ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এখানে যদি পার পেয়ে যান, পরকালে আপনারা পার পাবেন না

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

এখানে যদি পার পেয়ে যান, পরকালে আপনারা পার পাবেন না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন অভিযোগ করেছেন, আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে না পারলে ভয়াবহ পরিণতি হবে। পুলিশ রাস্তায় রাস্তায় হয়রানি করছে। বিনা কারণে গ্রেফতার করছে। কোন নির্বাচনের আগে এমন অবস্থা দেখিনি। পুলিশকে যদি এভাবে অপব্যবহার করতে থাকেন, বিশ্বাস করেন আমার কী হয় না হয় সেটা না, আপনাদের বিচার হবে, শাস্তি হবে। এখানে যদি কোন কারণে পার পেয়ে যান, পরকালে আপনারা পার পাবেন না, ইনশাআল্লাহ। সেটা মনে রাখবেন। শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি (প্রধানমন্ত্রী) তো বলেছেনই আরও পাঁচ বছর থাকতে চান, আমার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে চাই।’ এ পাঁচ বছর পরে আরও কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকবে, তখন আমি বলব- আরও পাঁচ বছর থাকেন। বুধবার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্ততায় তিনি এ কথা বলেন। ৭০তম বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ও ৪৭তম বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে ‘মানবাধিকার, সুশাসন ও ভোটাধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মানবাধিকার ফেডারেশন (বিএইচআরএফ)। সংগঠনটির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ সহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি গোলাম রহমান ভূইয়া। ড. কামাল বলেন, এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনারা কোন ক্ষমতা বলে শাসন করছেন সেটা আমরা পরে বুঝব। এখন যেটা করছেন এক দমই সংবিধান পরিপন্থী কাজ করছেন। এই যে যেমন ইচ্ছা রাস্তা থেকে পুলিশ অনেককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এটা কি সুশাসন ? আজকে আপনাকে সাহায্য করার জন্য বলে দিচ্ছি, এখনই পুলিশকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। এ ধরনের শাসন আমি কখনও দেখিনি। এটাকে যদি সুশাসন বলা হয় তাহলে মিথ্যা বলা হবে। আজকে কেউ যদি দাবি করে এদেশে সুশাসন আছে তাহলে আমি বলব সে মিথ্যুক। কি বলব এসব দেখতে হচ্ছে, শুনতে হচ্ছে।’ ‘আমি উচিত কথা বলছি, ধরে নিয়ে যান আমাকে। আপনার পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে আমি এ কথা বলছি। খুব সাহসী আপনারা, ধরেন আমাকে। আশ্চর্য, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে এসব দেখতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত সংবিধান দেখে বোঝার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল বলেন, ‘সংবিধান শ্রদ্ধার সঙ্গে মানার চেষ্টা করেন। দেশ এভাবে চলতে পারে না। সংবিধান লঙ্ঘন করলে বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা হয়। স্বাধীনতার ওপর আঘাত করা হয়। এটা থেকে বিরত থাকতে হবে।’ ভোটের অধিকার সবাই ভোগ করবে। স্বাধীন দেশে যদি নাগরিকেরা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে সেটা হবে স্বাধীনতার ওপর আঘাত। এ আঘাত দেশদ্রোহিতার শামিল। কেউ যদি মনে করে দেশদ্রোহিতা করে পার পাওয়া যায়, তা ঠিক না। আজ হোক, কাল হোক তার বিচার হবে। নির্বাচন কমিশনকে তার গুরু দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, সব ক্ষমতা আপনাদের। জনগণের ভোটের অধিকার আপনাদের রক্ষা করতে হবে। এটা আপনাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সরকার যদি কোন সংবিধান পরিপন্থী কাজ করে এর থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করুন। সরকারকে আদেশ দেন পুলিশ সরান। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা দেশের জন্য ও দেশের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনারা ক্ষমতা কাজে লাগান, ইনশাআল্লাহ ভাল নির্বাচন হবে। উজ্জ্বল ভবিষ্যত সামনে দেখা যাচ্ছে। আর এটা না করলে নির্বাচনের ওপর কোন আঘাত দেয়া হয়, তাহলে ভয়াবহ পরিণতি হবে।’ ধানের শীষের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের ওপর ‘হামলা, নির্যাতনে’ যারপরনাই ক্ষুব্ধ কামাল হোসেন বলেছেন, এভাবে ‘প্রহসনের’ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার চেয়ে তাদের বললেই তারা আওয়ামী লীগের ‘জয় মেনে নেবেন’। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর দেশব্যাপী বিএনপি ও তার জোট শরিকদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ করা হচ্ছে। এই জোটের শরিক হিসেবে কামাল হোসেনের দল গণফোরাম নেতারাও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে কামাল হোসেন বলেন, ‘তথাকথিত নির্বাচনে আপনারা যদি ৩০০ সিট চান, তাহলে বলেন আমরা দিয়ে দেই! আপনারা আরও পাঁচ বছর থাকবেন এটা তো বলেই যাচ্ছেন। এভাবে চাওয়ার থেকে আমাদের কাছে বলে নিয়ে যান। বলেন যে, আরও পাঁচ বছর থাকি, আপনারা হাত তুলে মেনে নেন।
×