ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাগর কোড়াইয়া

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ

বাঙালী জাতি সংগ্রামের মহিমায় ভাস্বর। সংগ্রামে পায় দীপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা। শত্রুর দীর্ঘ প্রাচীর ভেঙ্গে নতুনের জয়গান রচনা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। উপমহাদেশের প্রতিটি সংগ্রামী ইতিহাসের সঙ্গে বাঙালী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সংগ্রামে বাঙালী ভয় পায় না; বরং অকুতোভয়ে তেজস্ব শক্তিতে এগিয়ে যায় বিজয়ের পথে। যে পথ হাজারো বিপদ ও মৃত্যুমাল্যে ভরপুর। বাঙালী বিপদ ও মৃত্যুকে জয় করে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার পতাকা-রক্তিম সূর্য। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালীর বিজয় একটি গৌরবময় ইতিহাস। পাক হানাদার ও পাকিপ্রেমীদের বিরুদ্ধে বিজয় বাঙালীকে দিয়েছে বাংলা মাকে মা বলে ডাকার। আর বর্তমান প্রজন্মকে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠার অনুপ্রেরণা ও লাল-সবুজের পতাকাকে বুকে আকড়ে ধরে সাহস ও সম্মানের সঙ্গে বিশে^র বুকে বাঁচার এবং অকুতোভয়ে গেয়ে উঠার ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।’ স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাস স্থায়িত্বের হিসাবে কম হলেও ত্যাগ ও বীরত্বের দিক দিয়ে মহিমাময়। স্বাধীনতার এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বহু মানুষের প্রাণ উৎসর্গ আমাদের গর্বিত করে। আজকের প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি; শুধু শুনেছে অথবা পড়েছে ইতিহাসের বইয়ের পাতায় তারা মুক্তিযুদ্ধে সচেতন। মুক্তিযুদ্ধকে তারা অস্তিত্বের প্রথম প্রহর হিসাবে বিবেচনা করে। বর্তমান প্রজন্ম স্বাধীনতার স্মৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে নিজেদের স্মৃতিমধুর করে তোলে। তারা শুনতে চায় স্বাধীনতা যুদ্ধের সমস্ত জানা-অজানা ইতিহাস। বিজয়ের গৌরবগাথা মুহূর্তগুলো থেকে সঞ্চয় করতে চায় শক্তি-সাহস। স্বাধীনতার গৌরব ও মহিমার আবরণে নিজেদের গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়। ফলে ভবিষ্যত কর্ণধারদের মধ্যে জেগে উঠে দেশপ্রেম ও এক একজন হয়ে উঠে খাটি দেশপ্রেমিক। তবে অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস এই প্রজন্মের কাছে বেশ সময় গোপন করে রাখা হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে রাখা হয়েছিল ইতিহাসের অন্তরালে। সঠিক ইতিহাসকে যেমন বিকৃত করা যায় কিছু সময়ের জন্য ঠিক তেমনি বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস ও জন্মদাতাকে ইতিহাসের বাইরে রাখলেও বর্তমান প্রজন্ম কিন্তু ঠিকই সত্যস্বরূপ আলোকে সবার সামনে উন্মোচিত করে দিয়েছে। যে আলোকরশ্মি বর্তমানে সবার মাঝে আলো বিতরণ করছে অবারিত। বিজয়ের মাসেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আসন্ন সংসদ নির্বাচন। আবারও পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের জনগণ তাদের মূল্যবান ভোট প্রদানের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করবে। তবে নির্বাচনের এই দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে একটি প্রশ্ন অবলীলায় বর্তমান প্রজন্মের সামনে চলে আসে- মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কোন শক্তি কি তাদের আসল পরিচয়ের ভোল পাল্টে রাজনৈতিক কোন দলের সঙ্গে একাত্ম হয়ে তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় বদ্ধপরিকর! আর এই বিজয়ের মাসে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে যদি তাই হয় তাহলে বর্তমান প্রজন্ম প্রশ্নবাণ নিক্ষেপ করবে অবধারিত। পৃথিবীর কোন দেশের ইতিহাসে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনরূপ সুযোগ নেই; তবে কেন বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত স্বাধীনতাবিরোধীদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের রীতি আইন করে দূর করতে পারছে না। বরং এখনও পর্যন্ত পাকপ্রেমীদের গাড়িতে ঢাকাঢোল বাজিয়ে বাংলাদেশের রক্তলাল পতাকা তুলে দেয়া হয়! তাদের মুখে শোনা যায় পাকপ্রেমের গীতিনাট্যকাব্য! বনানী, ঢাকা থেকে
×