ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহকর্মী সুরক্ষায় আইন

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

গৃহকর্মী সুরক্ষায় আইন

বাংলাদেশ সমৃদ্ধির অগ্রগামিতায় আজ অনন্য উচ্চতায়। পুরো দেশ যখন উন্নয়নের কাতারে তখন সমষ্টিগত অংশীদারিত্ব যেমন দৃশ্যমান, পাশাপাশি ব্যক্তিক সাফল্যও স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। ব্যক্তিক ক্ষমতা এবং দক্ষতা যেমন পরিবারের শ্রীবৃদ্ধি ঘটায়, সেভাবে নিরন্তর গতিতে দেশকেও এগিয়ে নিয়ে যায়। সংসার জীবনে আর্থিক সচ্ছলতায় গৃহকর্ত্রীর আবশ্যকীয় শ্রমের সহকারী হিসেবে সামনে চলে আসে তার প্রতিমুহূর্তে পাশে থাকা ছোট শিশু শ্রমিকটি। এই শ্রমকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, দিন-রাতের জন্য নিয়োজিত কোন গৃহকর্মী আর দ্বিতীয়ত, খ-কালীন অথবা ঘটনাকয়েকের জন্য কাজ করা কোন শ্রমিক। সময়ের তারতম্যের জন্য মজুরি ফারাকও বিদ্যমান। শ্রম মজুরিতে তার যথার্থ প্রাপ্য আসে কিনা সেটা বিবেচনায় আনার আগে সংশ্লিষ্ট শিশুটি তার কর্মে কতখানি স্বাচ্ছন্দ্য সে বিষয়টিও ভাবা অত্যন্ত জরুরী। শ্রেণী বিভক্ত সমাজে কোন শ্রমই সুখকর নয়, এমনকি ন্যায্য পাওনার ক্ষেত্রেও। আবার বয়স ভেদে এর তারতম্যও লক্ষণীয়। শিশুরা বঞ্চিত এবং অত্যাচারিত হয় সব থেকে বেশি তার কাজের জায়গায়। আন্তর্জাতিক শ্রম আইনে একটি শিশুকে কত বয়সে কাজে দেয়া সঙ্গত তার সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান আছে। যদিও সিংহভাগ লোক তা মানে না, এমনকি জানেও না। ফলে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশু শ্রমিকের অত্যাচারিত হওয়ার অনেক ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে এলেও তার যথাযথ বিচারকার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, তার নজির আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। তবে গত বছর গৃহকর্মী আদুরীর ওপর নির্মম নিপীড়নের ঘটনাটি বিচারের আওতাভুক্তই শুধু হয়নি, রায় প্রকাশও ছিল এক আলোড়িত বিষয়। শিশু গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় অনেক নীতিমালা গ্রহণ করা হলেও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিরাট ঘাটতিও রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ‘বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম’ শিশু গৃহ শ্রমিকদের নিরাপত্তায় আইন ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। এই মহতী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন মানবাধিকার কর্মী এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করেন, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শিশু গৃহকর্মীদের আইনী অধিকার আরও শক্তই শুধু নয়, কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করাও অত্যন্ত জরুরী। ‘গৃহ শিশুশ্রম এবং মানবাধিকার : সুরক্ষা, চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায়’ বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে বর্তমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে কোনভাবেই সমান তালে শিশু শ্রমিকদের অধিকার, ন্যায্য পাওনা এবং বিচার কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে না বলে অভিমত ব্যক্ত হয়। সমাজ নিরন্তর সমানের দিকে চললেও মানুষের মানবিক বোধ, দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা রক্ষণশীল চেতনার সময়োপযোগী পরিবর্তন না হওয়ায় গৃহকর্র্মীদের বিদ্যমান অবস্থার উল্লেখযোগ্য ফারাক এখন অবধি দৃশ্যমান নয়। স্বল্প বেতনের গৃহকর্মীরা থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে যে পরিমাণ কঠিন শ্রম বিনিয়োগ করে, সেখানে মানবতাকে বিভিন্নভাবে লঙ্ঘন করা হয়। চার দেয়ালের অভ্যন্তরে এই অমানবিক নিষ্পেশন সব সময় লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যায়। সবচেয়ে দুঃখজনক নির্যাতিত আর বঞ্চিতরা জানেও না তাদের অধিকারের মাত্রা এবং আইনী ব্যবস্থায় তারা কতখানি সুরক্ষিত থাকতে পারে। শাপলা নীড় বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তোমোকো উচিয়ামার অভিমত, বিশেষ করে মেয়ে গৃহশ্রমিকরা পর্যাপ্ত সময় এবং বিশ্রামটুকু পর্যন্ত পায় না। শুধু তাই নয়, তাদের শ্রম মজুরিও নিজেদের হয় না। অভিভাবকের কাছে চলে যায়। আর তাই শুধু শিশু শ্রমিকদের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করলে চলবে না, সেটার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে আইনী সমাধানও বিবেচনায় আনতে হবে। আইএলওর ১৮৯ ধারায় শিশু শ্রমের ওপর যে আইনগত ব্যবস্থা উল্লেখ আছে, বাংলাদেশে এখনও তা অুনমোদন পায়নি। তবে শিশু শ্রমিকদের সুরক্ষায় নীতিমালা নির্দেশিত হলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ এতটাই কম যে, সংশ্লিষ্টরা ন্যায্যবিচার থেকে প্রায়ই দূরে থাকে। আর অপরাধী অর্থবিত্তের আবরণে আইনের ফাঁকফোকরে নিষ্কৃতি পেয়ে যায়। বিচারকার্যের এমন অপসংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে না পারলে বঞ্চিত শিশুকর্মীদের সব ধরনের আইনী আর নাগরিক অধিকার হারিয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। শিশুদের জন্য ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা নির্দেশ করা আছে। শিশুদের জন্য এসব কাজ নিষিদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
×