ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যে যার মতো ভোটের মাঠে

জাপার প্রার্থীরা কেন্দ্র থেকে কোন নির্দেশনা পাচ্ছেন না

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

জাপার প্রার্থীরা কেন্দ্র থেকে কোন নির্দেশনা পাচ্ছেন না

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দরজায় কড়া নাড়ছে নির্বাচন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটে অংশ নিচ্ছে দেশের তৃতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি। এবার আওয়ামী লীগের কাছ থেকে দলটি আসন পেয়েছে ২৬টি। যদিও জাপা নেতারা বলছেন, ২৯টির কথা। সব মিলিয়ে ১৭৪টি আসনে রয়েছে জাপার প্রার্থী। সময় হাতে বেশি নেই। এরমধ্যে নির্বাচনের অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে সকল প্রচার বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। নির্বাচনের চূড়ান্ত মুহূর্তে দলের প্রার্থীদের নির্দেশনা দেয়ার মতো কেউ নেই। মাঠ পর্যায় থেকে কেন্দ্রে কার সঙ্গে প্রার্থীরা যোগাযোগ করবেন তাও ঠিক করতে পারছেন না। গুরুত্বপূর্ণ পদ পদবি থাকলেও নির্দেশনা দেয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ এগিয়ে আসছেন না। দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে এরকম দায়িত্বও দেয়া হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে তাহলে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাপার হাল ধরবে কে। সব মিলিয়ে ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর থাকা জাতীয় পার্টির (জাপা) নির্বাচনী প্রচারে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। প্রার্থীরা যে যার মতো যতটুকু পারছেন সেভাবেই প্রচার চালাচ্ছেন। কেন্দ্র থেকে কোন দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে না। প্রতিদিনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকা- দেখভালের জন্যও কেউ নেই। অথচ এই সময়ে নির্বাচনী কৌশল নিয়ে কেন্দ্রের পরামর্শ খুবই জরুরী ছিল বলে দলটির প্রার্থীদের অনেকেই জানিয়েছেন। নির্বাচন এলেই বড়-বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রায় প্রতিবারই তুরুপের তাস হিসেবে বিবেচিত হয় সাবেক সামরিক শাসক এরশাদের গড়া দল জাতীয় পার্টি। নির্বাচন যত কাছে আসে ততো নাটকীয়তা বাড়ে দলটিতে। এবারও তাই হয়েছে। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একেবারেই শেষ মুহূর্তে এরশাদ নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এমনকি নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা দলের মন্ত্রীদেরও পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করে। নির্বাচনের সময়ও হাসপাতালেই ছিলেন এরশাদ। এরপর রওশন এরশাদ দলের হাল ধরেন। নির্বাচনের পর বিরোধী দল হয় জাপা। এর পুরস্কার হিসেবে এরশাদকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূতের দায়িত্ব দেয়া হয়। এদিকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার মধ্যেই জাপার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন। খোদ দলীয় চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। যদিও সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এরমধ্যে জাপা মহাসচিবে পরিবর্তন আসে। হঠাৎ করেই হাওলাদারকে দায়িত্ব থেকে বাদ দেন এরশাদ। যদিও এরশাদের সবচেয়ে বেশি আস্থাভাজন হিসেবে দলে রুহুল আমিন বেশি পরিচিত। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাকে নতুন মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়ার পাঁচ দিনের মধ্যেই হাওলাদারকে এরশাদের বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব দিয়ে চিঠি দেয়া হয়। এতে বলা হয় দলের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু এরমধ্যেই মনোয়নপত্র বাতিল হয় হাওলাদারের। সর্বশেষ পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ তার নির্বাচনী এলাকা ময়মনসিংহ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের লালমনিরহাট, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙা রংপুর, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে এরশাদের অবর্তমানে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সদ্য বিদায়ী মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার তার প্রার্থিতা ফিরে পেতে উচ্চ আদালতের বারান্দায় দৌড়-ঝাঁপ করছেন। নেতাকর্মীরা তার দেখা পাচ্ছেন না। ক্ষেত্র বিশেষে তিনি নিজেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করে রাখছেন। এই প্রেক্ষাপটে দলের প্রার্থীদের কোন দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দেয়া হয়নি। উন্মুক্ত আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকায় প্রার্থীরা অনেকেই নানা রকম বাধার শিকার হচ্ছেন। তাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে, ক্যাম্পেনে বাধা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা কোনরকম পরামর্শ বা করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা পাচ্ছেন না। জয়পুরহাট-২ আসনের প্রার্থী কাজী আবুল কাশেম রিপন বলেছেন, আমি এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কোন গাইডলাইন বা পরামর্শ পাইনি। আমার এলাকায় নৌকার প্রার্থীর লোকজন আমাদের পোস্টার লিফলেট ছিঁড়ে ফেলছে। ক্যাম্পেন করতে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে কেন্দ্রের সহযোগিতা দরকার। ুদিনাজপুর-৪ (ফুলবাড়ি, পার্বতীপুর) আসনের প্রার্থী সোলায়মান সামি বলেন, আমি এখনও কেন্দ্র থেকে কোনো গাইড লাইন পাইনি। এখানে বেশ ভালো অবস্থা রয়েছে। সহায়তা পেলে ভালো রেজাল্ট নিয়ে ফিরতে পারব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে নির্বাচনী প্রচারে তেমন বাধা নেই। তবে রাতের আঁধারে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা রয়েছে। আমি রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়েছি তিনি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙা বলেন, ‘আমরা তাদের প্রার্থী হতেও বলিনি। নির্বাচনও করতে বলিনি। তারা নিজেরাই আগ্রহী হয়ে প্রার্থী হয়েছেন। সে কারণে তাদের জন্য কোনো পরামর্শও দেয়া হয়নি। রাঙা আরো বলেন, উনি (এরশাদ) এসব নিয়ন্ত্রণ করেন, ওনার অফিসের এটা দেখার কথা। কিন্তু উনি অসুস্থ হয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার কারণে একটু সমস্যা হয়েছে। উনি দেশে ফিরলে হয়তো কিছু গাইড লাইন দেয়া হবে। কবে দেশে ফিরবেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, শুনেছি ২২ ডিসেম্বর দেশে ফিরতে পারেন। এদিকে ঢাকা-৪ ও ৬ আসনে জাপার প্রার্থীরা প্রচার করছেন নিজ দায়িত্বে। ঢাকা আট আসনের প্রার্থীর প্রচার খুব একটা চোখে পড়ছে না। পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, আমাকে এ রকম কোন দায়িত্ব দেয়নি। আমি আমার নিজের ভোট নিয়ে ব্যস্ত আছি। আমার মতো অন্যরাও যনিজের ভোটের জন্য স্ব-স্ব এলাকায় অবস্থান করছেন। পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
×