ক্ষোভে ফেটে পড়েন ব্রাদার্সের ম্যানেজার আমের খান। তবে সহকারী রেফারি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। ৫১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে রাসেল। বাঁপ্রান্ত থেকে খালেকুর জামানের গড়ানো ক্রস বক্সে পেয়ে ডান পায়ের শটে নিজের এবং দলের দ্বিতীয় গোলটি করেন আলিশের (২-০)। যদিও এগিয়ে এসেছিলেন ব্রাদার্স গোলরক্ষক। তবে বলের নাগাল পাননি। জয় একরকম নিশ্চিত হয়ে যাওয়াতেই বোধহয় আবারও খোলসে ঢুকে পড়েন টিটুর শিষ্যরা। ম্যাচে ফেরার আশাটা হারিয়ে ফেলেন নাঈমুদ্দিন শিষ্যরাও। যে কারণে ম্যাচের গতি কিছুটা কমে আসে। অবশ্য ৬৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে একটা চেষ্টা করেছিলেন রাসেলের রাফায়েল। কিন্তু তার শট সরাসরি গ্রিপ করেন ব্রাদার্স গোলরক্ষক। শেষ পর্যন্ত আর ব্যবধান বাড়াতে পারেনি রাসেল। ব্রাদার্সেরও ম্যাচে ফেরা হয়নি। তাই ২-০ গোলের জয়ে দীর্ঘ ৫ বছর পর স্বাধীনতা কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করে বেঙ্গল ব্লুজরা। ফলে অধরা স্বাধীনতা কাপ জয় করাটা স্বপ্নই থেকে গেল ব্রাদার্সের।
×