ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় অর্থনীতির রূপান্তর

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

জাতীয় অর্থনীতির রূপান্তর

স্বাধীনতা অর্জনের ৪৭ বছরে বাংলাদেশের সামষ্টিক ও ব্যাষ্টিক অর্থনীতির বিস্ময়কর রূপান্তর ঘটেছে। এর জন্য ইতোমধ্যে মিলেছে বিশ্ব স্বীকৃতিও। হংকং-সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশনের গবেষণা সেল এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চের পূর্বাভাস অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদনের নিরিখে (জিডিপি) ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। সংস্থাটির বৈশ্বিক অর্থনীতি সম্পর্কিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ১২ বছরের মধ্যে ১৬ ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। মনে রাখতে হবে যে, ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল একেবারে শূন্য থেকে। সে সময়ে বৈদেশিক সাহায্য ও অনুদান নিয়ে গড়ে উঠেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ। শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। বিস্ময়কর এই উত্থান ও উন্নয়নের পেছনে প্রায় ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে বর্তমানে ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার জাদুকরী ও মেধাবী প্রতিভা। যে কারণে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে অভিহিত বহির্বিশ্বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমানের মতে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিস্ময়কর সব রূপান্তর ঘটেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের ক্যাটাগরিতে উত্তরণের তিনটি শর্ত পূরণ করেছে। ২০২৪ সাল নাগাদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করার কথা রয়েছে। পদ্মা সেতুর মতো সুবৃহৎ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে কয়েক ধাপ। সত্য বটে, নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ নানা সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি মডেল। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। চলতি বছর অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে এডিপি বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের হার প্রায় ৯৪ শতাংশ। রেকর্ড পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। পোশাক রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ প্রবাসী আয়ও বেড়েছে সন্তোষজনক হারে। ব্যাংক সুদের হার এক ডিজিটে নেমে আসায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানও বাড়বে নিঃসন্দেহে। এর মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মিলেছে স্বীকৃতি। নিজস্ব উদ্যোগে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে আশাব্যঞ্জক গতিতে। জ্বালানি ও বিদ্যুত উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে বাংলাদেশ। এগিয়ে চলেছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রসহ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ। এগুলো বাস্তবায়িত হলে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চক্রমণ করছে ভূপৃষ্ঠের কক্ষপথ। দেশের মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারের সুফল ভোগ করছে অনেকাংশে। শিক্ষার হারসহ মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। তবে এসবের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। তবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে যে কোন মূল্যে গণতন্ত্রকে আরও সংহত ও শক্তিশালী করতে হবে। আশার কথা এই যে, বাংলাদেশে উন্নয়ন ও গণতন্ত্র হাত ধরাধরি করে চলছে। সর্বস্তরের মানুষের জন্য নাগরিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সর্বোপরি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, যা গণতন্ত্রকে করেছে টেকসই এবং উন্নয়নকে নিশ্চিত করেছে।
×